X
বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪
১৯ আষাঢ় ১৪৩১

ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক থেকে কী চায় বাংলাদেশ?

শেখ শাহরিয়ার জামান
০৩ জুন ২০২৪, ২৩:৫৯আপডেট : ০৩ জুন ২০২৪, ২৩:৫৯

বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে চীনের ঋণ সহায়তা দ্রুত বাড়ছে। অন্যদিকে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতিও ঊর্ধ্বগামী। এই দুটি বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। ঋণের বোঝা কমানো নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি চীনে রফতানি বাড়াতেও চেষ্টা চলবে। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার পাল্লা বাংলাদেশের দিকে কিছুটা আনতে চায় সরকার।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘চীন থেকে বাংলাদেশের আমদানির বড় একটি অংশজুড়ে বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল, শিল্পপণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক পণ্য রয়েছে। এগুলোর কিছু অংশ প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রফতানি করা হয় এবং কিছু অংশ দেশে ব্যবহার করা হয়।’

এই সমীকরণে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো জটিল– এই তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পণ্যের বহুমুখিতার অভাব আছে। ফলে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হয়।’

চীনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের বিষয়ে আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রকল্প সহায়তার জন্য নেওয়া ঋণের পরিমাণ গত কয়েক বছরে অনেক বেড়েছে। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরের পর প্রকল্প সহায়তা নতুন গতি পায়।’

প্রকল্পে চীনা ঋণ

বাংলাদেশকে চীন দুইভাবে ঋণ দেয়। একটি হচ্ছে সরকারি বাণিজ্যিক ঋণ এবং অন্যটি বাইয়ার্স ক্রেডিট। ঋণের সুদের হার দুই থেকে তিন শতাংশ হয়ে থাকে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোয় সুদের হার ৩ শতাংশ। উভয়ক্ষেত্রে কমিটমেন্ট ফি হচ্ছে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ (০.২৫%), অর্থাৎ বাংলাদেশ ঋণ নেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার পরে যদি ঋণ না নেয়, তবে মোট প্রকল্প ব্যয়ের ০.২৫ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। ওই ঋণ ২০ বছরের পরিশোধযোগ্য এবং এর সঙ্গে রয়েছে ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ড।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুন পর্যন্ত চীনের কাছে বাংলাদেশের মোট ঋণের পরিমাণ ৫৬০ কোটি ডলার।

চীনের সহায়তায় বাংলাদেশ যেসব গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বলে ইতোমধ্যে সই করেছে তার মধ্যে রয়েছে– পদ্মা রেল লিংক (২৬০ কোটি ডলার), কর্ণফুলী টানেল (৭১ কোটি ডলার), সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (৫৫ কোটি ডলার), ইনফো সরকার (১৬ কোটি ডলার), টেলিকম আধুনিকায়ন ও ডিজিটালাইজেশন (২৩ কোটি ডলার), ডিপিডিসি বিদ্যুৎ প্রকল্প (১৪০ কোটি ডলার), পিজিসিবি পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ (৯৭ কোটি ডলার) এবং আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (১১৩ কোটি ডলার)। এই প্রকল্পগুলোয় সর্বমোট ঋণের পরিমাণ প্রায় ৭৮০ কোটি ডলার। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এর থেকে ৩৩০ কোটি ডলার ছাড় করা হয়েছে।

এ বিষয়ে এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ সবসময় তার বৈদেশিক ঋণ সময়মতো পরিশোধ করেছে এবং এখন পর্যন্ত এর কোনও বিচ্যুতি হয়নি। ঋণ পরিশোধ দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয়তা থাকলে বাংলাদেশের জন্য সুবিধা হয়।’

এক্ষেত্রে ঋণের সুদের হার যদি কিছুটা কম হয় এবং পরিশোধের সময় বাড়ে, তবে বাংলাদেশের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি হবে, বিশেষ করে যখন বৈদেশিক রিজার্ভের ওপর কিছুটা চাপ রয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে চীনের সঙ্গে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা করছি।’

বাণিজ্য ঘাটতি

চীন বাংলাদেশকে ৯৮ শতাংশ পণ্যের ওপর শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়। গত বছর চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে ২০০০ কোটি ডলারের বেশি পণ্য। অন্যদিকে রফতানির পরিমাণ ৭০ কোটি ডলারের কম। ওই ৭০ কোটি ডলারের মধ্যে ৭০ শতাংশ পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। অর্থাৎ ৩০ শতাংশ পণ্য শুল্ক দিয়ে চীনের বাজারে প্রবেশ করে।

এর মধ্যে নিট জাতীয় পণ্যের পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ১৩ কোটি ডলার এবং এর ৯৯ শতাংশ পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় পড়ে। তৈরি পোশাক শিল্পের ওভেন পণ্যের রফতানির পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ১৫ কোটি ডলার এবং এর মাত্র ৪০ শতাংশ পণ্য শুল্ক সুবিধা পায়। অন্যদিকে লোহা ও স্টিল পণ্য এবং টেক্সটাইল ফাইবার পণ্য রফতানি হয় প্রায় সাড়ে ৪ থেকে ৫ কোটি ডলারের বেশি এবং এর পুরোটাই শুল্কমুক্ত।

এ বিষয়ে আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য আরও বেশি করে পাঠানোর বিষয়ে চেষ্টা আছে। এক্ষেত্রে কৃষিজাত পণ্য যেমন আমসহ বিভিন্ন ফল এবং অন্যান্য অপ্রথাগত পণ্য বেশি পাঠানো যায় কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

চীনকে আরেকটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তাদের কিছু শিল্প বাংলাদেশে রিলোকেট করার জন্য, যাতে করে ওই শিল্পে উৎপাদিত পণ্য আবার চীনে রফতানি করে বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমানো যায় বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, জুলাই মাসে চীন সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফরের প্রস্তুতিমূলক আলোচনার জন্য আজ ৩ জুন বেইজিং গেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েডংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। বৈঠকে সফরের দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একটি হচ্ছে সফরের মূল উপাদান (সাবস্টেনটিভ) এবং অন্যটি সফরসূচি অর্থাৎ প্রটোকল সংক্রান্ত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ নিজের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় চীনের সহায়তা চায়। অন্যদিকে বেইজিং চায় নিকট প্রতিবেশীর উন্নয়নে অবদান রাখার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের অবস্থান আরও শক্ত করতে।

এদিকে ‍রবিবার (২ জুন) সন্ধ্যায় ঢাকার চীন দূতাবাসে আয়োজিত এক সেমিনারে বাংলাদেশে নিযুক্ত  চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন বেইজিং সফর হবে একটি ‘গেম-চেঞ্জার’ যা বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। এটি হবে আরেকটি ঐতিহাসিক সফর।

এর আগে ২০১৯ সালের জুলাইতে চীনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের আমন্ত্রণে পাঁচ দিনের সরকারি সফরে  বেইজিং যান প্রধানমন্ত্রী। ওই সফরে ঢাকা ও বেইজিংয়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা সংক্রান্ত ৯টি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

আরও পড়ুন- 

জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে কী কী বিষয় গুরুত্ব পেতে যাচ্ছে

/এফএস/
সম্পর্কিত
বন্যার আগাম প্রস্তুতির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
একনেকে ৫ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন
চাটার দল থেকে প্রধানমন্ত্রীকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে: ড. মিজানুর রহমান
সর্বশেষ খবর
পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলা: সাক্ষ্য গ্রহণের নতুন তারিখ
পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলা: সাক্ষ্য গ্রহণের নতুন তারিখ
নাটোর জেলা বিএনপির সমাবেশে হামলায় আহত ৭
নাটোর জেলা বিএনপির সমাবেশে হামলায় আহত ৭
চার ক্যাটাগরির পদে ৩৩৮ জনকে নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ রেলওয়ে
চার ক্যাটাগরির পদে ৩৩৮ জনকে নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ রেলওয়ে
অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি ঢাবি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের
অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি ঢাবি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের
সর্বাধিক পঠিত
শান্তর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়: পাপন
শান্তর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়: পাপন
এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়লো
এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়লো
বিসিবির সভায় যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো
বিসিবির সভায় যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো
লটকন খাওয়ার এই উপকারিতাগুলো জানতেন?
লটকন খাওয়ার এই উপকারিতাগুলো জানতেন?
থানার গ্রিল ভেঙে পালিয়ে গেলো আসামি, দুই পুলিশ সদস্য বরখাস্ত
থানার গ্রিল ভেঙে পালিয়ে গেলো আসামি, দুই পুলিশ সদস্য বরখাস্ত