প্রায় এক যুগ পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের পত্রিকা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। রবিবার (১৯ আগস্ট) উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর ইতিহাস আগ্রহী শিক্ষার্থীদের ভিড় জমতে শুরু করে। তবে পর্যাপ্ত আসবাব না থাকায় অনেককেই দাঁড়িয়ে পড়তে হয়েছে পত্রিকা। তাই সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন লাইব্রেরিয়ানরা।
সোমবার (২০ আগস্ট) সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পুরনো পত্রিকা শাখার রুমে দেখা যায়, বেশ কিছু শিক্ষার্থী বসে বসে পত্রিকা পড়ছেন। সবার চোখই ১৯৭২ থেকে ’৭৫ সালের কোনও না কোনও পত্রিকার ওপর। কেউ কেউ বসার জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান জানান, লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ তাক না থাকায় পড়ার জন্য রাখা টেবিলের ওপর রাখতে হচ্ছে পত্রিকাগুলো। ফলে পাঠকরা বসার জায়গা কম পাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭২ থেকে ’৭৫ সালের পত্রিকা পড়ার জন্য আলাদা রুম রয়েছে। দুই মাস ধরে চলা সংস্কারকাজ প্রায় শেষ। হয়তো আগামীকাল বা পরশু ওই রুম উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। সেখানে থাকা তাকগুলোকেও সংস্কার করা হয়েছে। তবে কাঠের তাক হওয়ায় উইপোকা পত্রিকা নষ্ট করতে পারে বলেও জানান তিনি।
স্টিলের আলমারিসহ যাবতীয় সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার চিঠি দিলেও বাজেট সংকট দেখিয়ে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া লাইব্রেরিতে কোনও ওয়াশরুম না থাকায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পাঠকদেরও।
ঠিক কবে থেকে এসব পত্রিকা সর্বসাধারণের পড়ার জন্য বন্ধ রাখা হয়, সুনির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। তবে লাব্রেরির আরেক ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান জানিয়েছেন, ২০১২ থেকে ১৩ সালের দিকে ‘টেকনিক্যাল কারণ’ দেখিয়ে পত্রিকার হার্ড কপি শিক্ষার্থীদের জন্য অলিখিতভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
এই সময়ে শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও গবেষকদের এসব পত্রিকার ছাপা অংশের স্ক্যান করা কপি প্রিন্ট করে দেওয়া হতো। তবে কেউ চাইলেও এর মূল কপি দেখতে পেতো না।
লাইব্রেরিতে বাংলা ট্রিবিউনের কথা হয় বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিমুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ইতিহাসবিদদের মতে, পাঠ্যপুস্তক থেকে প্রকৃত ইতিহাস জানা যায় না। কারণ ক্ষমতাসীনরা নিজেদের প্রয়োজনে ইতিহাস লুকায়, বিকৃত করে ও অর্ধসত্য প্রকাশ করে। স্বাধীনতার পরের ইতিহাস আমরা জানি না ঠিকঠাক। আসলে কী ঘটেছিল সে সময়ে, সেই আগ্রহ থেকেই এসেছি এখানে।’
লাইব্রেরিয়ানদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, তিন তলায় স্ক্যানেও পুরনো দিনের পত্রিকা পড়ার সুযোগ রয়েছে। তবে সেখানে সব পত্রিকা স্ক্যান করা কমপ্লিট হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ১৯৭২ থেকে ‘৭৫ সালের পত্রিকা কম্পিউটারে স্ক্যান করা নেই। রয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি সালের। আর পাঠকরা জানান, পিডিএফ পড়তে বোরিং লাগে অনেকের কাছে। তাই তারা হার্ড কপি পড়তে চায়।