X
বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪
২০ আষাঢ় ১৪৩১

প্রত্যয় স্কিমের মাধ্যমে শিক্ষকদের মূলত জিম্মি করা হচ্ছে: জিনাত হুদা

ঢাবি প্রতিনিধি
০২ জুলাই ২০২৪, ১৪:৪৩আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৪, ১৬:০২

অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিমের’ প্রজ্ঞাপন বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবিতে সর্বাত্মক আন্দোলন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই প্রত্যয় স্কিমের মাধ্যমে সারা দেশের শিক্ষকদেরই মূলত জিম্মি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির নেতাসহ অন্য শিক্ষকরা কলাভবনের মূল ফটকে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। 

অবস্থান কর্মসূচিতে অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, ‘এ আন্দোলন শিক্ষার্থীদের জন্যই। ভবিষ্যতে তারাই শিক্ষক হবেন। এ আন্দোলন নিয়ে অনেক ধরনের অপপ্রচার চলছে। বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে এ আন্দোলন করা হচ্ছে। মূলত শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জন্যেই এ আন্দোলন করছেন। আর প্রত্যয় স্কিমের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের শিক্ষকদেরই মূলত জিম্মি করা হচ্ছে।’

উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশের কথা বাদই দিলাম... যেহেতু সবকিছুই বাদ দিচ্ছি; এই উপমহাদেশের দিকে তাকান, ভারত, শ্রীলঙ্কা এমনকি পাকিস্তানেও শিক্ষকদের বেতন অনেক বেশি। যাদের বিরুদ্ধে আমরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করেছিলাম, তাদের দেশেও শিক্ষকদের বেতন অনেক বেশি।’

সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি ও ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফুর রহমান বলেন, ‘এই পেনশন স্কিমটি শিক্ষকদের মান-সম্মানের ব্যাপার। যারা পেনশন স্কিমের পক্ষে কথা বলছে, তারা তাদের নিজস্ব অবস্থান বজায় রাখার জন্য এসব বলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্ররা সবসময় আন্দোলনের সংগ্রামের মাধ্যমে এই জাতিকে দিক নির্দেশনা দিয়েছে। তাই আমি, করি এই আন্দোলন শিক্ষার্থীদেরও আন্দোলন। যদি সরকার এই স্কিম বাতিলে আরও কালক্ষেপণ করেন, তাহলে আমাদের আন্দোলনে দেশের সাধারণ জনগণও অংশগ্রহণ করবেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের আদর্শের ভিন্নতা থাকলেও এই আন্দোলনে আমাদের কোনও মতপার্থক্য নেই। সব দলমত নির্বিশেষে আমরা এই আন্দোলনের সঙ্গে একমত।’

কর্মসূচিতে অধ্যাপক জিনাত হুদার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রহিম, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এম ওহিদুজ্জামান, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুল বাছিরসহ আরও অনেকে। এসময় শিক্ষকরা তাদের বক্তব্যে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান রাখার ঘোষণা দেন।

একই দাবিতে সকাল ১০টা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সামনের মল চত্বরে এসে জড়ো হন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তারাও দুপুর ১টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এসময় অবিলম্বে দাবি না মানলে বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব মূল ফটকে তালা ঝোলানোরও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। দাবি আদায়ে উপাচার্যকে ঊর্ধ্বতন মহলে আলোচনার আহ্বান জানান তারা।

কর্মচারীরা বলেন, সচিবরা আমাদের ওপর তাদের তৈরি করা অন্যায় নীতি চাপিয়ে দিয়েছে। তারা আমাদের বুকের উপর দিয়ে গাড়িতে করে অফিসে যান। আমাদের দাবি মেনে না নিলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব রাস্তা বন্ধ করে দেবো। ফলে তারাও আর আমাদের বুকের উপর দিয়ে অফিসে যেতে পারবে না। আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করে দেবো। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বাত্মক আন্দোলনের মাধ্যমে সারা দেশ অচল হয়ে যাবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তারা বলেন, আপনাদের হয়তো সাময়িক সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু এই আন্দোলন আপনাদের জন্যও। আপনারাও একসময় শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে যোগ দেবেন। আপনাদের ভবিষ্যতের সুবিধার জন্য আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।

ঢাবির কর্মচারী সমিতির সভাপতি সারোয়ার মোর্শেদ বলেন, ‘এই আন্দোলন শেষ না করে আমরা ঘরে ফেরবো না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে এমন রাজনীতি কখনও মেনে নেবো না। আমরা চাই, সর্বজনীন সুযোগ-সুবিধা স্কিম নামে এমন একটি স্কিম তৈরি করুন, যার ফলে আমলাদের মতো কর্মচারীরাও সমান সুযোগ পাবে। বর্তমান পেনশন স্কিমে আমলা, সচিবরা সব সুযোগ পাবে। কিন্তু আমাদের বেলায় এসে সেই পেনশনকে কাটছাঁট করা হয়েছে, যা আমরা কখনও মেনে নেবো না।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে কে বা কারা এমন ভুলভাল বুঝিয়েছে, আমরা জানি না। যে-ই বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য আন্দোলন করে ছাত্রত্ব হারিয়েছিলেন, তাদের প্রতি এই অন্যায় স্কিম মেনে নেওয়ার মতো নয়। এই প্রত্যয় স্কিম যদি বাতিল না করা হলে আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে ঢাবিকে অচল করে দেবো, পুরো বাংলাদেশ অচল করে দেবো।’

বিক্ষোভ সমাবেশে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. শাহজাহান, কর্মচারী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল হক, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইউনিয়নের তরিকুল ইসলাম, মনির রহমান, কর্মচারী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম, ইমদাদ হাসান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

/ইউএস/
সম্পর্কিত
অধ্যক্ষের ছেলের বিয়ে: কর্মচারীদের ৫০০ টাকা দেওয়ার নির্দেশনা
জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ ফি বেড়ে ১০০: হতাশ দর্শনার্থীরা, মন্ত্রী বললেন ‘অযৌক্তিক’
এডিসের লার্ভা পাওয়ায় স্কয়ার হাসপাতালসহ ৯ স্থাপনাকে জরিমানা
সর্বশেষ খবর
ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশন ও অক্সফাম একসঙ্গে কাজ করবে
ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশন ও অক্সফাম একসঙ্গে কাজ করবে
হেফাজতে মৃত্যু বন্ধ হয়নি, সীমান্তে হত্যা বেড়েছে: আসক
হেফাজতে মৃত্যু বন্ধ হয়নি, সীমান্তে হত্যা বেড়েছে: আসক
ঢাকা থেকে ভোলায় ‘ময়ূরাক্ষী’
ঢাকা থেকে ভোলায় ‘ময়ূরাক্ষী’
অধ্যক্ষের ছেলের বিয়ে: কর্মচারীদের ৫০০ টাকা দেওয়ার নির্দেশনা
অধ্যক্ষের ছেলের বিয়ে: কর্মচারীদের ৫০০ টাকা দেওয়ার নির্দেশনা
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে যে ৭ লক্ষণ প্রকাশ পায়
ভিটামিন ডি কমে গেলে যে ৭ লক্ষণ প্রকাশ পায়
আদালতে সাক্ষীরা জানালেন, তারা কিছু ‘জানেন না’ এবং ‘দেখেননি’
আলোচিত সাব্বির হত্যাকাণ্ডআদালতে সাক্ষীরা জানালেন, তারা কিছু ‘জানেন না’ এবং ‘দেখেননি’
প্রেমের টানে বাংলাদেশে এসে বিপাকে পড়া তরুণীকে নিজ দেশে পাঠাতে পতাকা বৈঠক
প্রেমের টানে বাংলাদেশে এসে বিপাকে পড়া তরুণীকে নিজ দেশে পাঠাতে পতাকা বৈঠক
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরোধিতা করলেন জি এম কাদের
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরোধিতা করলেন জি এম কাদের
এমপি আনার হত্যা: ৩ আসামির দোষ স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারের আবেদন
এমপি আনার হত্যা: ৩ আসামির দোষ স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারের আবেদন