প্রোটিন একটি অপরিহার্য মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যা মানবদেহের পেশী ভর এবং বিকাশের জন্য প্রয়োজন। পাশাপাশি কোষের পুনর্জন্ম এবং মেরামতের মতো বিভিন্ন শারীরিক কাজের জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, টিস্যু মেরামত করা ও মন ভালো রাখাও প্রোটিনের কাজ।
প্রোটিন বেশ কয়েকটি অ্যামিনো অ্যাসিডের সংমিশ্রণ থেকে তৈরি হয়। আমাদের শরীরের ২০টি অ্যামিনো অ্যাসিডের প্রয়োজন যার মধ্যে ১১টি আমাদের শরীর দ্বারা সংশ্লেষিত হয়। কিন্তু বাকি ৯টি খাবার থেকেই পূরণ করতে হয় আমাদের। ডায়েট লিস্টে পর্যাপ্ত প্রোটিন না থাকলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে। ভারতীয় পুষ্টিবিদ অবন্তী দেশপান্ডে জানাচ্ছেন পর্যাপ্ত প্রোটিন না খেলে কী ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পেশীর সমস্যা দেখা দিতে পারে
আমাদের পেশীর সুস্থতার জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। শরীর পর্যাপ্ত প্রোটিন না পেলে বিদ্যমান পেশী ভরকে ভেঙে ফেলতে পারে প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর জন্য। এই প্রক্রিয়াটি পেশী ক্ষয় ও দুর্বলতার কারণ হতে পারে।
দুর্বল হয়ে পড়তে পারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
একটি শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম সংক্রমণ এবং অসুস্থতার বিরুদ্ধে শরীরকে রক্ষা করে। অ্যান্টিবডি এবং ইমিউন সিস্টেমের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান উৎপাদন করে প্রোটিন। অপর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণের কারণে অ্যালার্জি এবং সংক্রমণের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে বারবার।
ক্ষত নিরাময় হতে পারে দেরিতে
প্রোটিন টিস্যু মেরামত এবং পুনর্জন্মের প্রক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য। কোলাজেন একটি কাঠামোগত প্রোটিন, নতুন কোষ গঠন এবং ক্ষত নিরাময়ের জন্য অপরিহার্য। প্রোটিন আমাদের শরীরে একটি প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া হ্রাস করে। প্রোটিনের অভাব এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। যার ফলে ক্ষত নিরাময়ে বিলম্ব হয় এবং সংক্রমণের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
ক্লান্তি এবং সাধারণ দুর্বলতা দেখা দিতে পারে
অপর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ আমাদের অঙ্গবিন্যাস এবং নড়াচড়ার দায়িত্বে থাকা পেশীগুলোকে প্রভাবিত করে। পর্যাপ্ত প্রোটিন না খেলে পেশী তার ভর হারায় যা শক্তি হ্রাস করে। এতে আমাদের ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া প্রোটিনের অভাব বিপাককে ধীর করে দেয়। আমাদের রক্তের হিমোগ্লোবিন নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রোটিন দ্বারা গঠিত। প্রোটিনের ঘাটতি হিমোগ্লোবিন কমিয়ে দিতে পারেম এতে ক্লান্তি এবং রক্তশূন্যতায দেখা দেয়।
চুল, ত্বক এবং নখের সমস্যা দেখা দিতে পারে
চুল, ত্বক এবং নখের স্বাস্থ্য এবং প্রাণশক্তির জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। কোলাজেন, ইলাস্টিন এবং কেরাটিন- এই ৩ ধরনের কাঠামোগত প্রোটিন এই টিস্যুতে প্রচুর থাকে যা শক্তি, স্থিতিস্থাপকতা এবং সামগ্রিক সুস্থতায় অবদান রাখে। ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিনের পাশাপাশি নির্দিষ্ট ভিটামিন এবং খনিজ গ্রহণ করতে হবে যা এই প্রক্রিয়াটিকে ঠিক রাখবে।
মেজাজ পরিবর্তন
প্রোটিন বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটারের সংশ্লেষণে অবদান রাখে যা মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে। সেরোটোনিন, ডোপামিন এবং নোরপাইনফ্রাইন- এই তিনটি নিউরোট্রান্সমিটার প্রোটিন গ্রহণের দ্বারা প্রভাবিত হয়। প্রোটিনের ঘাটতি এই নিউরোট্রান্সমিটারের সংশ্লেষণে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে যার ফলে মেজাজের পরিবর্তন, বিরক্তি এবং বিভিন্ন মানসিক রোগের বিকাশ ঘটে।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার হরমোনের ভারসাম্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। শরীরকে হরমোন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে প্রোটিন; যা বিপাক, বৃদ্ধি এবং প্রজনন স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। অপর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ হরমোনের ভারসাম্যকে ব্যাহত করতে পারে।
ওজন এবং চিনির মাত্রায় প্রভাব পড়তে পারে
প্রোটিন খাওয়া রক্ত প্রবাহে গ্লুকোজের শোষণকে ধীর করে দেয়, এতে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার দীর্ঘ সময়ের জন্য পেট ভরিয়ে রাখে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়া এবং ওজন বৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব হয়।
তথ্য: টাইমস অব ইন্ডিয়া