চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের শতভাগ ডোপ টেস্টের আওতায় নিতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগামী বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) থেকে এই কার্যক্রম শুরু হবে। শিক্ষার্থীরা মাত্র ৩৫০ টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যালে নিজেদের ডোপ টেস্ট করাতে পারবেন। টেস্টে কেউ ‘পজিটিভ’ হলেই হারাতে হবে আবাসিক হলের সিট।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান।
তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাস ও এর আশপাশের এলাকাগুলো একটা সময় মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছিল। সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমরা বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছি। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট করতে গেলে যে ব্যয়বহুল খরচ, সেটা কমিয়ে আনার জন্য আমরা নিজস্ব ল্যাবে টেস্ট করার পরিকল্পনা করেছি। শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, আমাদের নিরাপত্তাকর্মীসহ অনেকেই মাদকাসক্ত। আমরা পর্যায়ক্রমে সবগুলোতেই হাত দেবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেউ যদি খুব বেশি অ্যাডিক্টেড হয়ে থাকে, তাহলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।’ ডোপ টেস্টের পজিটিভ ফলাফলের কারণে যে আসনগুলো খালি হবে সেখানে আগের আসন বরাদ্দের মেরিট লিস্ট থেকে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ দেয়া বলেও জানান তিনি।
চবি উপ-উপাচার্য বলেন, ‘সর্বপ্রথম হলের শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্টের আওতায় আনবো। আগামী বৃহস্পতিবার আমরা অফিসিয়ালি ডোপ টেস্টের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি। আমরা এখানে কোনও লাভ করছি না। বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসোর্সগুলো ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আমরা খরচ কমানোর চেষ্টা করেছি। বাকি টাকা আমরা শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তুকি দেবো। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো সর্বোচ্চ বিবেচনা করা হবে। তবে হলে থাকা শিক্ষার্থীদের শতভাগ ডোপ টেস্টের আওতায় আনা হবে।’
এ বিষয়ে ডোপ টেস্ট কমিটির সমন্বয়ক ও জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আতিয়ার রহমান বলেন, ‘আগামী ১২ তারিখ আমরা এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্টের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু করবো। আমরা এই কাজটি করবো সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে। কাউকে ছোট করার উদ্দেশ্যে না। আমরা মাদক থেকে শিক্ষার্থীদের উত্তোরণের জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের টেস্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে যাতে কোনও সন্দেহ না থাকে, সেভাবেই টেস্টের মান নিশ্চিত করা হবে। আমেরিকান কিটস দিয়ে ডোপ টেস্ট করা হবে। এ সংক্রান্ত সব তথ্য সরবরাহ করা হবে। যাতে সবাই এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। এমনকি কোনও ত্রুটি দেখলেও আমাদের জানানোর অনুরোধ করছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন প্রশাসন আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে বৈধভাবে আসন বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদেরকে আসন বরাদ্দ পেতে হলে তাদের ডোপ টেস্টের মধ্য দিয়ে যেতে হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে আসন বরাদ্দের আগে ডোপ টেস্ট করানো সম্ভব হয়নি। এখন ডোপ টেস্ট করার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কোন শিক্ষার্থী আবাসিক হলে থাকবে। কারও ডোপ টেস্ট পজিটিভ আসলে তার হলের আসনটি বাতিল হবে।
শুরুতে ৯৫০ টাকার বিনিময়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডোপ টেস্ট করানোর কথা থাকলেও পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়। এখন ৩৫০ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ল্যাব ব্যবহার করেই করা হবে ডোপ টেস্ট।
হল অনুযায়ী ডোপ টেস্টের তারিখ
এ এফ রহমান হল—১২, ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর
আলাওল হল—১৫, ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর
শহীদ আব্দুর রব হল—১৮, ১৯ ও ২০ ডিসেম্বর
মাস্টার দা সূর্যসেন হল—২১, ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর
শাহ আমানত হল—২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ডিসেম্বর
সোহরাওয়ার্দী হল—৩০, ৩১ ডিসেম্বর ও ১, ২ জানুয়ারি
শাহজালাল হল—৩, ৪, ৫, ৬ জানুয়ারি
শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেল—৭ জানুয়ারি
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ডোপ টেস্ট কমিটির সমন্বয়ক ও জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আতিয়ার রহমান, শাহ আমানত হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. গোলাম কিবরিয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যালের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ডা. মোহাম্মদ আবু তৈয়ব।