X
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
১১ বৈশাখ ১৪৩২

শহর ও গ্রামের আয়-ব্যয়ের ফারাক বাড়ছে

উদিসা ইসলাম
২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১৮:০০আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১৮:০০

গত পাঁচ বছরে শহর ও গ্রামের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্য বেড়েছে। আগে পরিবারভিত্তিক আয়ে শহর ও গ্রামের পার্থক্য ৮ হাজার টাকা হলেও এখন সেটা বেড়ে ১৯ হাজারের মতো হয়েছে। কিন্তু ব্যয়ের হিসাবে প্রতি মাসে গ্রামের মানুষ প্রায় ৭০০ টাকা ঘাটতিতে পড়ে যায়, তাদের খরচের ধরনের কারণে। এপ্রিল মাসে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর আয় ও ব্যয় বিষয়ক জরিপের হিসাব বলছে— এই কয় বছরে শহর ও গ্রামের মধ্যকার আয়ের পার্থক্য যেমন বেড়েছে, তাদের ব্যয়ের তারতম্যও লক্ষ্যণীয়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ততা থেকে শুরু করে গ্রামীণ জীবনে শহরের ছাপ— তাদের খরচের মাত্রা বাড়াতে বাধ্য করে।

এপ্রিলের ১২ তারিখে প্রকাশিত এই জরিপ প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ সালে পরিবারের মাসিক আয়  জাতীয় পর্যায়ে ৩২ হাজার ৪২২ টাকা। শহরে পরিবারপ্রতি আয় ৪৫ হাজার ৭৫৭ ও গ্রামে ২৬ হাজার ১৬৩ টাকা। ২০১৬ সালে এই সংখ্যার পার্থক্য ছিল তুলনামূলক কম। ২০১৬ সালের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত জরিপের তথ্য বলছে, জাতীয় পর্যায়ে তখন পরিবারপ্রতি আয় ছিল গড়ে ১৫ হাজার ৯৮৮ টাকা। শহরে সেটা ছিল ২২ হাজার ৬০০, আর  গ্রামে ছিল ১৩ হাজার ৯৯৮ টাকা।

আয়ের হিসাব বলছে, ২০২২ সালে পরিবারপ্রতি শহর আর গ্রামের পার্থক্য ১৯ হাজার ৫৯৪ টাকা। যেখানে পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালে এই পার্থক্য ছিল মাত্র ৮ হাজার ৬০২ টাকা।

ব্যক্তির গড় মাসিক আয়, শহর ও গ্রাম

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে— মাথাপিছু গড় মাসিক আয় জাতীয় পর্যায়ে  ৭ হাজার ৬১৪ টাকা। শহরে ১১ হাজারের কাছাকাছি, আর গ্রামে সেই আয় ৬ হাজার টাকার কিছু বেশি। ২০১৬ সালের পরিসংখ্যান বলছে, সে সময় মাথাপিছু আয় শহরে ছিল সাড়ে ৫ হাজার টাকার কিছু বেশি। আর গ্রামে এই আয় ছিল তিন হাজার ২শ৬১ টাকা। এই পাঁচ বছরের মধ্যে শহর ও গ্রামের মধ্যে আয়ের পার্থক্যের জায়গা নির্ণয় করলে দেখা যায়, ২০২২ সালে শহর ও গ্রামের আয়ের মাথাপিছু পার্থক্য ছিল ৪ হাজার ৮৬০ টাকা, যা ২০১৬ সালে ছিল মাত্র ২ হাজার ৪৯১ টাকা।

শহরে কিছুটা বাড়তি হলেও গ্রাম রয়েছে ঘাটতিতে

বিএসবি’র ২০২২ সালের জরিপ প্রতিবেদন বলছে, জাতীয় পর্যায়ে পরিবারকেন্দ্রিক ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৫০০ টাকা। শহরে পরিবারের খরচ ৪১ হাজার ৪২৪ টাকা। যেখানে পরিবারের আয় দেখা যাচ্ছে ৪৫ হাজার ৭৫৭। অর্থাৎ শহরের পরিবারে ৪ হাজারের কিছু বেশি টাকা বাড়তি থাকে। এদিকে গ্রামে প্রতিটি পরিবারের গড় ব্যয় ২৬ হাজার ৮৪২ টাকা হলেও আয় ২৬ হাজার ১৬৩ টাকা। অর্থাৎ গ্রামে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে প্রায় ৭০০ টাকার মতো ঘাটতি রয়েছে।

খাবারের খরচ বেড়েছে

জরিপের একটি অংশে ছিল গড় খাবার গ্রহণে খরচের পরিমাণ নিয়ে। প্রতিবেদন বলছে, শহরে ২০২২ সালে পরিবারপ্রতি খাবারে খরচ হয়েছে ১৬ হাজারের কাছাকাছি, যা ২০১৬ সালে ছিল ৮ হাজার ২০০ টাকা। অর্থাৎ শহরে খাবারের পেছনে খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এদিকে গ্রামে খাবারের পেছনে খরচ দেখা গেছে— ১৩ হাজার টাকার কিছু বেশি, যা ২০১৬ সালে ছিল ৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ এখানেও খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১০ সালে এই খরচ ছিল শহরে ৭ হাজার টাকার বেশি, গ্রামে সাড়ে ৫ হাজার টাকা।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট নাজনীন আহমেদ এই জরিপের বিস্তারিত এখনও পাননি উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি ফাইন্ডিংসগুলো দেখেছি। গ্রামের আয়-ব্যয়ে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। যেটা দেখা যাচ্ছে তার বেশকিছু কারণ আছে। এই জরিপে কোন কারণগুলো উল্লেখ করা হয়, সেটি দেখা যাবে পরে। কিন্তু আমার মনে হয়, গ্রামীণ জীবনে কৃষিজাত পণ্যের দাম বেশি পাওয়ার আশায় বেশিরভাগই শহরে চলে আসে। বাকি যা অবশিষ্ট ওখানে (গ্রামে) থাকে, তা চড়ামূল্যে তাদের কিনতে হয়। যাদের নিজের উৎপাদিত ফসল ও পুকুরের মাছ নেই, তাদের ক্ষেত্রে এটা গ্রামে চরম সত্য। দ্বিতীয়ত, শহর থেকে শিল্পপণ্য যেগুলো গ্রামে যায়, সেগুলো নানা কারণেই সেখানে বেশি দামে বিক্রি হয়। শহরে সেসব জিনিস কেনার নানা পর্যায়ের জায়গা আছে। কিন্তু গ্রামে অপশন নেই বলে মানুষ সেগুলো বেশি দামে কিনে থাকে। আর আছে নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে তার বাড়িটা সারানো থেকে শুরু করে, তার খাওয়া- চলার খরচ দ্বিগুণ হয়ে যায়। এই ঝক্কি শহরের মানুষকে পোহাতে হয় না।’

গত ৫ বছরে খাবার খরচ গ্রাম ও শহরে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি বিশ্লেষণ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘গ্রামের বাজার আগে সপ্তাহে এক-দুই দিন বসতো। এখন স্থায়ী বাজার আছে এবং সেখানে খাবার থেকে শুরু করে ভ্যারাইটিস অনেক কিছু কিনতে পাওয়া যায়। রেস্টুরেন্টে চা-বিস্কুটের জায়গা এখন দখলে নিয়েছে পরোটা, নিমকি, সিঙ্গারা ও মিস্টি। শহরের সঙ্গে আগের তুলনায় যোগাযোগটা সহজ হয়েছে। সব মিলিয়ে খাওয়ার খরচ গ্রামে বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক।’

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
মূল্যস্ফীতি কমছে, অর্থনীতিতে স্বস্তির বার্তা
আসন্ন বাজেটে বৈষম্য কমবে, অগ্রাধিকার পাবে যেসব খাত
ঋণের কিস্তি ছাড় স্থগিত রাখলো আইএমএফ
সর্বশেষ খবর
বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলেন আসিফ মাহমুদ
বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলেন আসিফ মাহমুদ
চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরিকল্পনা নেই: ইউরোপীয় ইউনিয়ন
চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরিকল্পনা নেই: ইউরোপীয় ইউনিয়ন
শ্রীলঙ্কান নাগরিককে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি, ৩ জনকে উদ্ধার
শ্রীলঙ্কান নাগরিককে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি, ৩ জনকে উদ্ধার
বার্সেলোনার মুখোমুখি হওয়ার আগে রিয়াল মাদ্রিদে দুঃসংবাদ
বার্সেলোনার মুখোমুখি হওয়ার আগে রিয়াল মাদ্রিদে দুঃসংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
জোর করে পদত্যাগ করানো প্রধান শিক্ষককে মারধর করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হলো
জোর করে পদত্যাগ করানো প্রধান শিক্ষককে মারধর করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হলো
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে মানববন্ধন
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে মানববন্ধন
কাশ্মীর ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদিকে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা
কাশ্মীর ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদিকে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা
‘ছাত্ররা শিক্ষকদের মর্যাদা দেয়নি, দোষ থাকলে ভিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক’
‘ছাত্ররা শিক্ষকদের মর্যাদা দেয়নি, দোষ থাকলে ভিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক’
কালচে বগলের সমস্যা যেভাবে দূর করবেন
কালচে বগলের সমস্যা যেভাবে দূর করবেন