X
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
৭ বৈশাখ ১৪৩২
ধর্ষণের প্রতিবাদে উত্তাল ঢাবি

ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, ঢাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ঢাবি প্রতিনিধি
০৯ মার্চ ২০২৫, ১৬:০৯আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৫, ১৬:০৯

সারা দেশে চলমান ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় গতকাল রাত থেকেই উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। রাতে সব হল থেকে বের হয়ে এসে প্রতিবাদ জানানোর পর সকাল থেকেই বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ধর্ষকের বিচারের দাবিতে নিজ নিজ বিভাগের ব্যানারে বিক্ষোভ করছেন। এ বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছেন বিভাগগুলোর শিক্ষকরাও। 

রবিবার (৯ মার্চ) প্রথম প্রহর থেকেই উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এদিন প্রথম প্রহরে ঢাবি শিক্ষার্থীরা ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ ঘোষণা করা হয়। প্রথম প্রহরে হল থেকে নারী শিক্ষার্থীরা বের হয়ে এসে বিক্ষোভ করেন। সকাল থেকেও বিভিন্ন বিভাগের আন্দোলনে উত্তাল রয়েছে ক্যাম্পাস। 

ঢাবিতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ সমাবেশ

এখন পর্যন্ত ধর্ষকের বিচার দাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বাংলা বিভাগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান, ইংরেজি, লোক প্রশাসন, রসায়ন, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান, পদার্থ, ভূতত্বসহ  বেশকয়েকটি বিভাগ এদিন ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেন। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এসব বিক্ষোভে যোগ দেন কয়েকটি বিভাগের শিক্ষকরাও।

ঢাবি শিক্ষার্থীদের লাঠি মিছিল

বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা- ‘ইউ ওয়ান্ট ইউ ওয়ান্ট, জাস্টিস জাস্টিস’, ‘ইউ ওয়ান্ট, জাস্টিস, হ্যাং দ্যা রেপিস্ট’; ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাই নাই’; ‘তুমি কে আমি কে, আসিয়া আসিয়া’; ‘আমার বোন তোমার বোন, আসিয়া আসিয়া’; ‘আমার বোনের কান্না, আর না আর না’; ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধরে ধরে কবর দে’; ‘রশি লাগলে রশি নে, ধর্ষকদের ফাসি দে’; ‘ধর্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও'; ‘২৪ এর বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাই নাই’; ‘জাহাঙ্গীর করে কী? খায় দায় ঘুমায় নাকি?’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আয়োজনে বিক্ষোভ মিছিল

বিক্ষোভে বাংলা বিভাগের ইশিতা জাহান অর্ণা বলেন, আমরা সারাদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক ধর্ষণের খবর পাচ্ছি। ছোট ছোট বাচ্চারাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়। আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি আমাদের মা বোনদের নিরাপত্তার জন্য। আমরা আমাদের নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, আমাদের মা বোনদের নিরাপত্তার জন্য এখানে এসে দাঁড়িয়েছি।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক বলেন, বিভিন্ন দীর্ঘসূত্রিতার মাধ্যমে ধর্ষকদের যথাযথ বিচার হতে আমরা খুব একটা দেখি না। যেকারণে ধর্ষকরা বারংবার এইধরনের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড করার দুঃসাহস দেখিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ধর্ষকদের পার পাইয়ে দেওয়ার মতো বিভিন্ন ঘটনা আমরা অতীতে দেখেছি। আমরা চাই অনতিবিলম্বে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ধর্ষকদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। 

ঢাবিতে প্লাকার্ড নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। তার ব্যর্থতার জন্য তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী সেলকে শক্তিশালী করে শিক্ষার্থীদের অভিযোগগুলো যথাযথভাবে উপস্থাপনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

বিক্ষোভে ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী বাশার বলেন, আজকে আমরা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে দাঁড়িয়েছি ঘৃণিত ধর্ষকদের বিরুদ্ধে। আমরা দাঁড়িয়েছি আমার বোন আসিয়ার বিচার চাওয়ার জন্য। বিগত কয়েক মাসে বাংলাদেশে বড় আতংক ধর্ষক। আমরা ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়েছি আমার বোনদের রক্ষা করতে, আমার বোনেরা যেন রাস্তা দিয়ে চলতে পারে সেই অধিকার নিশ্চিত করার জন্য। সরকারের কাছে একটাই আবেদন ধর্ষকদের ইনস্ট্যান্ট ফাঁসির ব্যবস্থা করেন, নয়তো শীঘ্রই জনগণ পাথর মেরে জনসম্মুখে হত্যা করবে।

ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবির বলেন, আমরা কখনও দৃষ্টান্তমূলক কোনও শাস্তি এখন পর্যন্ত দেখতে পাইনি। আমরা যদি ধর্ষকদের উপযুক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে ধর্ষকরা ভয় পেয়ে আর অপরাধ করবে না। আমরা বলতে চাই, এই ধর্ষকরা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। পশুরা অন্তত তাদের বাচ্চাদের সঙ্গে এসব করে না। কিন্তু আমাদের ছোট মেয়ে আসিয়াকেও তারা ছাড় দেয়নি। আমরা যেনও এই ঘটনাগুলো ভুলে না যাই। আমরা ভুলে যাই বলেই ধর্ষকরা কদিন পরপর তাদের রূপ দেখায়।

পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, নারী দিবসেও একাধিক ঘটনা ঘটেছে। শিশু ধর্ষণও হয়েছে। এসবের পরেও আমরা ঘরে বসে থাকতে পারি না। আমারা চাই এদেশে ধর্ষণের বিরুদ্ধে একটু সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থা গড়ে উঠুক। কারণ এদেশে বিচার ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদী। ধর্ষকরা জামিন পেয়ে যায়। আমরা এধরণের বিচার ব্যবস্থা চাই না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গতকাল রাতেও ধর্ষণের প্রতিবাদে বের হয়ে এসেছিলো। আজও আমরা ক্লাস পরীক্ষা বাদ দিয়ে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি।

বিক্ষোভে যোগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, সারা দেশে নারীদের ওপর ধর্ষণের নামে যে নারকীয় নির্যাতন চলছে তার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী দেখে সহিংসতা হতে পারে কিন্তু নারীদের প্রতি যে সহিংসতা চলছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নারীদের প্রতি এ সহিংসতা প্রতিরোধ না করতে পারলে দেশে গণতন্ত্রের সফলতা আসবে না। 

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ধর্ষণবিরোধী গণপদযাত্রা

তিনি বলেন, কঠোর কণ্ঠে দৃঢ়ভাবে নারীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব ধর্ষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে এ সহিংসতা প্রতিরোধ করতে। প্রয়োজনে ধর্ষকদের প্রকাশ্যে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে 

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, বিপ্লব পরবর্তী সময়ে নারীদের প্রতি চলমান নিপীড়ন ও ধর্ষণের প্রতিবাদ করা সকলের কর্তব্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবং বাংলাদেশের নাগরিক গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করেছে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে। আবারও সংগ্রাম হবে নারীদের ওপর ঘটে যাওয়া নিপীড়নের বিরুদ্ধে।

শনিবার রাতে বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাবি শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কও। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, পরিবার থেকে শুরু করে জনপরিসরে নারীদের ওপর যে নিপীড়ন, তা হঠাৎ করা হয়েছে বলার সুযোগ নেই। সমাজ এই নির্যাতনকে নরমালাইজ করে। নির্যাতন হচ্ছে একধরনের ক্ষমতার বিস্তার। আমাদের গৃহাভ্যন্তরে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন হয়। নির্যাতন করে চুপ করিয়ে রাখতে চাওয়া হয়। নারীদের প্রশ্ন করা হয়, তারা কেন পথে বের হলো। এটা নির্যাতনকারীদের সাহস দেয়।

এছাড়াও ধর্ষণের প্রতিবাদে ও ধর্ষকের ফাঁসি কার্যকরের দাবিতে শিক্ষার্থীদের লাঠি মিছিলসহ একাধিক বিক্ষোভে উত্তাল রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

/এমকেএইচ/
সম্পর্কিত
সারা দেশে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশ আজ
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আবারও ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ
ভোলার গ্যাস বাইরে নেওয়া বন্ধের দাবিতে আরও তিনটি গাড়ি আটকে বিক্ষোভ
সর্বশেষ খবর
আপিল বিভাগের নতুন দুই বিচারপতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত
আপিল বিভাগের নতুন দুই বিচারপতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত
ফয়জুল করিমকে মেয়র ঘোষণার দাবিতে আদালতের সামনে অবস্থান
ফয়জুল করিমকে মেয়র ঘোষণার দাবিতে আদালতের সামনে অবস্থান
‘নারী বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি ন্যায়বিচারের অভিগম্যতা নিশ্চিতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ’
‘নারী বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি ন্যায়বিচারের অভিগম্যতা নিশ্চিতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ’
রাজের ‘ইনসাফ’, নায়িকা ফারিণ
রাজের ‘ইনসাফ’, নায়িকা ফারিণ
সর্বাধিক পঠিত
গাজীপুরে সেই দুই শিশুকে হত্যা করেছেন মা: পুলিশ
গাজীপুরে সেই দুই শিশুকে হত্যা করেছেন মা: পুলিশ
আ.লীগের ঝটিকা মিছিল, বিপাকে পুলিশ
আ.লীগের ঝটিকা মিছিল, বিপাকে পুলিশ
রাবির ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ৩ ভুল
রাবির ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ৩ ভুল
হিন্দু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায় হত্যা: নিন্দা জানালো ভারত
হিন্দু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায় হত্যা: নিন্দা জানালো ভারত
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল নিয়ে ডিএমপির বার্তা
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল নিয়ে ডিএমপির বার্তা