ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, দলীয় ছাত্ররাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অপরদিকে, ৮৩.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্ররাজনীতিকে ‘একেবারেই নিষিদ্ধ’ রূপে প্রত্যাশা করেছেন। দলীয় ছাত্ররাজনীতির সংস্কার প্রত্যাশা করেছেন মাত্র ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সংসদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতি ও রাজনৈতিক কার্যক্রম বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অভিমত’ শীর্ষক গবেষণা জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। এতে উল্লিখিত তথ্য উঠে আসে।
৩ থেকে ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের মাঝে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জরিপের ফলাফল ও প্রক্রিয়া তুলে ধরে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৮টি বিভাগ ও ১০টি ইনস্টিটিউটের ২ হাজার ২৩৭ জন শিক্ষার্থী জরিপে অংশ নেন। তারা সবাই ২০১৭-১৮ থেকে ২০২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থী।
জরিপে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৩.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী দলীয় ছাত্ররাজনীতিকে ‘একেবারেই নিষিদ্ধ’ রূপে প্রত্যাশা করেছেন। সংস্কারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতি প্রত্যাশা করেছেন মাত্র ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতি যে অবস্থায় আছে, সেই অবস্থায়ই দেখতে চান মাত্র ০.২ শতাংশ। আর ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্ররাজনীতির ‘কোনও গুরুত্ব নেই’ বলে মনে করেন।
৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী দলীয় ছাত্ররাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে জানিয়েছেন (এর মধ্যে ৭১ শতাংশ ‘খুবই নেতিবাচক প্রভাব’ ও ২৫ শতাংশ ‘নেতিবাচক প্রভাব’ ফেলে বলে মনে করেন)। এর বিপরীতে দলীয় ছাত্ররাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে মনে করেন ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। ১ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, দলীয় ছাত্ররাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের ওপর কোনও প্রভাব ফেলে না।
দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিকল্প হিসেবে ৮১.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী নিয়মিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও দলীয় ছাত্ররাজনীতির প্রশ্নে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী ‘শুধু ছাত্র সংসদ চান, তবে দলীয় ছাত্ররাজনীতি চান না’ বলে মতামত দিয়েছেন।
ছাত্ররাজনীতির মূল প্রভাব হিসেবে ৮৭.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্ষমতার অপব্যবহারকে উল্লেখ করেছেন। ৮৭.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপ, ৮৪.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ভয়ংকর গেস্টরুম কালচার, ৭৭.২ শতাংশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সহিংসতা, ৭৪.১ শতাংশ দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ৬৮.৮ শতাংশ নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থতা, ৬৮.৭ শতাংশ জাতীয় রাজনৈতিক দলের প্রভাব, ১১.৪ শতাংশ নেতৃত্বে সুযোগ সৃষ্টি, ৪.৬ শতাংশ ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি এবং ৪.৫ শতাংশ অন্যান্য প্রভাব ফেলে বলে উল্লেখ করেছেন।
জরিপের ফলাফলে আরও দেখা যায়, ক্যাম্পাসভিত্তিক বা হলভিত্তিক দলীয় ছাত্ররাজনীতির কমিটি প্রদানকে ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থী সমর্থন করেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতির সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং সমর্থন করেন কি? এমন প্রশ্নে ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতির সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং সমর্থন করেন না। ৮১ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রমের কারণে তাদের শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন।
দলীয় ছাত্ররাজনীতি পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকায় ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ‘খুবই অসন্তোষজনক’, ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ‘অসন্তোষজনক’, ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ‘মধ্যম’, ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ‘সন্তোষজনক’ এবং ১ শতাংশ শিক্ষার্থী ‘খুবই সন্তোষজনক’ হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতি প্রকৃত অর্থেই জাতীয় নেতৃত্ব তৈরি করতে সক্ষম নয় বলে মনে করেন ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। রাজনৈতিক কার্যক্রমের ফলে ৭৪ শতাংশ শিক্ষার্থীদের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা আছে বলে উল্লেখ করেন। অপরদিকে মাত্র ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর নেতিবাচক অভিজ্ঞতা নেই বলে মতামত প্রকাশ করেন। ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন না।
জরিপের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ৪টি সুপারিশ তুলে করা হয়—১. দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা।
২. ডাকসু পুনরুজ্জীবিত ও সংস্কার।
৩. শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়ন কমিটি গঠন।
৪. শিক্ষা ও গবেষণার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা।