X
সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
১৫ বৈশাখ ১৪৩২

পর্যটকদের দেখা নেই মৌলভীবাজারে

সাইফুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
১১ জুলাই ২০২০, ২৩:৩০আপডেট : ১১ জুলাই ২০২০, ২৩:৩৪

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান পর্যটনের ভরা মৌসুম এখন। তবে অন্যান্য বছরের মতো এবার মৌলভীবাজারে ভ্রমণপ্রেমীদের সমাগম নেই। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এই পর্যটন নগরীর দর্শনীয় স্থানগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। এসব কারণে গত চার মাসে পর্যটন খাতে কয়েক কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছরের মধ্য নভেম্বর থেকে জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত ভরা পর্যটন মৌসুম। এ সময় ভ্রমণপিয়াসীদের সমাগমে মুখর থাকে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিদিনই বেড়াতে আসে অন্তত ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। কিন্তু গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দেখা নেই। তাই ধস নেমেছে পর্যটন খাতে।

শ্রীমঙ্গলের চা বাগান জানা গেছে, হোটেল-মোটেল খোলার ব্যাপারে জেলা প্রশাসন এখনও কোনও নির্দেশনা দেয়নি। অবশ্য সরকারি বিধিনিষেধ শিথিল হলেও পর্যটকরা বেড়াতে না আসায় মন্দাবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এমন পরিস্থিতি বিরাজ করলে লোকসানের অঙ্ক বাড়তে থাকবে।

মৌলভীবাজারের হোটেল ও রিসোর্টের অধিকাংশই শ্রীমঙ্গল উপজেলায়। পর্যটন গন্তব্য হিসেবে এই জায়গা বেশ জনপ্রিয়। এখানে আছে প্রায় ১০০টি হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, রিসোর্ট ও কটেজ। এর মধ্যে পাঁচতারকা হোটেল দুটি এবং তিন তারকা মানের রিসোর্ট পাঁচটির বেশি।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সরেজমিনে দেখা যায়– লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, টি-বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন শ্রীমঙ্গল বিটিআরআই চা বাগান, বধ্যভূমি ৭১, সাত লেয়ারের চা, বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, বাইক্কা বিল হাইল হাওর, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, হাকালুকি হাওর ইত্যাদি দর্শনীয় স্থানে পর্যটকদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে।

এছাড়া সদর উপজেলার মোকামবাজার এলাকায় অবস্থিত পাঁচতারকা মানের দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা, শ্রীমঙ্গল উপজেলার গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ, টি-বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন শ্রীমঙ্গল টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়াম, লেমন গার্ডেন রিসোর্ট, নভেম ইকো রিসোর্ট, টি হ্যাভেন রিসোর্ট, বালিশিরা রিসোর্টসহ অধিকাংশ হোটেল-মোটেল বন্ধের পর এখনও খোলেনি।

শ্রীমঙ্গলের রাধানগরে অবস্থিত গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার আরমান খান মনে করেন, করোনার কারণে পর্যটন খাতে লোকসান কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। একই মন্তব্য করেছেন লেমন গার্ডেনের পরিচালক সেলিম আহমদ। তিনি ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসায় নেমে এখন হতাশ।

গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ লোকসান গুনতে গিয়ে ভানুগাছ এলাকায় অবস্থিত ‘লাউয়াছড়া ইকো কটেজ’ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন এর স্বত্বাধিকারী মো. সাইফুল ইসলাম। তার কথায়, ‘শুধু হোটেল-মোটেল নয়, জেলার কৃষিপণ্য ও চা ব্যবসা পর্যটন খাতের ওপর নির্ভরশীল। পর্যটকরাই শ্রীমঙ্গলের লেবু, আনারস, চা ও মণিপুরী শাড়িসহ হাতে বানানো বিভিন্ন সামগ্রীর মূল ক্রেতা। কিন্তু কোভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাবে সবখানে মন্দাবস্থা।’

একই তথ্য দিলেন শ্রীমঙ্গলের ব্যবসায়ী মো. শাহেদ আহমদ, ‘এখানকার অধিকাংশ ব্যবসায়ী চা, কৃষি ও পর্যটনের ওপর নির্ভর করেন। খাবার হোটেল থেকে শুরু করে মিষ্টির দোকান, পর্যটক না থাকলে কোথাও ব্যবসা হয় না। হোটেল বন্ধ থাকলে কৃষি দ্রব্য ও চা সরবরাহকারীদের ব্যবসা থেমে যায়। মুরগি, মাংস, মাছ ও চাল ব্যবসায়ী, মুদি দোকানিসহ আরও অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন করোনায়।’

শ্রীমঙ্গলের চা বাগানে ভেতর সিমেট্রি শ্রীমঙ্গল ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খালেদ আহমদ নিশ্চিত করেন, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায় ৪৭ জন ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড আছেন, যাদের মধ্যে ২১ জন শুধু এই কাজই করেন। তারা পর্যটন বোর্ড থেকে কিছু প্রণোদনা পেয়েছেন।

তবে প্রণোদনা না পাওয়ার দাবি করেছেন শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সীতেশ রঞ্জন দেব। তিনি বলেন, ‘চার মাস ধরে পশু খাদ্য ও কর্মচারীদের বেতন দিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫-৬ লাখ টাকা লোকসান হয়ে গেছে। কিন্তু সরকারিভাবে কোনও প্রণোদনা পাইনি। এভাবে চলতে থাকলে টিকে থাকা যাবে না।’

শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন শ্রীমঙ্গলের ট্যুর অপারেটর রিজভীর কথায়, ‘করোনার নেতিবাচক প্রভাবে পর্যটন খাত থমকে গেছে। জেলায় সরকারি-বেসরকারি মিলে প্রায় ১০০টি হোটেল-রিসোর্ট আছে, এর মধ্যে বেশিরভাগই শ্রীমঙ্গলে। এগুলোর ওপর কয়েকশ’ মানুষ নির্ভরশীল। তারা এখন কর্মহীন হয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।’

মৌলভীবাজার জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রীমঙ্গল উপজেলা সভাপতি ময়না মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় তাদের ১ হাজার ৩৭০ জন নিবন্ধিত শ্রমিক আছেন। তাদের মধ্যে ৬০০-৭০০ জন কার, মাইক্রোবাস, জিপ বা অন্য বাহনের চালক। করোনাভাইরাসের কারণে এতদিন যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এখন বিধিনিষেধ শিথিল হলেও পর্যটক না থাকায় তাদের দুর্দিন কাটছে না।

জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই জেলা দেশের পর্যটন শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখানে পর্যটন নির্ভর লোকের সংখ্যা বেশি। লকডাউনের কারণে ক্ষতির মুখে পড়া পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সহায়তার বিষয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন দফতরে অবহিত করা হবে। সরকারের নির্দেশনা পেলে মৌলভীবাজার জেলায় হোটেল-মোটেল খোলার নির্দেশনা দেওয়া হবে।’

মৌলভীবাজারের ২১তম জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দিয়েছেন মীর নাহিদ আহসান। নতুন পদে এসে তার অনুভূতিতে, “চারপাশে চা বাগান দেখে মনে হচ্ছে সবুজের অবারিত মাঠ। এটাকে বলা যায় ‘সবুজ সমুদ্র’। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে আশা করি আবারও এখানকার পর্যটন চাঙা হবে।”


/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
স্টারলিংকের লাইসেন্স অনুমোদন দিলেন প্রধান উপদেষ্টা
স্টারলিংকের লাইসেন্স অনুমোদন দিলেন প্রধান উপদেষ্টা
পান্তকে এবার ২৪ লাখ রুপি জরিমানা
পান্তকে এবার ২৪ লাখ রুপি জরিমানা
চার জেলায় বজ্রাঘাতে ১০ জনের মৃত্যু
চার জেলায় বজ্রাঘাতে ১০ জনের মৃত্যু
বাংলাদেশের গ্রুপে কঠিন প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া
বাংলাদেশের গ্রুপে কঠিন প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া
সর্বাধিক পঠিত
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন মোদি: আল জাজিরাকে ড. ইউনূস
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন মোদি: আল জাজিরাকে ড. ইউনূস
রিজার্ভ আরও বাড়লো
রিজার্ভ আরও বাড়লো
‘আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই, শুধু আ.লীগ করে বলে মাইরা ফেলাইছে’
‘আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই, শুধু আ.লীগ করে বলে মাইরা ফেলাইছে’
ইউআইইউ বন্ধ ঘোষণা
ইউআইইউ বন্ধ ঘোষণা
প্রশাসনে অস্থিরতা কাটছেই না, বাড়ছে ক্ষোভ-অসন্তোষ
প্রশাসনে অস্থিরতা কাটছেই না, বাড়ছে ক্ষোভ-অসন্তোষ