পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সিলেটে আবারও ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। প্লাবিত হয়েছে সিলেট নগরীসহ বিভিন্ন উপজেলা। এর মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে টিলাধসের ঘটনা। শনিবার (১৮ জুন) বিকালে সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের আওতাধীন বিমানবন্দর সড়ক লাগোয়া আবাদানি টিলার কয়েকটি স্থানে ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
স্থানীয়রা জানান, দুপুরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এ সময় নগরীসহ আশপাশের এলাকায় বন্যা দেখা দিলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। বিকালে টিলাধসের ঘটনা ঘটে। পরে মাটি কাটার মেশিন দিয়ে ধসে যাওয়া টিলার কিছু অংশ কেটে ফেলা হয়। রাত ১০টা পর্যন্ত ধসে পড়া টিলার মাটিগুলো সরানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিমানবন্দর থানার ওসি মাইনুল ইসলাম জাকির। তিনি বলেন, বিমানবন্দর সড়কে আবাদানি টিলার কয়েকটি স্থানের মাটি ধসে পড়ে। পরে মাটি সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।
এদিকে, গত সোমবার ভোরে জৈন্তাপুরে টিলাধসে শিশুসহ এক পরিবারের চার জন নিহত হয়। সেইসঙ্গে আহত হয়েছেন আরও পাঁচ জন। উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের পূর্ব সাতজনি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, পরিবেশ ধ্বংসের কারণে আমরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। যার কারণে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি। এই বৃষ্টি ও বন্যার ফাঁকেও টিলা কাটা চলছে। ভূমিখেকোদের কারণে আমাদের জলাধার আজ ভরাট। নদীর তলদেশে টিলা কাটা মাটি জমেছে। প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কাছে এই অপকর্মের প্রতিকার নেই।
এদিকে, শনিবার সিলেটে ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী তিন দিনে অঞ্চলটিতে বৃষ্টি কিছুটা কমার সম্ভাবনা থাকলেও তাতে বন্যা পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হবে না বলে জানিয়েছে ঢাকার আবহাওয়া অধিদফতর। আসাম-মেঘালয়ের বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যার পানির কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগে এক হাজার ৭৪৫টি (২৭৪৯.৫০ একর) টিলাভূমি রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশন, সিলেট সদর উপজেলা, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও জৈন্তাপুরে এক হাজার ২৫টি টিলাভূমি রয়েছে। এছাড়া ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মাইজগাঁও ও সদর ইউনিয়নে ২৫১.০৮ একর টিলাভূমি রয়েছে।
শনিবার সিলেটের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সিলেট অঞ্চলে শুক্রবার (১৭ জুন) সন্ধ্যা থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটি ওই অঞ্চলের আবহাওয়ার ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০০০ সালের ১২ জুন রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয় সিলেটে, ৩৬২ মিলিমিটার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে ১৯৫৮ সালের ১৯ জুন, ৩৩৬ মিলিমিটার।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আগামী দুই-তিন দিন অর্থাৎ ২১ জুন পর্যন্ত বৃষ্টিপাত কিছুটা কমার সম্ভাবনা থাকলেও তা উল্লেখযোগ্য নয়। তারপর বৃষ্টি কমার সম্ভাবনা রয়েছে। একই ধরনের তথ্য জানিয়েছে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের আবহাওয়া অফিসও। তারা বলেছে, সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হচ্ছে কয়েকদিন ধরে, যা অব্যাহত থাকবে। ফলে ২১ জুন পর্যন্ত বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে।
নদী ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে সিলেটের সুরমা নদীতে ইতিহাসে সর্বোচ্চ পানি প্রবাহিত হচ্ছে এখন। এর পেছনে মূল কারণ হলো- ভারতের মেঘালয় ও আসামের পানির ঢল বাংলাদেশে আসা এবং সিলেটে কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ। ভারী বৃষ্টিপাত না থামলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।