অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের বিএমডিসি নিবন্ধন বাতিল করতে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে (বিএমডিসি) নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দেড় বছর আগে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে অ্যান্ডোসকপির সময় এক প্রকৌশলীর মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে ডা. স্বপ্নীলের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়ায় সম্প্রতি এই নির্দেশ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এই সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়ে বিএমডিসির রেজিস্ট্রার লিয়াকত আলী জানিয়েছেন, কমিটি দ্রুতই তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন। এছাড়া আলাদা এক চিঠিতে ল্যাবএইডের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে ডা. স্বপ্নীলের কাছে অ্যান্ডোসকপি করাতে গিয়ে ২০২৩ সালের নভেম্বরে মারা যান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী আফসার আহমেদ। এই মৃত্যুর জন্য ডা. মামুন আল মাহতাবের গাফিলতিকে দায়ী করে তার বিচার চেয়ে গত বছরের ২৪ মার্চ আফসারের ছোট ভাই খায়রুল বাশার তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের কাছে আবেদন করেছিলেন। এর এক বছর পর গত ১৬ জানুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্ষিয়ে চিঠি পাঠানো হয় বিএমডিসিতে। ওই চিঠিতে ডা. স্বপ্নীলের নিবন্ধন বাতিলের পদক্ষেপ নিতে বলা হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে প্রকৌশলী আফসারের মৃত্যুতে স্বাস্থ্য অধিদফতর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার কথা জানানো হয়। সে তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাবের (স্বপ্নীল) বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়।
বিএমডিসি রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. লিয়াকত হোসেন চিঠি প্রসঙ্গে জানান, এক্ষুণি কিছু বলা যাচ্ছে না, একটু সময় দিতে হবে। এখনও আমাদের অফিসিয়াল কাজ শেষ হয়নি। সামনের নির্বাহী কমিটির মিটিংয়ে বিষয়টি উপস্থাপন করতে হবে। খুব শিগগিরই আমাদের সিদ্ধান্ত আপনারা জানতে পারবেন।
প্রকৌশলী আফসারের ভাই খায়রুল বাশারে মন্ত্রণালয়ে দেওয়া আবেদনে উল্লেখ করেন, ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর সকালে তার ভাই ধানমন্ডির ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে গেলে ডা. মামুন আল মাহতাব অ্যান্ডোসকপির জন্য বিকালে আসতে বলেন। বিকালে যাওয়ার চার ঘণ্টা পর তার সিরিয়াল আসে। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ শুনে সকাল থেকে খাওয়া বন্ধ রেখেছিলেন তিনি। আবার ওষুধ সেবনের পর তার ঘন ঘন মলত্যাগ হচ্ছিল। কিন্তু চিকিৎসক এসব কিছু বিবেচনায় না নিয়েই প্রকৌশলী আফসারকে অ্যান্ডোসকপি করার জন্য অ্যানেস্থেশিয়া দেওয়ার নির্দেশ দেন বলে জানান বাশার। এরপর অবস্থা খারাপ হলে আইসিইউতে নেওয়া হয় আফসারকে এবং সেই রাতেই তার মৃত্যু হয়।
ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য ডা. স্বপ্নীল এবং ল্যাবএইড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, অবহেলাকে দায়ী করেন বাশার। আবেদনে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ডা. স্বপ্নীলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আরও রয়েছে।
গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ল্যাবএইড হাসপাতালেই একই চিকিৎসক অ্যান্ডোসকপি করার সময় রাহিব রেজা নামের এক রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটে। তাকেও আইসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। চার দিন পর তার মৃত্যু হয়।
রাহিব রেজার পরিবারেরও অভিযোগ, গাফিলতির কারণেই এই মৃত্যু ঘটেছে এবং এর দায় ডা. স্বপ্নীল কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। তবে এই চিকিৎসক তখন চিকিৎসায় কোনও ভুল ছিল না বলে দাবি করেন।
সেসময় দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। বিষয়টি নিয়ে রাহিবের পরিবার আদালতের শরণাপন্ন হয়। গত বছরের ১১ মার্চ আদালত স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়কে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়।
ছয় মাস তদন্ত শেষে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করে অধিদফতরের কমিটি। যেখানে চিকিৎসায় গুরুতর অবহেলার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানানো হয়। এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও বলেছিল তদন্ত কমিটি। তবে মন্ত্রণালয় এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।