বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর বাণিজ্যিক সম্প্রচারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বুধবার (২ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান থেকে সুইচ চেপে একযোগে এই সম্প্রচার কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেন তিনি। এর ফলে বিদেশি স্যাটেলাইট সংস্থাগুলোকে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা দিতে হবে না দেশীয় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ আমি খুবই আনন্দিত, কারণ দেশের সব টিভি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করেছে। এতদিন আপনারা দেশের বাইরে টাকা পাঠাতেন। এখন আপনাদের অনেক টাকা বেঁচে গেলো। আশা করি ইলেকট্রনিক সম্প্রচার মাধ্যমগুলোর আরও অনেক বাধা দূর হবে। পরনির্ভরশীলতা থাকবে না। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ পেলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশপাশের দেশগুলোর কাছেও অফার করেছি। তারাও চাইলে ভাড়া নিতে পারবে এর ট্রান্সপন্ডার। এখান থেকেও আমরা অর্থ উপার্জন করতে পারবো। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক সহজে বার্তা পৌঁছানো যাবে। নিজস্ব প্রযুক্তি ও জ্ঞান দিয়ে বাংলাদেশ একদিন মহাকাশ জয় করবে, এটা আমার বিশ্বাস।’
গণমাধ্যমের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে কথা না বললে আকর্ষণ থাকবে না—এমন ধারণা প্রচলিত আছে। আপনারা সেটা করতে পারেন, তাতে আমার কোনও সমস্যা নেই। তবে মিথ্যা অপপ্রচার যেন না হয়, দয়া করে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। মিথ্যা অপপ্রচারে দেশের মানুষের মধ্যে সন্দেহ হয়। এমন কিছু করবেন না, যাতে মানুষ আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে।’
তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছরে দেশের জন্য আমরা অন্তত কিছু কাজ তো করেছি। সেটা তো অস্বীকার করতে পারবেন না। সেটা একটু প্রচার করবেন। যেটুকু ভালো কাজ করেছি সেটুকু প্রচার করুন, এটুকু আমি চাইতেই পারি। তথ্যগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন। যাতে মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। সেদিকে দৃষ্টি রেখে কাজ করবেন।’
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস এবং অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) চেয়ারম্যান অঞ্জন চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) চেয়ারম্যান ড. শাজাহান মাহমুদ অনুষ্ঠানে বাণিজ্যিক সম্প্রচারের জন্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল মালিকদের সংগঠনের সঙ্গে তাদের সম্পাদিত চুক্তিনামাটি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী পরে তা অ্যাটকো চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করেন।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর ওপর একটি অডিও ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা পরিবেশন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, সরকারের পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিদেশি কূটনীতিক এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
বিসিএসসিএল-এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, বেসরকারি চ্যানেল মালিকদের অতীতে অ্যাপস্টার-৭ এবং এশিয়া স্যাট স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্প্রচারের জন্য মেগা হার্টজ প্রতি ফ্রিকোয়েন্সির জন্য প্রতি মাসে চার হাজার ডলার ব্যয় করতে হতো। সেখানে দেশীয় চ্যানেলগুলোর জন্য প্রতি মাসে স্যাটেলাইটের ভাড়া দুই হাজার ৮১৭ ডলার নির্ধারণ করেছে বিসিএসসিএল।
এর আগে গত ১৯ মে বিসিএসসিএল স্থানীয় ছয়টি টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। চ্যানেলগুলো হচ্ছে সময় টিভি, যমুনা টিভি, দীপ্ত টিভি, বিজয় টিভি, বাংলা টিভি এবং মাই টিভি। এছাড়া বর্তমানে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। যার মধ্যে ২০টিকে নিজেদের ব্যবহারের জন্য রেখে অন্যগুলো ভাড়া দেওয়া হবে। আয় বাড়াতে ফিলিপাইন, নেপালসহ কাভারেজ পায় এমন দেশগুলোকে স্যাটেলাইট ব্যবহারে আগ্রহী করার উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিসিএসসিএলের। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর গ্রাউন্ড স্টেশনের সঙ্গে এই চ্যানেলগুলো ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকবে। বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড জানিয়েছে, স্যাটেলাইটটি ব্যবহারের ফলে বছরে আয় হবে প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
গত ২০১৮ সালের ১২ মে মহাকাশে উৎক্ষেপণের প্রায় ছয় মাস পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর দায়িত্ব বুঝে পায় বাংলাদেশে স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড-বিসিএসসিএল। ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার করতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ সম্পন্ন করেছে দেশি চ্যানেলগুলো।
গত বছর ১২ মে বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে ‘স্পেস এক্স’ এর স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী যান ফ্যালকন-৯ এর সর্বশেষ সংস্করণ ব্লক-৫ বুস্টার এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইটের স্বত্বাধিকারী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। সূত্র: বাসস।