X
সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪
১৭ আষাঢ় ১৪৩১

অর্থনীতিতে দুর্নীতির প্রসার ঘটিয়ে সমাধান চিন্তা অবাস্তব: জিএম কাদের

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৯ জুন ২০২৪, ২০:২৩আপডেট : ২৯ জুন ২০২৪, ২১:০০

অর্থনীতিতে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের প্রসার ঘটিয়ে অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান চিন্তা করা অবাস্তব মন্তব্য করে বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের বলেছেন, অর্থনীতিকে সুস্থ করতে হলে সমাজের সর্বস্তরে জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাহলেই শুধু দেশে সুশাসন আসবে।

শনিবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

জিএম কাদের বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দায়মুক্তি দিয়ে আইন প্রণয়ন করে দেশে অবাধ দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি; অফশোর ব্যাংকিং চালু করে বিদেশে পাচার করা অবৈধ অর্থ বৈধকরণ; নামমাত্র কর প্রদান করে কালোটাকা সাদা করার মাধ্যমে দুর্নীতি থেকে দায়মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি ও গোষ্ঠী, ব্যাংক ঋণখেলাপি, বিদেশে টাকা পাচারকারীদের মাধ্যমে একটি বড় আকারের ধনী ও অতিধনি শ্রেণি সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদের অর্থনীতির মূল স্রোতে আনার জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, কোভিড মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্রমেই কমছে। বিভিন্ন দেশ আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের ক্রমাবনতি ঠেকানো যাচ্ছে না। সে কারণে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, কোভিড মহামারি বা ইউক্রেন যুদ্ধ বাংলাদেশে মূল সমস্যাগুলো সৃষ্টি করেনি। সমস্যা শুরু হয়েছিল আগেই অন্যান্য কারণে। কোভিড ও ইউক্রেন যুদ্ধ এগুলোকে উসকে দিয়েছিল মাত্র।

তাদের মতে, কোভিড ও ইউক্রেন যুদ্ধ শুধু মূল সমস্যাগুলোকে পাশ কাটানোর অজুহাত হিসেবে বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে। আসল সমস্যা জবাবদিহির ঘাটতি, সুশাসনের অভাব। দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন সমাজের প্রতিটি স্তরে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সে সংক্রান্ত নীতিমালা ব্যক্তিস্বার্থ ও গোষ্ঠীস্বার্থ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। ফলে অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন বা বাস্তবায়নে দেশ ও জনগণের স্বার্থ প্রায়ই উপেক্ষিত হয়েছে।

তিনি বলেন, এককথায় বলা যায়, অর্থনীতিতে সুশাসনের অভাব ও সে কারণে দুর্নীতি ও দুবৃত্তায়নে যে ব্যাপকতা, তা থেকে উত্তরণ ব্যতীত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। বাজেটে মূল সমস্যার কোনও স্বীকৃতি ও সে সমস্যা মোকাবিলার দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়নি। বরং সমস্যার কারণগুলোকে উৎসাহিতকরণ লক্ষ করা যায়। কাজেই বিদ্যমান অর্থনৈতিক সমস্যার টেকসই ও স্থায়ী সমাধান শিগগিরই হচ্ছে এমনটা আশা করা যাচ্ছে না।

ব্যাংক খাতে অব্যবস্থাপনার সমালোচনা করে কাদের বলেন, ব্য্যাংক খাত নড়বড়ে। কারণ খেলাপি ঋণ। গত মার্চে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা। কীভাবে হচ্ছে? একটি পত্রিকা বলেছে, শীর্ষ পাঁচ জনের নামে দুই লাখ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। বেনামি ঋণ আমলে নিলে দাঁড়াবে চার লাখ কোটি টাকার ওপরে।

জি এম কাদের বলেন, তথ্য গোপন করে ব্যাংক খাতকে নাজুক পরিস্থিতিতে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। কালোটাকা সাদা করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, অনেকেই বলেছেন এটা সংবিধানসম্মত নয়, নীতিসম্মত নয়, আয়ও বেশি আসবে না। যদি এই সুযোগ দিতেই হয়, তাহলে ১৫ শতাংশ নয়, ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কর দিয়ে সাদা করতে হবে। কর যারা ফাঁকি দেন, তারা ভুল করেন না। হিসাব-নিকাশ করেই তারা দেন।

বিদ্যুৎ খাতের সমালোচনা করে জি এম কাদের বলেন, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা দেশের অর্থনীতিতে একটি মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করেছে। উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর অর্ধেকটাই ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, সেই অর্ধেক অর্থাৎ প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট অব্যবহৃত উৎপাদন সৃষ্টির জন্য বেসরকারি মালিকদের বিদেশি মুদ্রায় বিশাল অংশের ভাড়া বা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। হিসাবে দেখা যায়, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ক্যাপাসিটি চার্জ শোধ করতে হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। ভর্তুকি নয়, দাম বাড়িয়ে এই অর্থ ব্যয় করার পরামর্শ আইএমএফের তরফ থেকে করা হচ্ছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের আইনকে দায়মুক্তির আইন উল্লেখ করে তিনি বলেন, দায়মুক্তির আইন জনস্বার্থের পক্ষে কোনও ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়নি। বরং দুর্নীতির বিস্তার ঘাটিয়ে অর্থনীতিকে বেসামাল করে তোলা হয়েছে।

জিএম কাদের বলেন, আইএমএফ বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের সুপারিশ দেয়নি। যাতে এটা বিশ্বাস করার কারণ আছে, আইএমএফ তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে ঋণ সুদসহ ফিরিয়ে নিতে বেশি আগ্রহী। দেশের জনগণের স্বার্থে সুপারিশ করছে না।

অফশোর ব্যাংকিং আইনের সমালোচনা করে কাদের বলেন, অফশোর ব্যাংকিং আইনের মাধ্যমে বড় ধরনের দায়মুক্তি বা ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে। এ কথাটা খুব ব্যাপকভাবে প্রচলিত যে দেশের কিছু ব্যবসায়ী বিভিন্নভাবে টাকা উপার্জন করে ও ঋণখেলাপি হয়ে ধনী ও অতিধনী হয়েছেন, তারা সে অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। তাদের সেসব অর্থকে বৈধতা দেওয়া ও ব্যবহার করে মুনাফা করার সুযোগ দেওয়ার জন্যই এ আইন করা হয়েছে। সে হিসাবে এ আইনটিতে দায়মুক্তি দেওয়া অর্থনৈতিক ও দুর্বৃত্তায়ন সহায়ক বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে নতুন করে বৈধ-অবৈধভাবে অর্জিত টাকা বিদেশে পাচার উৎসাহিত হতে পারে।

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, রিজার্ভের পরিমাণ কোনটা ঠিক। গ্রহণযোগ্যভাবে তুলে ধরার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে। সংবাদমাধ্যমে যেটা আসে, মানুষ সেটাই বিশ্বাস করে। বাংলাদেশ ব্যাংকে বিশ্বাস করে না।

প্রস্তাবিত বাজেটকে গতানুগতিক বাজেট উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, এবার উন্নয়ন বাজেট কমানো উচিত ছিল।

/ইএইচএস/এনএআর/
সম্পর্কিত
আজিমপুর মাতৃসদনে দুর্নীতি: চিকিৎসকসহ ১৪ জন অভিযুক্ত
দুর্নীতির অভিযোগে বদলি, বরখাস্ত ও অবসর যথেষ্ট নয়: টিআইবি
ইউপিতে নিয়োগ হবে প্রশাসক: সংসদে বিল পাস
সর্বশেষ খবর
ভারতীয় পরিচয়পত্রসহ পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার বাংলাদেশি
ভারতীয় পরিচয়পত্রসহ পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার বাংলাদেশি
পাঁচ দফা জানাজা শেষে রাজশাহীতে নাদিম মোস্তফার দাফন
পাঁচ দফা জানাজা শেষে রাজশাহীতে নাদিম মোস্তফার দাফন
‘কলমের শক্তি আছে বলেই বাঘা বাঘা কর্মকর্তাদের আমলনামা প্রকাশিত হয়েছে’
‘কলমের শক্তি আছে বলেই বাঘা বাঘা কর্মকর্তাদের আমলনামা প্রকাশিত হয়েছে’
রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শর্তে হাজার হাজার কারাবন্দিকে মুক্তি দিচ্ছে ইউক্রেন
রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শর্তে হাজার হাজার কারাবন্দিকে মুক্তি দিচ্ছে ইউক্রেন
সর্বাধিক পঠিত
কর্মকর্তাদের দুর্নীতির খবরে ‘ধন্যবাদ’ দিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব
কর্মকর্তাদের দুর্নীতির খবরে ‘ধন্যবাদ’ দিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব
সংবাদ প্রকাশের আগে যাচাইয়ের অনুরোধ করেছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন
প্রতিবাদলিপির বিষয়ে বললেন এসবি প্রধানসংবাদ প্রকাশের আগে যাচাইয়ের অনুরোধ করেছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন
রাসেলস ভাইপার নিয়ে যা বললেন গবেষক ড. ফরিদ আহসান
রাসেলস ভাইপার নিয়ে যা বললেন গবেষক ড. ফরিদ আহসান
জব্দ ব্রাহমা জাতের গরুগুলো কীভাবে বিক্রি করলো সাদিক অ্যাগ্রো
অনুসন্ধানে দুদকজব্দ ব্রাহমা জাতের গরুগুলো কীভাবে বিক্রি করলো সাদিক অ্যাগ্রো
রংপুরের হাঁড়িভাঙা আম গেলো জার্মানিতে, বেড়েছে চাহিদা
রংপুরের হাঁড়িভাঙা আম গেলো জার্মানিতে, বেড়েছে চাহিদা