অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেছেন, এইচএমপিভি আক্রান্ত ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে সেপসিস থেকে অঙ্গবিকল হয়ে। তিনি এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অসুস্থ ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক জরুরি ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান তিনি।
ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, একমাসের বেশি সময় ধরে এইচএমপিভি আক্রান্ত রোগী অসুস্থ ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ থাকায় নিজের বাসার কাছেই সাধারণ চিকিৎসা নিচ্ছিলেন, যা স্বীকৃত নয়। এক মাস পর ওনার পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন। সেখানে তার চিকিৎসা চলে। তার ৪ দিন পর অবস্থার আরও একটু অবনতি হলে ঢাকার আরেকটি হাসপাতালে রোগীকে স্থানান্তর করা হয়। তখন পরীক্ষা করা হয় এবং দেখা যায়, তিনি এইচএমপিভি পজিটিভ।
তিনি আরও বলেন, এখানে স্পষ্ট করা জরুরি যে, তিনি হাসপাতালে এসেছিলেন মূলত সেপসিস নিয়ে। ওনার এইচএমপিভি শনাক্ত হয়েছে চিকিৎসার অংশবিশেষ হিসেবে। এখন পর্যন্ত বিশ্বে বলা হচ্ছে— এইচএমপিভি’র কারণে মৃত্যুর ঘটনা বিরল। কিন্তু এইচআমপিভি আক্রান্ত ব্যক্তি যদি অন্যান্য রোগে আক্রান্ত থাকেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে এবং তাদের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরির সম্ভাবনা আছে। মৃত সেই নারী সাস্থ্যবান ছিলেন, তার থাইরয়েড অকার্যকর ছিল। উনি মূলত সেপসিসের কারণে অঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি এইচএমপিভ আক্রান্ত ছিলেন, এটি দীর্ঘদিন যাবত দেশে এবং বিদেশে মৌসুমি ফ্লু হিসেবে মানুষকে আক্রমণ করে থাকে। বিগত সময়ে করোনার কারণে আমাদের টেস্ট সক্ষমতা বেড়েছে— যার ফলে নানা ভাইরাস এখন ধরা পড়ে। আমি মনে করি, যদি দেশে রুটিন স্ক্যান করা হয়, তবে একটা অংশ এইচএমপিভি থাকবেই। কিন্তু সেটি কখনই সাধারণভাবে মৃত্যুর কারণ হয় না।
ওই রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, তাকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে বের করেও নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু ৮ ঘণ্টা পর তার আবার অবস্থার অবনতি হয় এবং মৃত্যুবরণ করেন। এটা দুঃখজনক, আমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করছি। কিন্তু আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞানে এইচএমপিভির কারণে মানুষের মৃত্যুর সরাসরি কারণ বলা হচ্ছে না। আমরা জনসাধারণকে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছি।
প্রসঙ্গত, হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসে (এইচএমপিভি) আক্রান্ত এক নারী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বুধবার (১৬ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ডা. আরিফুল বাশার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে চিকিৎসকদের দাবি ভাইরাসের কারণে রোগী মারা যাননি।
গবেষকদের মতে, এইচএমপিভি নতুন কোনও ভাইরাস নয়। দেশে সর্বপ্রথম ২০০১ সালে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এরপরও একাধিকবার পরীক্ষা করে আরও রোগী পাওয়া গেছে। তবে তাদের মৃত্যুর কোনও খবর এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।