রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পাল করেছেন ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, নতুন কমিটি বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এদিকে কমিটি ঘোষণার দুই দিন অতিবাহিত হলেও ক্যাম্পাসে আসেননি ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
গত শনিবার রাতে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুকে সভাপতি ও আসাদুল্লা-হিল-গালিবকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৯ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এতে কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে নতুন কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা৷ পরদিন সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে ছাত্রলীগের দলীয় টেন্টে অবস্থান নেন তারা।
দফায় দফায় বিক্ষোভ ও শোডাউন দিয়ে নতুন নেতৃত্বকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন পদবঞ্চিতরা। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদারবখশ হলে সদ্য ঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদকের কক্ষ ভাঙচুর করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে বর্তমান সভাপতির অনুসারীকে মারধর করে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া হয়। সোমবার অবস্থান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাস দখলে নেন তারা।
বিক্ষুব্ধ নেতাদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় কমিটি কোনও প্রকার যাচাই-বাছাই না করে টাকার বিনিময়ে এই কমিটি ঘোষণা করেছে। যেখানে বিএনপি পরিবারের সন্তান ও সনদ জালিয়াতি করে সান্ধ্যকোর্সে ভর্তি হওয়া একজনকে ছাত্রলীগের একটি বড় ইউনিটের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বর্তমান সভাপতি দীর্ঘদিন ধরে ছাত্ররাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। এছাড়া নতুন কমিটিতে পদ পাওয়া বেশিরভাগ নেতার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ আছে। ফলে এই কমিটি প্রশ্নবিদ্ধ উল্লেখ করে বিলুপ্তি চান তারা।
নতুন কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন কমিটির সহসভাপতি সরকার শাহিনুল ইসলাম ডন ও তাওহিদুল ইসলাম দুর্জয়। এছাড়া কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া নেতৃবৃন্দের মধ্যে রয়েছেন সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন, কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য সাকিবুল হাসান বাকি ও অনিক মাহমুদ বনি।
অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন বলেন, ‘দ্বিতীয় দিনের মতো ক্যাম্পাসে আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। এই কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি না দেওয়া পর্যন্ত আমরা ক্যাম্পাসে অবস্থান করবো। নতুন কমিটির কোনও নেতাকর্মীকে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে দেওয়া হবে না।’
বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে স্বচ্ছ ইমেজের ছাত্রনেতাদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে তাওহিদুল ইসলাম দুর্জয় বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সঠিক নেতৃত্ব ধরে রাখতে স্বচ্ছ ইমেজের নেতৃত্ব প্রয়োজন। সে লক্ষ্যেই আমরা ক্যাম্পাসে অবস্থান করছি, যাতে অবাঞ্ছিত নেতৃত্ব প্রবেশ করতে না পারে। কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি না দেওয়া পর্যন্ত আমরা ক্যাম্পাসে অবস্থান অব্যাহত রাখবো। ছাত্রলীগকে সঠিক নেতৃত্ব প্রদান করাই আমাদের লক্ষ্য।’
বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নবিদ্ধ এই কমিটির যারা নেতৃত্বের শীর্ষে এসেছেন, তারা হয়তো তাদের অপকর্মগুলো কেন্দ্রের কাছে গোপন রেখেছিল। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ হয়তো বিষয়টি পুরোপুরি অবগত না হওয়ায় তাদের পদ দিয়েছে। আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে তাদের বিরুদ্ধে ‘প্রমাণিত অপকর্মগুলো’ তুলে ধরেছি। এখন তাদের নতুন সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘আমি এখন ঢাকায় আছি। আমরা মঙ্গলবার নেতাকর্মী নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করবো।’