কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে (কেএনএফ) সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যায়িত করে তাদের কঠোর হস্তে দমন করতে বলেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি। কমিটি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের কর্মকাণ্ডসহ পার্বত্য অঞ্চলের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির বৈঠকে। সেখানে কেএনএফকে ‘সন্ত্রাসী’ ও ‘জঙ্গি’ সংগঠন উল্লেখ করে তাদের যেকোনও মূল্যে দমন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ সময় সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা স্মরণ করিয়ে বৈঠকে বলা হয়, তারা কোনও রাজনৈতিক দল নয় যে রাজনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধান করা হবে। তারা সন্ত্রাসী, জঙ্গি। তাদের সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে কঠোরভাবে দমন করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা কুকিচিনদের বিরুদ্ধে যেকোনও মূল্যে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছি। দিন দিন এই সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে চলছে। তারা পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি বিনষ্টের চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। মন্ত্রণালয়কে বলেছি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দ্রুত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিতে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের কোনও অবস্থায় বরদাশত করা হবে না। তারা কোনও রাজনৈতিক দল নয় যে আলোচনার প্রশ্ন আসবে। সন্ত্রাসী, জঙ্গি হিসেবেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।
কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশের একটি নিষিদ্ধ জাতিগত বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনৈতিক সংগঠন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, ২০১৭ সালে নাথান বম প্রতিষ্ঠিত এই কেএনএফ রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলার ৯টি উপজেলা নিয়ে বম জনগণের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। গত কয়েক বছরে তারা বিভিন্ন সময় হামলা চালিয়ে সেনা সদস্যসহ বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে।
এদিকে তিন পার্বত্য জেলার সরকারি দফতরসমূহ পার্বত্য জেলা পরিষদে হস্তান্তরের কাজ সফলভাবে এগিয়ে চলছে বলে বৈঠকে জানানো হয়। কমিটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইতোমধ্যে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদে ৩০, খাগড়াছড়িতে ২৯ ও বান্দরবানে ২৮টি বিভাগ ও দফতর হস্তান্তরিত হয়েছে। এতে পার্বত্যবাসী সরকারি সেবা কার্যক্রমে সুফল পাচ্ছে। এ কার্যক্রম অধিকতর ফলপ্রসূ করতে সভায় একটি কমিটি গঠন করা হয়।
সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির কার্যক্রম গতিশীল করতে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জনবল কাঠামো বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়।
সভায় পার্বত্য অঞ্চলের সেনাবাহিনীর প্রত্যাহার করা ২৪০টি ক্যাম্পের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ৩০টি ক্যাম্পে পুলিশ মোতায়েন করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় আরও জানানো হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন বিধিমালা-২০১৯ দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রণয়নের লক্ষ্যে শিগগিরই ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। বৈঠকে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করা হয়। পার্বত্য অঞ্চলের শান্তিশৃঙ্খলা, পর্যটন শিল্প ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নিতে সভায় ঐকমত্য পোষণ করা হয়।
সংসদ ভবনে কমিটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রী পদমর্যাদার) আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা), কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। এছাড়া বিশেষ আমন্ত্রণে বাসন্তী চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য গৌতম কুমার চাকমা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মশিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।