X
সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
১৫ বৈশাখ ১৪৩২

‘দেশে ৫ লাখ শিশু টিকার পূর্ণ-ডোজ সময়মতো পায় না’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৫১আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৫১

‘বিশ্ব টিকাদান সপ্তাহ- ২০২৫’ এর শুরুতে ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স গ্যাভি সতর্ক করেছে যে, শিশুদের টিকা প্রদানের হার বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বড় অগ্রগতি অর্জন করলেও এখনও উল্লেখযোগ্য ব্যবধান রয়ে গেছে। এতে করে প্রায় পাঁচ লাখ শিশুর অবস্থা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী,  দেশের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও ৪ লাখের মতো শিশু ঠিকমতো সব টিকা পায়নি এবং ৭০ হাজার শিশু একেবারেই টিকা পায়নি।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) এক যৌথ বিবৃতিতে একথা জানায় তারা।

এক্ষেত্রে শহর অঞ্চলগুলোতে টিকা না পাওয়ার হার বেশি— মাত্র ৭৯ শতাংশ পুরোপুরি টিকা পেয়েছে, ২ দশমিক ৪ শতাংশ এক ডোজ টিকাও পায়নি এবং ৯ দশমিক ৮ শতাংশ টিকার সব ডোজ ঠিকমতন পায়নি। সেই তুলনায় গ্রামাঞ্চলে ৮৫ শতাংশ শিশু টিকার সব ডোজ পেয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি (ওআইসি) স্ট্যানলি গোয়াভুয়া বলেন, ‘১৯৭৯ সালে ইপিআই চালু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। সব ডোজ টিকা গ্রহণের হার মাত্র ২ শতাংশ থেকে ৮১ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এই সফলতা সরকারের জোরালো প্রতিশ্রুতি এবং অংশীজন, এনজিও ও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত স্বাস্থ্যকর্মীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টাকে তুলে ধরে। কিন্তু চূড়ান্ত সফলতার জন্য শেষের পথটুকু পাড়ি দেওয়া সবচেয়ে কঠিন। প্রতিটি শিশু ও নারীর কাছে পৌঁছানোর জন্য, বিশেষ করে প্রত্যন্ত এলাকা ও শহরের দরিদ্র এলাকাগুলোতে, দরকার পুনরায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ, জোরালো প্রচেষ্টা এবং বাড়তি বিনিয়োগ।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচিকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা অব্যাহত রাখবে ইউনিসেফ। এই সহায়তা দেওয়া হবে পরিকল্পনা প্রণয়নে কারিগরি সহায়তা প্রদান, সরবরাহ ব্যবস্থা, সংরক্ষণ ব্যবস্থা (কোল্ড চেইন), ডিজিটাল উদ্ভাবন ও চাহিদা পূরণের মাধ্যমে।’

বাংলাদেশে ইপিআইয়ের কারণে বর্তমানে প্রতি বছর আনুমানিক ৯৪ হাজার মানুষের জীবন রক্ষা পাচ্ছে এবং ৫০ লাখ শিশুর অসুস্থতা প্রতিরোধ করা যাচ্ছে। এখানে প্রতি ১ মার্কিন ডলার বিনিয়োগের ফলে ২৫ ডলার ফেরত আসছে, যা সত্যিই সন্তোষজনক বলে মনে করে সংস্থাগুলো। তারা বলছে,  অবশ্য প্রতিটি শিশুকে টিকা প্রদান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। একেবারেই টিকা না পাওয়া ৭০ হাজার এবং টিকার সব ডোজ ঠিকমত না পাওয়া ৪ লাখ শিশুর কাছে পৌঁছানো জরুরি, যেহেতু তারা স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে প্রতিরোধযোগ্য শিশু মৃত্যুর ক্ষেত্রে একটি বড় কারণ হয়ে থাকে। এসব শিশু প্রায়ই নানাবিধ জটিলতার মুখোমুখি হয়ে থাকে— দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব এবং স্বাস্থ্য সেবার সীমিত সুযোগ। সবাইকে টিকার সব ডোজ সময়মতন দেওয়ার লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে যেমন- জনবলের ঘাটতি, শহরের বস্তিগুলোতে বড় সংখ্যায় টিকা না পাওয়া, প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে পৌঁছাতে নানা বাধা এবং গ্যাভির সহায়তার ক্ষেত্রে আসন্ন পরিবর্তন, যার অর্থ সরকারকে তার জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির জন্য নিজস্ব সম্পদ দিয়ে সব কিছু পরিচালনা করতে হবে। এর মধ্যে অর্থায়ন, টিকা কেনা, নীতি সহায়তা, সংরক্ষণের সরঞ্জাম (কোল্ড চেইন ইক্যুপমেন্ট), টিকা প্রদানের মতো কার্যক্রম রয়েছে। আর এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন জরুরি পদক্ষেপ।

বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডা. আহমেদ জামশেদ মোহাম্মদ বলেন, ‘বিশ্ব টিকা সপ্তাহ পালনের এই সময়ে আমরা মানুষের জীবন রক্ষাকারী ও জনস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপাদানের অন্যতম টিকার শক্তি দিয়ে স্বাস্থ্য সেবাকে এগিয়ে নেওয়া, সেবা প্রদান ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি। অনেক সংকটের মধ্যেও টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীদের নিবেদন এবং অংশীজনদের সহায়তার ভূমিকাকে প্রতিফলিত করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মানবিকভাবে সম্ভব: সকলের জন্য টিকাদান’ এ বছরের এই প্রতিপাদ্য একসঙ্গে মিলে আমরা যেটা অর্জন করতে পারি, তা আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়। প্রতিটি শিশুকে টিকার আওতায় আনার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই উদ্ভাবন, আরও বেশি শিশুর কাছে পৌঁছানো এবং জোরদার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে।

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি শিশুর জন্য টিকা পাওয়ার সমান সুযোগ নিশ্চিত, একটি স্বাস্থ্যকর জীবন এবং আরও অভিঘাত সহিষ্ণু ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ডব্লিউএইচও গর্বের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ও অংশীদারদের পাশে রয়েছে।’

শুরু থেকে বাংলাদেশে টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে ইউনিসেফ একটি প্রধান অংশীদার হিসেবে ভূমিকা রেখে এসেছে— পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা, সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যবস্থাপনা, টিকা কেনা, তথ্য ব্যবস্থাপনা ও কমিউনিটির সম্পৃক্ততা সব ক্ষেত্রে ইউনিসেফের ভূমিকা রয়েছে। কার্যকর রিয়েল-টাইম (ঘটনাকালীন) মনিটরিংয়ের জন্য উদ্ভাবনী টুল এবং নিজে নিবন্ধন করার মতো বিষয়গুলো টিকাদান কর্মসূচিকে আরও বিস্তৃত ও কার্যকর করতে সহায়তা করেছে।’

গ্যাভি বাংলাদেশে  ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে পোলিও, হাম, রুবেলা এবং রোটাভাইরাসের মতো রোগগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য রুটিন টিকাদান কর্মসূচিতে সহায়তা করে চলেছে । ২০২৩ সালে বাংলাদেশ গ্যাভির সহায়তায়  জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য ১০-১৪ বছর বয়সী ৭০ লাখেরও ও বেশি মেয়েকে লক্ষ্য করে এক-ডোজ হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) ভ্যাকসিন চালু করেছে। গ্যাভির অনন্য সহ-অর্থায়ন মডেলের মাধ্যমে, একটি দেশের আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের ভ্যাকসিন কর্মসূচির সম্পূর্ণ খরচ মেটাতে তাদের নিজস্ব অর্থায়নের পরিমানও বৃদ্ধি পায়।

গ্যাভি, দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের আঞ্চলিক প্রধান (কোর কান্ট্রিজ) স্যাম মুলের বলেন, ‘বাংলাদেশ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে যে বাস্তব প্রভাব দেখা গেছে ও অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, সেটা যদি আমরা ধরে রাখতে চাই— তাহলে স্বাস্থ্য নিরাপত্তার উন্নয়ন ও মানুষকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধযোগ্য রোগ থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য টিকাদানে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তা এখন আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, গ্যাভি তার পরবর্তী কৌশলগত পর্ব ২০২৬ থেকে ২০৩০ এর জন্য পরিপূর্ণভাবে তহবিলপ্রাপ্ত এবং বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো টিকার জীবনরক্ষাকারী ক্ষমতার প্রতি তাদের উল্লেখযোগ্য অঙ্গীকার অব্যাহত রেখেছে। প্রতিরোধযোগ্য রোগ-ব্যাধি বা রোগের প্রাদুর্ভাবের জন্য সহায়ক পরিবেশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যে অগ্রগতি অর্জন করেছি, সেটা আমরা হারাতে পারি না।’  

ইউনিসেফ, ডব্লিউএইচও ও গ্যাভি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি জোরদার ও টেকসই জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি নিশ্চিতের আহ্বান জানাচ্ছে— যেখানে জনবল ও পর্যাপ্ত বরাদ্দ, শহরে টিকা প্রদানের ঘাটতি পূরণে অগ্রাধিকার প্রদান,   টিকা সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, এইচপিভি টিকাদান আরও জোরালো করা এবং আরও ভালো মনিটরিং ও সবার কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে ডিজিটাল উদ্ভাবন সম্প্রসারণের জন্য উচ্চমাত্রার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করতে হবে। এসব পদক্ষেপ নিলে সারা দেশে কোনও শিশুকে টিকা প্রদান থেকে বাদ না রেখে ৯৫ শতাংশের বেশি টিকা দানের লক্ষ্য অর্জনের পরিবেশ তৈরি হবে। এই বিশ্ব টিকাদান সপ্তাহে গ্যাভি, ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিকা দিয়ে প্রতিরোধযোগ্য রোগগুলো থেকে প্রতিটি শিশুকে সুরক্ষা প্রদানের মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্যকর, আরও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করে দিতে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তার জন্য তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

/এসও/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির অন্যতম প্রতিবন্ধকতা জনবলের ঘাটতি: গবেষণা
১২ বছরে উন্নতি নেই, টিকা বঞ্চিত দেশের ১৬ শতাংশ শিশু
ওমরাহ যাত্রীদের টিকা সরকারিভাবে পাওয়া যাবে যেখানে
সর্বশেষ খবর
বজ্রপাতে ১৭ জনের মৃত্যু, এসএসটিএএফ’র উদ্বেগ
বজ্রপাতে ১৭ জনের মৃত্যু, এসএসটিএএফ’র উদ্বেগ
আমরা গাজা হতে চাই না, সংস্কার কী বুঝি না, নির্বাচনের রোডম্যাপ দেন: মির্জা ফখরুল
আমরা গাজা হতে চাই না, সংস্কার কী বুঝি না, নির্বাচনের রোডম্যাপ দেন: মির্জা ফখরুল
স্পেন-পর্তুগালে বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিপর্যয়, অচল জনজীবন
স্পেন-পর্তুগালে বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিপর্যয়, অচল জনজীবন
মানবিক করিডোরের জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে সরকার
মানবিক করিডোরের জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে সরকার
সর্বাধিক পঠিত
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন মোদি: আল জাজিরাকে ড. ইউনূস
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন মোদি: আল জাজিরাকে ড. ইউনূস
‘আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই, শুধু আ.লীগ করে বলে মাইরা ফেলাইছে’
‘আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই, শুধু আ.লীগ করে বলে মাইরা ফেলাইছে’
ইউআইইউ বন্ধ ঘোষণা
ইউআইইউ বন্ধ ঘোষণা
প্রশাসনে অস্থিরতা কাটছেই না, বাড়ছে ক্ষোভ-অসন্তোষ
প্রশাসনে অস্থিরতা কাটছেই না, বাড়ছে ক্ষোভ-অসন্তোষ
ধর্ষণের অভিযোগে ইমামকে গণপিটুনি, কারাগারে মৃত্যু
ধর্ষণের অভিযোগে ইমামকে গণপিটুনি, কারাগারে মৃত্যু