নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে রাজধানীতে ১৩০টি বাস স্টপেজ নির্মাণ করতে বলা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। সে অনুযায়ী দুই সিটি করপোরেশন বাস স্টপেজ নির্মাণও করে। কিন্তু সেসব স্টপেজে গাড়ি দাঁড়াতে এবং যাত্রী ওঠানামা করতে দেখা যায় না। এখনও গণপরিবহনগুলো রাস্তা থেকেই যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করায়। ফলে কোনোভাবেই কমছে না দুর্ঘটনা। সিটি করপোরেশন এ বিষয়টি জানিয়ে পুলিশ, পরিবহন মালিক সমিতি ও বিআরটিএ-কে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর পরিবহন মালিক ও চালকদের আইন পালনে বাধ্য করতে পুলিশকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।
দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশানর আছাদুজ্জামান মিয়া দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে পৃথক দু’টি চিঠি দেন। ট্রাফিক বিভাগ থেকে নগরীতে বাস স্টপেজ নির্মাণের জন্য দুই সিটি করপোরেশনকে ১৪০টি স্থান চিহ্নিত করে দেওয়ার বিষয়টি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটিতে ৭০টি এবং উত্তর সিটিতে ৭০টি স্থান রয়েছে।
বাস স্টপেজ নির্মাণের পাশাপাশি ৩৮টি স্থানে যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২৮টি দক্ষিণ সিটিতে এবং ১০টি উত্তর সিটিতে। আরও ১২টি যাত্রী ছাউনি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রবিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) খিলগাঁও পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন বাস স্টপেজে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাস স্টপেজ থাকলেও ফ্লাইওভারের গোড়াসহ সড়কের বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রী ওঠানামা করা হচ্ছে। নির্ধারিত স্থান থেকে দুই-একটি বাসকে যাত্রী তুলতেও দেখা যায়। একই অবস্থা দেখা গেছে, মালিবাগ রেলগেট সংলগ্ন বাস স্টপেজে। এই স্টপেজে কোনও পরিবহনকে দাঁড়াতে দেখা যায়নি।
শাহবাগে ঢাকা ক্লাব সংলগ্ন বাস স্টপেজ ও যাত্রী ছাউনিতে গিয়ে দেখা গেছে, বাসের অপেক্ষায় কিছু যাত্রী দাঁড়িয়ে আছেন। তবে শাহবাগ মোড় থেকে বাসগুলো যাত্রী ওঠানামা করছে। কোনও বাসই স্টপেজে দাঁড়াচ্ছে না। ফলে সাধারণ যাত্রীরা সেখানে দাঁড়াতে আগ্রহী নয়।
শাহবাগে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী তাওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দেখেন, বাসগুলো মোড় থেকেই যাত্রী নিয়ে আসছে। বাস স্টপেজে দাঁড়ানোর আগ্রহ তাদের নেই। সে কারণে কোনও যাত্রী বাস স্টপেজে দাঁড়ায় না। আমি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। বাসগুলো এখানে আসছে না। পরিবহনগুলো যেখানে-সেখানে যাত্রী না নিলে সব যাত্রীই স্টপেজে আসতে বাধ্য হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিখর পরিবহনের চালক ইলিয়াছ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাস স্টপেজে দাঁড়ানো উচিত। কিন্তু যেখানে যাত্রী পাই সেখান থেকে যাত্রী তুলি। সে কারণেই আমিও রাস্তা থেকে যাত্রী তুলেছি। আর যেসব স্থানে স্টপেজ করে দেওয়া হয়েছে সেখানে জায়গা কম। অনেক সময় গাড়ির চাপে সেখানে জায়গা পাওয়া যায় না।’
ডিএসসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিব খাদেম বলেন, ‘বাস স্টপেজ নির্মাণের জন্য পুলিশ আমাদের ৭০টি স্থানের তালিকা দিয়েছে। প্রতিটি স্থানেই বাস স্টপেজ নির্মাণ করে দিয়েছি। দুই সিটিতে ৩৮টি যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা করা হয়েছে। এগুলো যাত্রীবান্ধব। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আমরা বাস স্টপেজ ও যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করে দিলেও কোনও পরিবহনই সেই নিয়ম মানছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে নির্মাণ করে দেওয়া। কিন্তু বাসগুলোকে স্টপেজে দাঁড়ানোর দায়িত্ব হচ্ছে বাস মালিক, বিআরটিএ ও পুলিশের। বিষয়টি নিয়ে তাদেরকে কাজ করতে হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার ট্রাফিক (দক্ষিণ) মফিজ উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাস স্টপেজগুলোতে যাত্রী ওঠাতে বাধ্য করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর যেসব চালক আইন অমান্য করছে, আমরা তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনার চেষ্টা করছি।’
তবে বাস মালিকদের শৃঙ্খলায় না ফেরাতে পারলে কোনও প্রকল্পই কাজে আসবে না বরং ভোগান্তি আরও বাড়বে বলে মনে করেন নগর বিশেষজ্ঞরা। নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)- এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খানের মতে, ‘সড়কে শৃঙ্খলার জন্য শর্ত হচ্ছে, বাস মালিকদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফেরানো। তাদের শৃঙ্খলায় না এনে যতই আধুনিক বাস স্টপেজ কিংবা যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হোক, কোনও কাজে আসবে না।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘আমরা নির্দেশ দিয়েছি, নির্ধারিত স্থান ছাড়া যাত্রী ওঠানামা না করতে। চুক্তি বা টার্গেটভিত্তিক কোনও পরিবহন চালানো যাবে না। পরিবহন চালানোর সময় দরজা বন্ধ রাখতে হবে। প্রতিমাসে চালক ও হেলপারদের সঙ্গে মালিকদের মতবিনিময় করতে হবে, যারা এসব করবে না আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এর আগে অনেক চালক, মালিক ও হেলপারকে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। অনেকের সাংগঠনিক নিবন্ধন বাতিল করেছি।’