X
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
১৬ বৈশাখ ১৪৩২

শিলাবৃষ্টি কখন হয়, কেন হয়

সঞ্চিতা সীতু
০২ এপ্রিল ২০১৮, ০৯:২৯আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০১৮, ১৩:১৮

শিলাবৃষ্টি সাধারণত গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত গরমের সময় শিলাবৃষ্টি হয়। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে ফাগুন-চৈত্র মাসেই শিলাবৃষ্টির প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্রীষ্মের আগেই তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াকেই এর কারণ বলে জানিয়েছে আবহাওয়াবিদরা।

গত কয়েক বছরের মতো এ বছরও চৈত্র মাস পড়তে না পড়তেই শিলাবৃষ্টির প্রকোপ শুরু হয়েছে। সাধারণত, ভারি শিলাবৃষ্টির কারণে চৈত্র মাসে উঠতি ফসলসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তবে এবার সর্বশেষ শিলাবৃষ্টির সময় শিলার আকার বড় হওয়ায় অনেক জেলাতেই বসতঘরের টিনের চাল ফুটো হতে দেখা গেছে। অনেকে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন। প্রাণহানিও ঘটেছে কয়েকজনের। এ অবস্থা থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষকে পাকাবাড়ির নিচে অথবা নিরাপদ ছাউনির নিচে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সাধারণভাবে বলা যায়, আকাশে যখন মেঘের পরিমাণ অনেক বেশি হয় বা মেঘ অনেক বেশি ভারি হয় ওঠে, তখন বৃষ্টির সময় আকাশ থেকে বরফের টুকরা বা মেঘের কণা পড়ে থাকে; একেই শিলাবৃষ্টি বলা হয়ে থাকে।

তবে আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের যে ওয়েদার ক্যালেন্ডার আছে, তাতে গ্রীষ্মকাল না বলে আমরা বলি প্রাক-মৌসুমী সময়। সেটি কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। এটি সাধারণত মার্চ মাসের শেষের দিকেই শুরু হয়। কখনও কখনও ফেব্রুয়ারিতেও দেখা দেয়।

শিলাবৃষ্টিতে ঘরের চাল ফুটো হয়ে গেছে আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, এই সময়টিতে আকাশের কোথাও কোথাও ৩৪ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে এবং ওই সময় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দখিনা বাতাস আসতে পারে। তার সঙ্গে যোগ হয় বিহার ও এর পাশের পশ্চিমবঙ্গে ‘হিট লো’ (তাপীয় লঘুচাপ) তৈরি হয়। বাংলাদেশের চেয়ে তাপমাত্রা বেশি থাকায় ‘হিট লো’গুলো সাধারণত তৈরি হয় বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে। গরম বাতাস হিসেবে ‘হিট লো’ ধীরে ধীরে বাংলাদেশের স্থলভাগের দিকে আসে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বঙ্গোপসাগর থেকে আগত জলীয় বাষ্পে পূর্ণ আর্দ্র বাতাস। এই দুইয়ের সঙ্গে সিলেট থেকে আসা অপেক্ষাকৃত শীতল বাতাসের সংমিশ্রণে তৈরি হয় মেঘমালা।

এই প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়া মেঘমালাকে আবহাওয়া অধিদফতর বলে বজ্রমেঘ। এগুলো যখন ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৭/১৮ কিলোমিটার উপরে উঠে যায়, জ্বলীয় বাষ্প উপরে উঠে আরও ঠাণ্ডা হয়ে যায় এবং ছোট ছোট বরফ কণায় পরিণত হয়।এই ছোট ছোট বরফ কণা আশপাশের আরও বরফখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং বড় শিলাখণ্ডে পরিণত হয়। এই শিলাখণ্ড যখন বেশি ভারি হয়ে যায়, তখন তার ওজনকে আর বায়ুমণ্ডল ধরে রাখতে পারে না। তখন এগুলো শিলাবৃষ্টি আকারে ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে।

বায়ুমণ্ডলে থাকা শিলাখণ্ডগুলো অবশ্য অনেক বড় আকারে থাকে। মাটিতে ঝরে পড়ার সময় শিলাখণ্ডগুলো একে অন্যের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে ছোট হয়ে যায় এবং তা ছোট ছোট আকারের শিলা হিসেবে নেমে আসে।

আবহাওয়া অধিদফতরের পক্ষ থেকে শিলাবৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আরিফ হোসেন জানান, শিলাবৃষ্টি শুরু হলে খোলা আকাশের নিচে থাকা কোনোভাবেই নিরাপদ নয়। এ সময় একটি ছাউনির নিচে থাকাটা নিরাপদ। তবে ছাউনিটা কংক্রিটের হলে সবচেয়ে ভালো হয়। কারণ, টিনের চালও একটু বড় আকৃতির শিলার আঘাতে ফুটো হয়ে যেতে পারে।

ঝড়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি আরিফ হোসেন পরামর্শ দিচ্ছেন, শিলাবৃষ্টির সময় গাড়ি চালানো অবস্থায় থাকলে গাড়ি ধীরে চালানো উচিত। বাসায় থাকলে বাইরে বের না হওয়াই ভালো। এছাড়া ঝুলন্ত বিদ্যুতের তার স্পর্শ করা যাবে না এবং বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেলে দ্রুত বিদ্যুৎ বিরতণ কোম্পানিকে জানাতে হবে। পার্বত্য এলাকায় থাকলে কোনও গুহায় ঢোকা যাবে না। কারণ ভূমিধসের কারণে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আবার পাহাড়ের আশপাশে থাকলেও ভূমিধসের আশঙ্কা থাকতে পারে।

এই আবহাওয়াবিদ আরও বলেন, শিলাবৃষ্টি থেকে মানুষের জীবন রক্ষা পেলেও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে তেমন কোনও বড় ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন। তবে উন্নত দেশে গ্রিন হাউজ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফলের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হলেও তা স্বল্প পরিসরের ফসলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তাছাড়া, আমাদের দেশে গ্রিন হাউজ প্রযুক্তির ব্যবহারও নেই। তাই শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হলে কৃষককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া ছাড়া কোনও বিকল্প সরকারের নেই।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, অনেক সময় এই শিলাবৃষ্টি পড়ার গতি ঘণ্টায় ৬০ মাইল পর্যন্ত হতে পারে। তবে সাধারণত ১৫ মিনিটের বেশি শিলাবৃষ্টি হয় না। শিলাবৃষ্টিতে গড়ে একটা শিলার ব্যাস হয় ৫ থেকে ১৫০ মিলিমিটারের মধ্যে। শিলার ব্যাস পৌনে এক ইঞ্চি না হলে শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতির সম্ভাবনা তেমন থাকে না। তবে এর চেয়ে বড় ব্যাসের শিলা হলে ব্যাস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিলার মাধ্যমে ক্ষতির পরিমাণও বাড়তে থাকে।

/টিআর/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রুদ্ধদ্বার শুনানিতে জামিন পাননি খালেদা জিয়ার ভাগনে সাবেক এমপি তুহিন 
রুদ্ধদ্বার শুনানিতে জামিন পাননি খালেদা জিয়ার ভাগনে সাবেক এমপি তুহিন 
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের পদত্যাগের ঘোষণা
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের পদত্যাগের ঘোষণা
দণ্ডের ১৭ বছর পর আদালতে আত্মসমর্পণ খালেদা জিয়ার ভাগনে তুহিনের
দণ্ডের ১৭ বছর পর আদালতে আত্মসমর্পণ খালেদা জিয়ার ভাগনে তুহিনের
আগামী নির্বাচনে সীমিত পরিসরে হলেও প্রবাসীদের ভোটের প্রস্তুতি চলছে: সিইসি
আগামী নির্বাচনে সীমিত পরিসরে হলেও প্রবাসীদের ভোটের প্রস্তুতি চলছে: সিইসি
সর্বাধিক পঠিত
মানবিক করিডোরের জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে সরকার
মানবিক করিডোরের জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে সরকার
পর্যটককে মারধর করে ২৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন বিএনপি নেতারা
পর্যটককে মারধর করে ২৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন বিএনপি নেতারা
দুটি বিশ্ব রেকর্ড ভাঙলেন ১৪ বছরের বৈভব
দুটি বিশ্ব রেকর্ড ভাঙলেন ১৪ বছরের বৈভব
ধর্ষণের অভিযোগে ইমামকে গণপিটুনি, কারাগারে মৃত্যু
ধর্ষণের অভিযোগে ইমামকে গণপিটুনি, কারাগারে মৃত্যু
আদালতে সাবেক আইনমন্ত্রীকে কিলঘুষি, বাধা না দিয়ে পুলিশের দৌড়
আদালতে সাবেক আইনমন্ত্রীকে কিলঘুষি, বাধা না দিয়ে পুলিশের দৌড়