উপাচার্যের পদত্যাগ ও অন্যান্য দাবিতে আন্দোলনের দীর্ঘ ২৯ দিন পর শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) আসছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মণি। সেখানে তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টায় শিক্ষামন্ত্রী শাবি ক্যাম্পাসে আসবেন। পরে বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা রয়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ইয়াসির আরাফাত বলেন, অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক আমাদের শিক্ষামন্ত্রীর আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, গত চার সপ্তাহ ধরে শাবি শিক্ষার্থীরা ১৬ জানুয়ারির নারকীয় পুলিশি হামলার নির্দেশদাতা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। এছাড়া দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক জহির উদ্দিন আহমদ ও প্রক্টর ড. আলমগীর কবীরকেও পদ থেকে সরানোর দাবি ছিল আমাদের। ইতোমধ্যে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শিক্ষার্থী ইয়াসির বলেন, শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের আলোচনা হবে। আমরা আমাদের দাবিগুলো তার কাছে উপস্থাপন করবো। এছাড়া আমাদের ওপর ঝুলে থাকা মিথ্যা মামলাসমূহ এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি। এ নিয়েও কথা হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জানুয়ারি একটি ছাত্রী হলের প্রভোস্টকে সরানোর দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের কর্মীরা ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালালে, পরের দিন হামলার প্রতিবাদ ও একই দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। এদিন বিকালে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিপেটা, গুলি, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। এতে অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। ওইদিন রাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস ও হল বন্ধ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর থেকেই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ধারাবাহিকতায় ২৮ শিক্ষার্থী আমরণ অনশনেও বসেন। ১৬৩ ঘণ্টা অনশনের পর গত ২৬ জানুয়ারি সকালে শাবির সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হকের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙে উপাচার্যের বাসভবনের ফটকের ব্যারিকেড তুলে নেন।
অনশন ভাঙানোর পর অধ্যাপক জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘এখানে আসার আগে আমার সঙ্গে সরকারের উচ্চমহল থেকে কথা হয়েছে। তারা আমাকে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তাদের আশ্বাস পেয়েই আমি এখানে এসেছি। আমি তাদের অনুরোধ করবো, তারা আমাকে যে কথা দিয়েছেন সেগুলো যেন রক্ষা করেন। আমি আর এই ছাত্রদের ভেতর কোনও পার্থক্য নেই। আমাকে দেওয়া কথা না রাখলে সেটা কেবল আমার সঙ্গে না, এই দেশের সমস্ত প্রগতিশীল মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে।’
অনশন ভাঙার পর জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হকের হাতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচটি দাবি সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তুলে দেন। এর প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে ক্যাম্পাসে আসছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।