X
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
৫ বৈশাখ ১৪৩২

বড়দিনের উৎসবে কেক থাকে কেন?

জীবনযাপন ডেস্ক
২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯:১১আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯:১১

ক্রিসমাস ট্রি, সান্তাক্লস ছাড়া যেমন বড়দিনের উৎসবের কথা চিন্তা করা যায় না, তেমনি কেক ছাড়াও বড়দিন উদযাপন অসম্পূর্ণ। কীভাবে এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লো কেক? সেটা জানার আগে কেকের ইতিহাসের দিকে একটু নজর দিই চলুন।

‘দ্য অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি’ অনুযায়ী, কেক কথাটির খোঁজ পাওয়া যায় ১৩ শতকে। পুঁথিপত্র অনুযায়ী, প্রাচীন নোরস বা স্ক্যান্ডেনেভিয়ান শব্দ ‘কাকা’ থেকেই এসেছে কেক কথাটি। তবে সেই কেকের থেকে আজকের কেক পুরোপুরি আলাদা। তখন কেক ছিল মূলত পাউরুটি। তার স্বাদ মিষ্টি করা হতো মধু দিয়ে। কখনও কখনও থাকত বাদাম, কিসমিস বা অন্যান্য শুকনা ফল। মধ্যযুগে ইউরোপের বেকারিগুলোতে মাঝে মাঝে ফ্রুতকেক ও জিঞ্জারব্রেড বানানো হতো। সেসব কেক কয়েক মাসেও নষ্ট হতো না।

বড়দিনের উৎসবে কেক থাকে কেন?

আজকের এই কেকের শুরু ১৭ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপের বেকারিতে। তখন কাঠ বা ধাতুর বেকিং ট্রে ব্যবহার শুরু হয়। দরকার মতো সেগুলো ছোট বড় করা যেত। মাঝে মাঝে কেক প্যান ব্যবহার করা হতো। কখনও কখনও কেক প্যানও ব্যবহার করা হতো। ওই সময় চিনির গুঁড়া, ডিমের সাদা অংশ ও সুগন্ধি মিশ্রণ ফুটিয়ে কেক সাজানো বা আইসিং করা হত।

১৮৪০ সালে বেকিং পাউডার আবিষ্কার হলে কেক তৈরি অনেক সহজ হয়ে যায়। কেকের মিশ্রণকে ইস্টের পরিবর্তে বেকিং পাউডার দিয়ে সহজেই ফারমেন্ট করা সম্ভব হয়। তবে সেই কেকও আজকের কেকের সমতুল্য ছিল না। আজকের কেক আসতে অপেক্ষা করতে হয় উনিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত। বিশ শতকের প্রথম কয়েক দশক পর্যন্ত কেকে বয়েলড আইসিংয়ের বদলে আমেরিকান বাটার ক্রিম ফ্রস্টিং ব্যবহৃত হত। সেই ফ্রস্টিং তৈরি করা হতো বাটার, ক্রিম, চিনির মিহি গুঁড়া এবং বিভিন্ন ফুড ফ্লেভার দিয়ে। ‘দ্য ক্যাসেলস নিউ ইউনিভার্সাল কুকারি বুক' (লন্ডন ১৮৯৪)-এ লেয়ার কেকের এক নতুন রেসিপি পাওয়া যায়। ওই রেসিপি ছিল তখনকার রেসিপির থেকে অনেকটাই আলাদা। তার আগে পর্যন্ত ফ্রান্সের অ্যান্টোনিন ক্যারিমকে বলা হতো কেকের বিশিষ্ট শেফ।

আগে পাউরুটি, কেক বানানো হতো হাতের সাহায্যে। সাধারণত রুটি তৈরির সময় যেভাবে আটা বা ময়দার বল বানানো হয়, ঠিক সেভাবে তা বানিয়ে বেলন দিয়ে একটু বেলে বা হাত দিয়ে টিপে তাওয়া কিংবা প্যানে বসানো হতো। গোল তাওয়ায় গোটা কেকের সবটুকু অংশ ভালোভাবে সেঁকা যেত। সে কারণে ওই সময় থেকেই কেকের আকার গোল হয়ে আসছে। পরবর্তীতে প্যান বা তাওয়ার বদলে ছাঁচ ব্যবহার শুরু হয়। সেই ছাঁচগুলোর আকারও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছিল গোল। যে কারণে এখনও বেশিরভাগ কেকের আকার হয় গোল।

ক্যালেন্ডারে ক্রিসমাস বা বড়দিনের কেকের একটা আলাদা অবস্থান রয়েছে। ইতিহাস বলছে, ৩৩৬ সালে রোমান সম্রাট কনস্টানটাইনের আমলে প্রথম ক্রিসমাস পালন করা হয়। ক্রিসমাসে কেক খাওয়ার রীতি অবশ্য শুরু হয় তারও অনেক পরে। ক্রিসমাসে কেক বানানো ও খাওয়ার ঐতিহ্য মূলত ইংরেজদের। তবে ক্রিসমাস পালন যখন শুরু হয়, তখন কেক ছিল না। ছিল প্লাম পরিজ। সেই সময় ক্রিসমাসের আগের দিন উপবাস করার নিয়ম ছিল। একদিন উপবাসের পরে বড়দিনের ঠিক আগে ইংরেজরা উপবাস ভাঙতেন পরিজ খেয়ে। কারণ বেশ কয়েক ঘন্টা খালি পেটের পর ভারি খাবার পেটে পড়লে শরীর খারাপ হতে পারে কিন্তু পরিজ খেলে সেটা হবে না। সেই রীতি চলে বেশ কিছু কাল। এরপর পরিজের মিশ্রণে শুকনো ফল, মসলা ও মধু মিশিয়ে সেটি ক্রিসমাস পুডিংয়ের আকার নেয়।

বড়দিনের উৎসবে কেক থাকে কেন?

১৬ শতকে ক্রিসমাসের কেক বা পুডিংয়ের রেসিপি থেকে ওটমিল বাদ যায়, তার পরিবর্তে মাখন, ময়দা ও ডিম যোগ হয়। এই উপকরণগুলো যোগ হওয়াতে পরবর্তীতে প্লাম কেক তৈরি করা সহজ হয়ে যায়। এরপর যে সব পরিবারে ওভেন ছিল, তারা ইস্টারের জন্য মারজিপ্যান বা অ্যালমন্ড সুগার পেস্ট ব্যবহার করে ফ্রুট কেক তৈরি করতে শুরু করে। আর বড়দিনের আগে শুকনো ফল ও মসলা ব্যবহার করে কেক। এই কেকগুলোই কালক্রমে ‘ক্রিসমাস কেক’ নামে পরিচিতি পায়। ইংরেজদের ক্রিসমাস কেকের ভেতরে আবার রামে ভেজানো কারেন্টস ও কিশমিশ থাকে। স্কটিশ ক্রিসমাস কেক ‘হুইস্কি ডান্ডি’ নামে পরিচিত। এই কেকের উৎস ডান্ডি এবং তাতে স্কটিশ হুইস্কি থাকে বলে এইরকম নামকরণ। ফ্রান্স ও লেবাননের ট্র্যাডিশনাল ক্রিসমাস কেকের নাম ‘বুশ ডি নোয়েল’। এতে কোনও ফল থাকে না। ইংল্যান্ডে বড়দিনে ‘ইউল লগ’ বা ‘চকোলেট লগ’ নামে কেক খাওয়ার রীতি রয়েছে। জার্মানে স্টোলেন নামের ফ্রুটকেক জনপ্রিয়। ক্রিসমাসে যা ক্রিস্টোস্টোলেন নামে পরিচিত। ইতালিতে বড়দিনে প্যানেটোন নামে এক বিশেষ ধরনের কেক বানানো হয়। এর স্বাদ একটু টক। সাইপ্রাসের বড়দিনে স্থানীয় মানুষ অতিথিদের সাইপ্রিয়ট কেক খাইয়ে থাকেন। আমেরিকায় কেউ কেউ বড়দিনে ফ্রুট কেক উপহার দিয়ে থাকেন। জাপানের ক্রিসমাস কেক ফ্রস্টেড স্পঞ্জি। এতে থাকে স্ট্রবেরি, চকোলেট আর ফল।

তথ্য: রিডার্স ডাইজেস্ট, এশিয়ান নিউজ ও দ্য ফুড টাইমলাইন 

/এনএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জাফরুর নতুন কমিটি: অডেন সভাপতি ও আকতারুল সাধারণ সম্পাদক
জাফরুর নতুন কমিটি: অডেন সভাপতি ও আকতারুল সাধারণ সম্পাদক
এবার হজে যাবেন ৮৭ হাজার জন, নেওয়া হচ্ছে যেসব ব্যবস্থা
এবার হজে যাবেন ৮৭ হাজার জন, নেওয়া হচ্ছে যেসব ব্যবস্থা
এক সপ্তাহে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ৩৯০
এক সপ্তাহে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ৩৯০
অমীমাংসিত ইস্যুগুলোতে নীরব পাকিস্তান
অমীমাংসিত ইস্যুগুলোতে নীরব পাকিস্তান
সর্বাধিক পঠিত
পরীক্ষা ভালো হয়নি, বাড়ি ফেরার পর ঘরে এসএসসি পরীক্ষার্থীর লাশ
পরীক্ষা ভালো হয়নি, বাড়ি ফেরার পর ঘরে এসএসসি পরীক্ষার্থীর লাশ
টিপকাণ্ডে ১৮ জনের বিরুদ্ধে সেই কনস্টেবলের মামলা
টিপকাণ্ডে ১৮ জনের বিরুদ্ধে সেই কনস্টেবলের মামলা
সন্তান বিক্রি করে জুয়েলারি ও মোবাইল কিনেছেন মা
সন্তান বিক্রি করে জুয়েলারি ও মোবাইল কিনেছেন মা
‘বাবা বাইরে মা ঘুমিয়ে’, দুই শিশুসন্তানকে কুপিয়ে হত্যা করলো দুর্বৃত্তরা
‘বাবা বাইরে মা ঘুমিয়ে’, দুই শিশুসন্তানকে কুপিয়ে হত্যা করলো দুর্বৃত্তরা
জাতীয় পুরস্কারের সম্ভাব্য তালিকায় যারা
জাতীয় পুরস্কারের সম্ভাব্য তালিকায় যারা