X
সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
১৫ বৈশাখ ১৪৩২

প্রিয় ১০ 

মাসুদ শাওন
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

রক্ত

রক্তের ভেতর এক তীব্র নারী
                     তাপ-সজ্জা জুড়ে নতবাক

সে আমার অ-জলীয় রাতে
ভ্রমের দরজা খুলে ডাকে— আয় আয়

এত কী বিশ্বাসী, নিরীহ মরুচর আমি
এত কী সন্দেহে দৃঢ় অপ্রত্যয়বাদী

প্রবল পুরুষ—চোখে—অশরীর কথারূপ
                   পৃথিবীর সব স্বাধীনতা

আমাকে নিহত করে
            আমারই আদিম রক্তে জমা, সহচর
আমার নারীতা



তিমিরগাঙ

পূর্ণতা, শাশ্বত, সময়, শূন্যতা...বলে আর কোনও শব্দ নেই আধুনিক ভাষায় এখন। যেভাবে ঘাসের বন, আরণ্যক আমাদের গ্রাম চিরে এক গ্লোবায়ন স্বপ্ন চলে গেছে সন্ন্যাসের পথে। দীর্ঘদিন এ কথা বলেছে অনেক মনীষী যারা হতাশ পাগল হয়ে নিজের ছায়ার বিষে আত্মহনন করেছে।

আমি আরও একবার সে কথা আজ বলি— আমার গোপন ঘর নেই। কোনও খড়ের আশ্রমে পারি না ঘুমোতে। একাধিক গ্রাম আর শহরের পরিচয়ে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি। বিভিন্ন বিচ্ছেদে, পরিচয়ে, একসাথে অনেক কালের মানুষ আমাকে বিভ্রান্ত করে— তাদের যাপনে, মেধায়, বন্ধনে। যার মন এখন নরম, তাকে প্রতিভূ বিজয়ী লাগে। যে সবল, মনে হয়, সে তো পরাজিত দলছুট সেনা।

আমি আজ কার কাছে যাব? যৌনতা মনতা সব জট লেগে থিতু পড়ে আছে। বুকের ভেতর থেকে নারী বেরিয়ে পড়েছে আমার। পুরুষও বেরিয়ে গেল ওই। কার কাছে যাব? সে নারী না লিঙ্গবিহীন দর্শন কোনও? যার কাছে যাব, সে কাকে করেছে মনোনীত? এআই, মেশিনে অর্ধেক মিশে যাওয়া অতিরিক্ত মন? পুরুষ শরীর? নারীত মেহন?

জীব, জড়, বাঁচা, মরা…কোনও কথা নেই। আমি কার কাছে যাব, বাস্তুসম্পর্কের জালে না কোনও বন্ধুর বুকে, যে আমাকে আশ্রয় ভাবে, ভাবে তার প্রক্ষিপ্ত বিম্বিত মন? কার কাছে যাব? সে কি সম্ভাবনাময় আমার ভবিষ্যে মেশাবে না সুদূর অতীত?

তবু, বিদিশা, তোমার কাছে যাব আমি। তোমাকে আমার মতো হতাশ নিরাশ লাগে। এই গ্লোবায়িত আলো ছোঁয় প্রকট তোমার আভিজাত্য। অশোকের স্তূপে পুরোনো ফাটল গুনে দিন যায় তোমার। আমারও। নারী, পুরুষ, মানুষ নই আমরা। অতীতের স্মৃতি, কবির ভূগোল।

প্রেম, ভালোবাসা, সহায়...এমন সত্য নেই। তবু, তুমি প্রায়শ কান্নার কথা বলো। আমি এই মুহূর্তের কান্না। তুমি ছড়ানো অতীত আড়ম্বরের প্রশস্ত বর্তমান পরাঘটমান সম্ভাবনার ভবিষ্য। তুমি, বিদিশা, আমার ব্যাপ্তি হও



অবগাহন

শুকনো শাঁকালুর মতো চাঁদ
জোছনায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফাগুনের পোড়ো জলে
এইখানে জল ছুঁয়েছিল তানব ঘাসের ঘাট
আর হাওয়া ঝিরিঝিরি খসখস পাতার ছায়া
ফেলেছিল তরল সে তনুলীলা ঢেউয়ে

জলের উঠোনে নগ্ন গাছের কঙ্কাল রেখা
শামুকের চুন চুন খোলের অভাব
কঠিন জড়ের ঘুমে ঘুমিয়েছে বাসি জোছনার শীতে

ঝিঁঝিঁ ডাকে, মনে পড়ে
তোমার বুকের জলে মুখ রেখে কোনও এক রাতে
মা মা চিৎকারে কেমন তন্ন-তন্ন আমি
খুঁজেছি প্রাচীন জরায়ুর মধ্যে ফেলে আসা
                          আমার অর্ধেক মৃতদেহ



সখ্য

ঘাস-মাখা ডাঙা ভেবে যে কোনও মাতাল
নেমে যাবে
শ্যাওলা-স্নানের দিকে

প্যাক প্যাক জলের পুকুরে
হাঁসের ওলটানো কাদা খোঁচা

গাছ ভেঙে চকরাবকরা আলো
শতমূলী-শার্ত্রোজ ছোপ নিয়ে জেগে

তুমি, পাতিহাঁস, জল কেটে ঘাসে
ঝুলকালি দাগে ওপারে চলেছ—

বালি আর রাবারের দেশে

গোপন সাহসে আমাদের
দু'চোখের সহজাত জল
দাগের দু'পাশে জমা শ্যাওলার সখ্যে ঝরে পড়ে



নারী

প্রেম আরোপিত, খোলা-খাতা
আর নারী— মনে মনে শরীর-প্রবণ—
উহাদের যোগাযোগ সপ্রশ্ন-প্রদীপে,
প্লবতার বৈসাবি-মুখোশে আলো করে আবরণ।

নারীর মতন কাকে খুঁজে ফিরি প্রেমিকার মনে?

ইন্দ্রিয়-আঙুল-তীরে—
আমাকে চেয়ে সে আনে অপরূপ একরাশ মোহ,

নারীকেই পুরোপুরি বোঝা গেল
সমারোহে তাকে পেতে চাওয়া অবৈধ বিদ্রোহ…



বয়স

বড়ো হওয়া এক অদ্ভুত বেদনা— স্মৃতিই সম্বল

সাপের আধ-খাওয়া লাল তেলাকুচো
এড়িয়ে চলার দায়ে কমলা বিকেল নামে

আর সে সময়,
সবুজাভ জলের পুকুরে, বয়স্কা ফড়িং
কচুরিপানার ফুলে ডিম পাড়ে নাকো শীতে

দূষিত শব্দের তাপে
বাঁশবনে পাতা পুড়ে পুড়ে ভাষা তেতে ওঠে

তবু, এই— এসবের মাঝে
তোমাকেও বড়ো হতে দেখে
সাফিনা, আমার বয়স বাড়ার বেদনা ফুরিয়ে যায়



রসভাণ্ড

একটি বিরহ বুঝতে বুঝতে মানুষ আরেকটি বিরহের কোলে মাথা পেতে দেয়। তার বুকের নিচে জমতে থাকে জিওলে আঠা

একটি মানুষকে আপন করতে করতে সে অন্য একজন মানুষ বনে যায়, যার আয়নায় আপাত সবকিছু ঘোলা

নিজের ও বুকে ঝোলা কলসির শূন্য দেখে একটি খেজুর গাছের মাথা— মাটির অধিক হয়ে আকাশের মতো লম্বা হতে থাকে

আবার নিজের অগোছালো বিচ্ছেদে ফিরে সে বোঝে প্রতিটি আসা-যাওয়া একটি ক্ষত থেকে আরেকটি ক্ষতের পথে এগোনো

আর এই ভীষণ শীতের কুয়াশা ও রোদের বৈপরীত্যে— মাজায় দড়ি বাঁধা গ্রামের গাছুয়া পুরোনো ক্ষতের সিঁড়ি বেয়ে রসের ভাঁড় নামিয়ে আনে



বুদ্ধ

ফুটে ওঠো উত্তরে জাগ্রত পদ্মের পরাগ
যেন হেমন্তের সূর্যে শিহরিতো শিশিরের মন

মনে পড়ে হাওয়া আমাকে দোলায় আর
ক্লান্তির কৈটভ ধ্বনি বুকে বিঁধে আনে
                     মায়া-মায়া বিরহের ঘোর
আবিস্ময় দহনের কালে ভেঙে পড়ে সমূহ বিক্ষয়

জৈব ধারণার চাঁদে ফুলে ওঠে প্রেরণার জল
ইতিহাস শাণিত ব্যথায় কখনও প্রগাঢ় ভাটা
প্রতিক্রিয়া-বহুল ঘুমের মধু জাগায় নিঃসাড় জ্বর

মানুষ, না তুমি দেবতা, হে ভগবান?

কেন ভুলে যাই বারবার,
আমি মৃত্যু নির্মিত প্রাণের স্রোত-তাপ-ঢেউ ছুঁয়ে
                 এক অসহায় সমব্যথী প্রাচীন প্রবাল



আপেল

একটি ঘটনা পুনরাবৃত্ত হবে, ধর
একটি যোগচ্ছিন্ন আপেল ফ্রিজে রাখা হলো
রাখা হলো কোটি কোটি বছরের কোলে
সেই নিঃসঙ্গ আপেল
প্রথমে পচন, তারপর বিকার, ক্ষয় পার হয়ে
ধুলো, কণা...ক্রমে বিশুদ্ধ শক্তি হল, তারপর—

তারপর রূপ-রূপান্তরের মায়া, সম্ভাবনার সকল সীমানা ঠেলে
তুমি কোটি কোটি বছর পরে, আবার
যখন সে ফ্রিজ খুললে— দেখা গেল
                                সেই পূর্ব সত্তার আপেলটি—
জ্যামিতির স্মৃতি, স্মৃতির অস্তিত্ব, অস্তিত্বের আকার আর আকারের জ্যামিতি
বুকে বয়ে হাজির হয়েছে ফ্রিজে

তুমি নির্বাক নও। সকালে রেখেছিলে, কেননা জান
এই ফ্রিজ কোটি কোটি বছরের আয়ুষ্মান নয়, নও তুমিও

ফলে সে আপেল খাওয়ার সময় তুমি আমার চোখে
তাকিয়ে বললে— কোথায় ছিলে তুমি?
বাসনায়— বলেছি

বলিনি, কোটি কোটি বছর আমি
একটি আপেল, একটি ফ্রিজ এবং
      একটি এমন নিখুঁত মুহূর্তের জন্য— সসীম
সময়ের বুদ্বুদে তাকিয়ে ছিলাম— তোমার সঙ্গে
সকালে ফ্রিজে রাখা আপেলটি খাওয়ার জন্যে



লালন

অভিভূত জ্যোৎস্নার নায়ক
রমনের অধিকারে রতিবোধ ছেড়ে
নিরুদয় ভোর এনেছিল

এসেছিল সময় ধারণা মতো গোলোযোগ শ্রমণের বেশে
গৃহফেরে গ্লানি আর বেদনার ঘোর

চিঠির সে ঘ্রাণ, ওম খামের দেয়ালে
প্রত্যাশা শীতল জলে বাইনারি তির-তির
কম্পন সহায় শখ মুছে শান্ত সমাগত

স্থির, শুধু জলাশয় ভরাটের মাটি—
তুমি হেঁটে গেলে ধ্বসে যায়

মনে হয় জলে ছায়া ছিল কাল, জৈব-চেতনার চাঁদ
মনে হয়, এই তুমি, অস্বস্তির ভাগ চাষে আবার হঠাৎ
ঢিল ছুঁড়ে দেবে ছল
হিমাকুল শিহরণে সুর আর ছেদ

কবিতা না লিখে কোনও দয়া করিনি, কবিতা
           লিখে কিছু বীরতর প্রচার হব না
লিখে যাব কমাহীন ঘর কত
ভেঙেও ভাঙে না এই জলজ নকশার যতি উচ্চারণ দোষে

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
নববর্ষে সহিংসতার আশঙ্কা মোকাবিলায় নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্ববান
শব্দ দহন
বাঙলা যেভাবে দুঃখী হলো
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৮ এপ্রিল, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (২৮ এপ্রিল, ২০২৫)
যশোরের সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ ৩ আওয়ামী লীগ নেতা আটক
যশোরের সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ ৩ আওয়ামী লীগ নেতা আটক
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে আগুন
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে আগুন
এনসিপি ‘গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি’ গঠন
এনসিপি ‘গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি’ গঠন
সর্বাধিক পঠিত
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও নূরজাহানের পদত্যাগ দাবি
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও নূরজাহানের পদত্যাগ দাবি
রাখাইনে মানবিক সহায়তায় শর্তসাপেক্ষে করিডোর দিতে রাজি সরকার
রাখাইনে মানবিক সহায়তায় শর্তসাপেক্ষে করিডোর দিতে রাজি সরকার
হাইকোর্টে প্রতিবেদন: নিয়ম মেনেই হয়েছিল আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি
হাইকোর্টে প্রতিবেদন: নিয়ম মেনেই হয়েছিল আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি
আবার চালু হচ্ছে পরিত্যক্ত ৭ বিমানবন্দর, সবার আগে বগুড়া
আবার চালু হচ্ছে পরিত্যক্ত ৭ বিমানবন্দর, সবার আগে বগুড়া
মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা, কেড়ে নেওয়া হলো মাইক
মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা, কেড়ে নেওয়া হলো মাইক