কার্বোহাইড্রেট একটি মৌলিক পুষ্টি যা শরীরকে কাজ করার জন্য শক্তি তৈরি করতে সাহায্য করে। কম কার্ব ডায়েটের ফলে লিভার কিটোন নামক একটি উপাদান তৈরি করে। শরীরে পর্যাপ্ত চিনি না থাকলে চর্বি ভেঙে দেয় উপাদানটি। তবে একেবারেই লো-কার্ব ডায়েটগুলো শরীরে বেশ কিছু ছাপ ফেলে দিতে পারে।
ওজন কমবে
হঠাৎ কার্বোহাইড্রেটের অভাব ওজন হ্রাস করবে। যদিও এটি বেশিরভাগ পানির ওজন। কারণ পেশী থেকে গ্লাইকোজেন কমিয়ে দেয় এটি। গ্লাইকোজেন শরীরকে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। কার্বোহাইড্রেটের সাথে শরীর হারিয়ে ফেলে কিছু লবণও। যখন আবার কার্বোহাইড্রেট খেতে শুরু করবেন, ফিরে আসেবে পানির ওজন। চর্বি ভাঙা শুরু করতে অন্তত ২ থেকে ৩ সপ্তাহ সময় লাগে।
‘কেটো ফ্লু’
দুর্বলতা, ক্লান্তি, মাথা ঘোরা এবং মাথাব্যথায় আক্রান্ত হতে পারেন, যা অনেকটা ফ্লুর উপসর্গের মতো। আরও গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও ঘটতে পারে। যেমন পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং বমি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন; ফল, মটরশুঁটি, শাকসবজি এবং গোটা শস্য থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি না পাওয়ার কারণে এটি হয়।
প্রভাব ফেলতে পারে মস্তিষ্কে
শরীর রক্তে স্বাভাবিক শর্করার মাত্রা বজায় রাখার চেষ্টা করে। এতে মস্তিষ্কে প্রভাব পড়ে। প্রথমে ঘুমাতে কষ্ট হতে পারে। খুব ক্লান্ত বোধ করতে পারেন, যা কিছুক্ষণের জন্য আপনার মস্তিষ্ককে অস্পষ্ট করে তুলবে।
অ্যাসিডিটি ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা হতে পারে
কম কার্ব ডায়েটে ফাইবারও কম থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে তাই। এছাড়াও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। পেট খুব ভরা এবং ব্যথা এমন অনুভূতি হতে পারে। তবে ভালোভাবে হাইড্রেটেড থাকলে এবং পর্যাপ্ত ইলেক্ট্রোলাইট শরীরে থাকলে এই উপসর্গগুলো গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে।
নিঃশ্বাসে গন্ধ হতে পারে
যখন শরীর কার্বোহাইড্রেটের পরিবর্তে ফ্যাটি অ্যাসিডের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তখন এটি নিঃশ্বাসের মাধ্যমে অ্যাসিটোন হিসেবে নির্গত হতে থাকে। বিভিন্ন অদ্ভুত ধরনের গন্ধ হতে পারে নিঃশ্বাসে। এছাড়াও যদি মুখ শুষ্ক থাকে তবে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হতে পারে।
রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যেতে পারে
একটি সুপার লো-কার্ব ডায়েট আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। ডায়াবেটিস থাকলে যদিও এটি ইতিবাচক শরীরের জন্য, কিন্তু সত্যিকারের কেটোসিসে হাইপোগ্লাইসেমিয়া একটি ঝুঁকি। রক্তে শর্করার পরিমাণ খুব কম হয়ে গেলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারেন।
প্রভাব ফেলতে পারে হৃদযন্ত্রের উপর
লো-কার্ব ডায়েটগুলো সাধারণত উচ্চ চর্বিযুক্ত। স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণ ৫ থেকে ৬ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। এসব ডায়েটের ক্ষেত্রে তাই অ্যাভোকাডো, জলপাই এবং বাদামের মতো স্বাস্থ্যকর ফ্যাট গ্রহণ করুন। কেটো, অ্যাটকিনস এবং প্যালিওর মতো ডায়েটে ট্রাইগ্লিসারাইড এবং এইচডিএল (ভালো) কোলেস্টেরলের মাত্রা আরও ভালো হওয়ার সুযোগ থাকে। তবে খারাপ কোলেস্টেরলের বৃদ্ধি হৃদরোগেরও কারণ হতে পারে।
আচরণে প্রভাব পড়তে পারে
স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট একেবারেই না খেলে মনের অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে। আপনি বিরক্ত বোধ করতে পারেন। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা কম-কার্ব ডায়েট অনুসরণ করে তাদের মস্তিষ্কে কম চর্বিযুক্ত খাবারের তুলনায় কম সেরোটোনিন ছিল। স্বাস্থ্যকর সেরোটোনিনের মাত্রা উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে
কম কার্ব ডায়েটে লিভারে প্রক্রিয়া করার জন্য অনেক বেশি চর্বি থাকে। এটি লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
কিডনির সমস্যা আরও বাড়তে পারে
কম কার্ব ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, লাল মাংস বেশি এবং গোটা শস্য কম এমন ডায়েট মেনে চলার ফলে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৯৭ শতাংশ বেশি থাকে।
তথ্য: ওয়েবএমডি