জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লার মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে জড়িয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান। সেই সঙ্গে তার উপস্থিতিতে মারধরের বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করেন উপাচার্য।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের (৩৯তম ব্যাচ) সাবেক শিক্ষার্থী শামীম মোল্লার অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে আমাকে ও প্রক্টরিয়াল বডিকে জড়িয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে।’
উপাচার্যের উপস্থিতিতে মারধরের বিষয়টি সত্য নয় দাবি করে কামরুল আহসান বলেন, ‘আমি ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মহোদয়কে নির্দেশ দিই। তবুও ঘটনার গুরুত্ব উপলব্ধি করে আমি নিজেই সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটের দিকে প্রক্টর অফিসে উপস্থিত হই। আমি গিয়ে দেখতে পাই, পুলিশ তখনও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়নি। আমি তাৎক্ষণিকভাবে আবারও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের দ্রুত আসতে অনুরোধ করি।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রক্টর অফিসে গিয়ে জানতে পারি, শামীম মোল্লাকে মারধরকারী বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিয়ে নিরাপত্তা শাখার কলাপসিবল গেটে নতুন তালা লাগিয়ে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। আমি কালবিলম্ব না করে তাকে দ্রুত পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার জন্য প্রক্টর মহোদয়কে নির্দেশ দিই। এরপর আমি ঘটনাস্থল থেকে চলে আসি। সুতরাং, আমার উপস্থিতিতে মারধরের বিষয়টি সত্য নয়।’
সেই সঙ্গে জাবি ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ ভুঁইয়া এবং উপাচার্যকে নিয়ে প্রচারিত সংবাদকে ভিত্তিহীন দাবি করে উপাচার্য বলেন, ‘আমাকে ও জাবি ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদককে জড়িয়ে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সেদিন প্রক্টর অফিসে উপস্থিত হওয়ার পর নবনিযুক্ত উপাচার্য হিসেবে আমার সঙ্গে অনেক সাবেক শিক্ষার্থী দেখা করেন। তাদের মধ্যে আবু সাঈদ ভূঁইয়াও ছিল বলে নিশ্চিত হয়েছি। তবে তাদের সঙ্গে শামীম মোল্লাকে মারধরের বিষয়টি নিয়ে আমার কোনও কথা হয়নি।’
শামীম মোল্লার মৃত্যুর ঘটনায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়াকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নজিরবিহীন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক সংবাদে শামীম মোল্লার মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি এ ঘটনায় একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে শামীম মোল্লার মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে শোক প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে কয়েকজনকে চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পাশাপাশি অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এমনকি ওই দিনই প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা দায়ের করা হয়। এ ঘটনায় এত তড়িৎ গতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ে নজিরবিহীন।’
উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লাকে মারধরের পর পুলিশে হস্তান্তর করলে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হলে তার মৃত্যু হয়।