প্রশ্ন: আমার বয়স ২৭। আমি ইইই নিয়ে বিএসসি করেছি ২০১৯ সালে। বাবা-মা অনেক কষ্ট করে আমায় পড়ালেখা করিয়েছেন। আমার বড় দুই বোনের পড়াশোনা ও বিয়ের খরচসহ সুদের টাকার ঋণের কারণে ফসলী জমি ও বাড়িসহ বিক্রি করেও ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে ৫০/৫৫ ঊর্ধ্ব বয়সী বাবা-মা দিন মজুরের কাজ করেন। আমিও ভালো কোনও চাকরি পাচ্ছি না, যেটা করি তা দিয়ে আমার বউ এবং ছোট একটা বাচ্চার খরচ দিতে পারছি না (বিয়ে বাবা মার ইচ্ছেতেই করা)। আমার ট্রাইজেমিনাল নিউরেলজিয়া একটা রোগ আছে (২০২১ থেকে রোগটা দেখা দিয়েছে, আগে ছিল না) যেটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক, মাঝে মাঝে সহ্য করা যায় না। চাকরির জন্য বেশি পড়াশোনা বা বেশি চাপ নিলে বেশি ব্যথা হয়। এমতাবস্থায় বাবা-মা আত্মাীয় স্বজনেরা সবাই ভালো চাকরির জন্য চাপ দিচ্ছে। আমি আমার সাধ্যমতো অনেক চেষ্টা করেও ভালো চাকরি পাচ্ছি না। এখন আমি কী করতে পারি?
উত্তর: আমি বুঝতে পারছি যে আপনি অনেক চাপের মধ্যে আছেন। আপনার মনোবল বাড়ানোর জন্য পরামর্শগুলো অনুসরণ করার চেষ্টা করুন-
১। সময় নিয়ে আপনার বিষয়ে চিন্তা করুন, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শকারীর সাথে কথা বলুন।
২। আপনি যে কাজ করছেন সেটাতে দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করুন, যা আপনার প্রোমোশন বা বেতন বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করতে পারে।
৩। অন্যান্য আয়ের উৎস খুঁজে দেখুন। পার্ট-টাইম চাকরি, ফ্রিল্যান্সিং বা অনলাইন ব্যবসা চেষ্টা করুন।
৪। আপনার ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়ার ব্যথার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা ও পরামর্শ নিন। স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের কৌশল শিখুন। ট্রাইসাইক্লিক এন্টিডিপ্রেসেন্ট এবং বায়োফিজিক্যাল থেরাপি এক্ষেত্রে ভালো কাজ করতে পারে। সেজন্য আপনাকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।
৫। আত্মবিশ্বাস বজায় রাখুন এবং আপনার সাফল্যের জন্য ধৈর্য ধরুন। সবাইকেই জীবনে কোনও না কোন কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। জীবনকে একটি রোমাঞ্চকর চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিন।
৬। আপনার বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে আপনার অসুবিধা নিয়ে কথা বলুন, তাদের বোঝান যে আপনি চেষ্টা করছেন। তাদেরকে সাহস জোগান এবং তাদের থেকে সাহস নিন। আপনার অবস্থা উন্নতির দিকে নিয়ে যাবার জন্য ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যান। পরিবারের সমর্থন ও শান্তির জন্য একটু সময় দিন।
প্রশ্ন: আমি অনেক মানুষের মধ্যে গেলে খুব বিব্রতবোধ করি, আমার হাত পা কাঁপতে থাকে। কীভাবে কথা বলবো, কী কথা বলবো বুঝে উঠতে পারি না। এটা অপরিচিত কারোর সঙ্গে দেখা হলেও হয়। কীভাবে এই সমস্যা দূর করবো?
উত্তর: আপনার বর্ণিত অবস্থা সামাজিক আশঙ্কা বা আতঙ্কের (সোশ্যাল অ্যাংজাইটি বা সোশ্যাল ফোবিয়া) কারণে হয়েছে। এই সমস্যা দূর করার জন্য আপনি কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন-
১। শ্বাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। শ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনি আপনার প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। মনে মনে ১-২-৩-৪ গুণতে গুণতে গভীর শ্বাস নিন। তারপর মনে মনে ১-২-৩-৪ গুণতে গুণতে শ্বাস ধরে রাখুন। সবশেষে মনে মনে ১-২-৩-৪-৫-৬ গুণতে গুণতে পেট ভেতর দিকে টেনে নাক দিয়েই ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। যখনই মনে হবে তখন একটানা কয়েকবার এরকম করুন।
২। অনেক সময় অনুশীলন এবং অভিজ্ঞতা বিভিন্ন সামাজিক অবস্থানে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য সাহায্য করে। পরিচিত মানুষের সাথে কথোপকথনের অনুশীলন করুন। ধীরে ধীরে বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতিতে অংশ নিন।
৩। সামাজিক দক্ষতা উন্নয়ন করুন। ক্ষুদ্র সামাজিক সংলগ্নতা বাড়ানোর মাধ্যমে সামাজিক দক্ষতা শিখুন এবং আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়ান।
৪। পরিস্থিতির সাথে যুক্তি ভিত্তিক বিশ্লেষণ করে দেখুন এবং সম্ভাব্য ফলাফল বিবেচনা করুন।
৫। নিরপেক্ষ আত্মমূল্যায়ন জরুরি। নিজের ইতিবাচক ও নেতিবাচক সকল চিন্তা ও বৈশিষ্ট্যকে সমানভাবে মেনে নিন এবং ভালো দিকগুলোর ওপর মনোনিবেশ করুন।
৬। পরিস্থিতিত মেনে নেওয়া হতে পারে একটা সমাধান। সবাই ভুল করে, কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। তাই সবার সামনে ভুল হলে সেটি স্বীকার করুন এবং নিজেকে দোষারোপ না করে সমর্থন দিন।
৭। যদি এই সমস্যা গুরুতর হয়, তবে একজন মানসিক চিকিৎসকের সাথে দেখা করার পরামর্শ দেওয়া হলো।