শীতের সকাল। অনুষদ ভবন প্রাঙ্গনে এসে জড়ো হয়েছেন মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের নবম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। তিন বছর আগে এমনই এক শীতের সকালে পরিচয় হয়েছিল তাদের। স্কুল কলেজের পাট চুকিয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়তে এসেছিলেন তারা। নিরিবিলি, শান্ত স্নিগ্ধ এই ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করছেন। পাশাপাশি গল্প আড্ডায় কাটিয়ে ফেলেছেন তিনটি শীত। আর একবছরের মধ্যেই স্নাতক পাশ করবেন তারা। ছড়িয়ে পড়বেন নানাদিকে। এগিয়ে নিয়ে যাবেন দেশের কৃষিখাতকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর কাটিয়ে দেওয়াটাই উদযাপন করতে জড়ো হয়েছিলেন তারা। মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদে কেক কেটে উদযাপন করলেন। তারপর বেশ কিছুক্ষণ চললো গান আর আড্ডা।
দেশের মৎস্য উৎপাদন বাড়াতে চান এই ব্যাচের সকলে। মাছ আর জলজ প্রাণীগুলো নিয়েই তাদের পড়াশুনা। ভালোবেসে ব্যাচের নাম দিয়েছেন ‘পয়কিলোথার্মিক’, যার অর্থ শীতল রক্তের প্রাণী- এমনটাই বলছিলেন চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম রিফাত। পড়ালেখার পাশাপাশি নিজেদের মত করে সাহিত্যচর্চা করছেন তারা। তাদেরই একজন, দীপ তালুকদারের সম্পাদনায় অনুষদ ভবনে ‘শৈল্পিক’ নামের একটি দেয়ালিকা প্রকাশ করছেন নিয়মিত। যেখানে প্রকাশিত হচ্ছে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, গল্প, কবিতা এবং মাৎস্যবিজ্ঞান নিয়ে নানা প্রবন্ধ। তাদের উদ্যোগী এই প্রকাশনার বেশ প্রশংসা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. তরিকুল আলম বলেন, ‘মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের প্রতিটি শিক্ষার্থী সৃজনশীল। পড়ালেখায় তারা যেমন ভালো করছেন তেমনি সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা আর খেলাধুলায় কৃতিত্ব দেখাচ্ছেন।’
শিক্ষার্থী আসমা আক্তার বৃষ্টি জানালেন, ক্যাম্পাসের বৈশাখী চত্বর, ক্যাফেটেরিয়া ছাড়াও পাশেই টিলাগড় ইকো পার্কে নিয়মিত বসে আড্ডা দেন তারা। কখনও ক্লাসের পড়া, কখনও গান আর কখনও আড্ডা এভাবেই কাটিয়েছেন তিনটি বছর। বিভিন্ন সংগঠনের সাথেও যুক্ত আছেন তারা। যেখানে শিখছেন সাংগঠনিক কাজ, কিংবা নিজেদের ক্যারিয়ার উন্নয়নের বিষয়গুলো। আরেক শিক্ষার্থী সুতপা দেবী বলেন, ‘চারদিকে যখন হতাশার হাতছানি, তখন ভর্তি হয়েছিলাম এখানে। এক টুকরো আশার আলো যুগিয়েছে প্রিয় বিদ্যাপীঠ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এখন শেষ বর্ষ চলছে। যখন মনে হয় আর মাত্র কয়েকটা দিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি ছাড়তে হবে, তখন অনুভূত হয় মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের সাথে ঠিক কতখানি জড়িয়ে গেছি।’ ক্যাম্পাসের অভিজ্ঞতা বলতে বলতে শিক্ষার্থী আলিফা আলম অর্মি বলেন, ‘মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদে যখন পড়া শুরু করি, প্রথম ভাবতাম কবে যে স্নাতক শেষ হবে! কিন্তু এখন কষ্ট লাগে যখন মনে হয় এক বছর পরই আমার স্নাতক শেষ হবে। এখান থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে দেশের মাৎস্যখাতে কাজ করতে চাই, উৎপাদন বাড়াতে চাই।’ সবাই নিজেরা স্বপ্ন দেখছেন। কেউ উচ্চশিক্ষা করবেন, কেউ গবেষণা, কেউ সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন আবার কেউ বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেই কাজ করবেন এমনটা ভাবছেন।