প্রশ্ন: আমার বয়স ৩৩ বছর। ৫ বছরের সংসার। আমার স্বামী দোকানে গেলে আগে প্রাইস ট্যাগ দেখে। টাকা খরচ করা নিয়ে বেশ কনসার্ন সে। খুব কঞ্জুস এমন না। দরকারে খরচ করে। কিন্তু খরচ করার পর সেটা নিয়ে আপসেট হয়ে যায়। রেস্তোরাঁয় গেলে দেখে দেখে কম টাকার খাবার অর্ডার দেয়। কিন্তু তার উপার্জন ভালো। হিসাবের বাইরে কোনও খরচ হয়ে গেলে সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে থাকে। কীভাবে এই সমস্যা থেকে বের করবো ওকে?
উত্তর: ১. খোলামেলা আলোচনা করুন: আপনার স্বামী খরচের পর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন, এটা তার মানসিক চাপের ইঙ্গিত দেয়। তাই প্রথমেই তাকে দোষারোপ না করে বা কঞ্জুস না বলে জিজ্ঞাসা করুন তার আর্থিক নিরাপত্তাহীনতার ভয় কাজ করে কিনা, বা অতীতে টাকাপয়সা নিয়ে কোনও খারাপ অভিজ্ঞতা ছিল কিনা। অথবা স্বভাবতই তিনি মিতব্যয়ী কিনা। তার ভেতরের ভয় বা উদ্বেগ থাকলে সেটা সমাধান করা সহজ হবে। আর এটা উনার স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য হলে সমাধান করা কঠিন হবে।
২. একসাথে বাজেট তৈরি করুন: দুজনে মিলে সংসারের একটা বিস্তারিত বাজেট তৈরি করুন। এতে জরুরি খরচের পাশাপাশি বিনোদন, বাইরে খাওয়া বা নিজেদের পছন্দের জিনিসের জন্য একটা নির্দিষ্ট অংশ রাখুন। ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় বা বিনিয়োগের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করুন যা বর্তমান খরচের উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করতে পারে। যখন তিনি দেখবেন যে খরচের জন্য নির্দিষ্ট টাকা বরাদ্দ আছে এবং সেটা আপনাদের পরিকল্পনার মধ্যেই পড়ছে, তখন হয়তো তার দুশ্চিন্তা কিছুটা কমবে।
৩. দাম নয়, গুণের উপর জোর দিতে উৎসাহিত করুন: কেনাকাটার সময় শুধু দামের দিকে না তাকিয়ে জিনিসটার গুণমান, উপযোগিতা বা তা থেকে প্রাপ্ত আনন্দের কথাও তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। মাঝে মাঝে একটু বেশি খরচ করে ভালো মানের জিনিস কিনলে তা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং আখেরে লাভজনক হতে পারে। রেস্তোরাঁয় গেলে শুধু কম দামি খাবার না দেখে, কোন খাবারটা আপনাদের অভিজ্ঞতাকে আরও ভালো করবে, সেদিকে মনোযোগী হতে উৎসাহ দিন।
৪. ছোট ছোট পদক্ষেপে অভ্যস্ত করুন ও সেটার প্রশংসা করুন: শুরুতেই বড় খরচের দিকে না গিয়ে ছোট ছোট কিছু পরিকল্পনা করুন যা আপনাদের বাজেটের মধ্যে, কিন্তু তার কমফোর্ট জোনের বাইরে। যেমন মাসে একবার একটু ভালো রেস্তোরাঁয় খাওয়া বা ছোটখাটো শখের জিনিস কেনা। যখন তিনি আপনার কথা ভেবে বা পরিবারের আনন্দের জন্য একটু খরচ করেন, তখন তার প্রশংসা করুন এবং বলুন যে এতে আপনি কতটা খুশি হয়েছেন। এটা তাকে ইতিবাচক অনুভূতি দেবে।
প্রশ্ন: আমার বয়স ২৮ বছর। চার বছরের প্রেম ছিল। কিন্তু বিয়ের আগে আমার গার্লফ্রেন্ড আমাকে চিট করে। সে অন্য ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়ায়। এরপর থেকে আমি আর বিয়ের জন্য প্রস্তুত হতে পারছি না। এইদিকে বিয়ের জন্য বাসা থেকে চাপ দিচ্ছে। কীভাবে অতীত ভুলবো?
উত্তর: ১. নিজের অনুভূতিকে গুরুত্ব দিন: প্রথমেই বলব, আপনার কষ্ট, রাগ, দুঃখ বা হতাশা- যে অনুভূতিই হোক না কেন, সেটাকে চেপে রাখবেন না। নিজের অনুভূতিগুলোকে বোঝার এবং গ্রহণ করার চেষ্টা করুন। এটা মনে রাখা জরুরি যে, এমন একটা অভিজ্ঞতার পর সেরে উঠতে সময় লাগে এবং এই সময়টা নিজেকে দেওয়া প্রয়োজন। জোর করে ভুলতে চেষ্টা করলে কষ্ট আরও বাড়তে পারে। রাতারাতি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে এমন আশা না করে নিজের প্রতি সদয় হোন এবং ধৈর্য ধরুন।
২. বিশ্বাসঘাতকতাকে সার্বজনীন ভাববেন না বা এটাকে আপনার ব্যর্থতা মনে করবেন না: আপনার প্রাক্তন প্রেমিকা বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বলে সবাই করবেন এমনটা নয়। তাছাড়া আপনার প্রাক্তন প্রেমিকা যা করেছেন, সেটা তার সিদ্ধান্ত এবং তার চরিত্রের প্রতিফলন, আপনার নয়। তিনি আপনাকে ঠকিয়েছেন মানে এই নয় যে আপনার মধ্যে কোনও খামতি ছিল। এই ব্যাপারটা মন থেকে মেনে নিতে পারলে কষ্ট কিছুটা হালকা হতে পারে।
৩. পরিবারের সাথে কথা বলুন: পরিবারের চাপ একটি বাড়তি টেনশন তৈরি করছে। তাদের সাথে শান্তভাবে বসুন এবং আপনার মনের অবস্থা খুলে বলুন। ব্যাখ্যা করুন যে আপনি এখন মানসিকভাবে বিয়ের জন্য প্রস্তুত নন এবং আপনার আরও কিছুটা সময় প্রয়োজন। তাদের বলুন যে আপনি তাদের উদ্বেগ বোঝেন, কিন্তু জোর করে বিয়ে দিলে সেটা ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে না। তাদের কাছে সময় এবং সহানুভুতি চান।
৪. সম্পর্ক থেকে শেখার চেষ্টা করুন: যদিও অভিজ্ঞতাটা খুব খারাপ ছিল, তবুও ভাবার চেষ্টা করুন এই সম্পর্ক থেকে আপনি কী শিখলেন। ভবিষ্যতে আপনি কেমন সঙ্গী চান বা কোন বিষয়গুলো আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তা হয়তো আরও পরিষ্কার হবে। এটা সত্যি যে আপনার সাথে খুব খারাপ একটা ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু এর মানে এই নয় যে আপনার ভবিষ্যৎ অন্ধকার বা সব মানুষই এমন হয়। পৃথিবীতে ভালো মানুষও আছে এবং ভবিষ্যতে আপনার জীবনে ভালো সম্পর্ক আসতেই পারে। আপাতত ভবিষ্যতের কথা ভেবে বেশি চাপ না নিয়ে বর্তমানের উপর মনোযোগ দিন।