যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন বাবদ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮০ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদানের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বর্তমানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৮৫ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। ফলে গত অর্থবছরের তুলনায় এই খাতে বাজেট কমেছে ৪ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে এই বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে আধুনিক ও টেকসই মহাসড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য সরকার নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। একই সঙ্গে সড়ক নিরাপত্তা বৃদ্ধি, ঢাকা মহানগরীতে যানজট নিরসনে দ্রুতগতির গণপরিবহনব্যবস্থা (এমআরটি ও বিআরটি) প্রবর্তনসহ মোটরযান ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান আছে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন মহাসড়কে ১ হাজার ৪৩৯টি সেতু নির্মাণ-পুনর্নির্মাণ করা হয়। ফলে আজ দেশজুড়ে বিস্তৃত ২২ হাজার ৪৭৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মহাসড়ক অবকাঠামো নিশ্চিত করে নির্বিঘ্ন ও নিরবচ্ছিন্নভাবে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন চলছে। বিভিন্ন সমাপ্ত ও চলমান প্রকল্পের আওতায় ৮৫১ দশমিক ৬২ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক চার লেন এবং তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০৪১ সাল নাগাদ ১২টি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ এবং আরও ১০টি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের সাশ্রয়ী ও নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে রেল খাতের উন্নয়নের জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, গত ১৫ বছরে দেশে ৯৪৭ দশমিক ৯৯ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ, ৩৪০ কিলোমিটার মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর, ১ হাজার ৩৯১ কিলোমিটার রেললাইন পুনর্বাসন-পুনর্নির্মাণ, ১৪৮টি নতুন স্টেশন বিল্ডিং নির্মাণ, ২৩৮টি স্টেশন বিল্ডিং পুনর্বাসন-পুনর্নির্মাণ, ১ হাজার ৬২টি নতুন রেলসেতু নির্মাণ, ৭৯৪টি রেলসেতু পুনর্বাসন-পুনর্নির্মাণ, ১৩৭টি স্টেশনে সিগন্যালিং ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং চিলাহাটি এক্সপ্রেসসহ নতুন ১৪৪টি ট্রেন চালু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের মাস্টারপ্ল্যান, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক ও দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা/টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এবং নির্বাচনি ইশতেহার ২০২৪ অনুযায়ী বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
নৌ যোগাযোগব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ১৫ বছরে চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমা সাত গুণ বাড়ানো হয়েছে এবং ডিজিটাল টাইডাল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিগত এক দশকে ৫ লাখ ৮০ হাজার বর্গমিটার ইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে বন্দরের কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৫৫ হাজারে (টিইইউ) উন্নীত হয়েছে। মোংলা বন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং কার্যক্রম আধুনিকীকরণসহ ভেসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম (ভিটিএমআইএস) প্রবর্তন করা হয়েছে।
পাশাপাশি দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রায় সীমিত আকারে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বর্তমানে ১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট বিশিষ্ট ৪০ থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ এ বন্দরে চলাচল করছে। এ ছাড়া মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।
মাহমুদ আলী বলেন, সড়ক ও রেলপথের ওপর চাপ কমানো এবং নৌপথে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের উদ্দেশ্যে বিগত ১৫ বছরে অভ্যন্তরীণ নৌপথে ২৬টি নদীবন্দর ঘোষণা করা হয়েছে। মোট ৪৭২টি নানা আকারের পন্টুন লঞ্চঘাট ও নদীবন্দরে স্থাপন প্রভৃতি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার চারপাশে ১১০ কিলোমিটার বৃত্তাকার নৌপথের উভয় তীরের প্রায় ২২০ কিলোমিটারের মধ্যে ২০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, বনায়ন, সীমানা পিলার ও দুটি ইকোপার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে বৃত্তাকার নৌপথের উদ্ধার করা ভূমিতে আরও ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
বিগত ১৫ বছরে দেশে অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বের সঙ্গে বিমানযোগে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের পরিমাণও বহুলাংশে বেড়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিমান পরিবহন এবং আনুষঙ্গিক সেবাকে আধুনিক ও বিশ্বমানে উন্নীত করার জন্য আমরা বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কক্সবাজার বিমানবন্দর ও ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিদ্যমান রানওয়ে ও টেক্সিওয়ে উন্নত ও দীর্ঘ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের উদ্বোধন করেছেন, যা দেশের এভিয়েশন খাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী।