বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় সারা দেশে আহত শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পুনর্বাসন সেবা দেবে সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি) বা পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র। সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে ভর্তুকির মাধ্যমে এই সেবা দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপের মাধ্যমে আহত ব্যক্তিদের নিবন্ধন ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়ে সিআরপিকে সহায়তা দেবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাএইড’।
শনিবার (২৪ আগস্ট) সিআরপির সাভারের প্রধান কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন সেবা কার্যক্রম’ শীর্ষক আলোচনা সভা থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
সিআরপির নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ সোহরাব হোসেনের সভাপতিত্বে এই সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল টিম, সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট ও বাংলাএইডের প্রতিনিধি এবং সিআরপির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা, থেরাপি ও পুনর্বাসন সেবা দেওয়ার ঘোষণা দেন সিআরপির নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন। পুনর্বাসন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া হলেও সিআরপি শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে এই সেবা চালিয়ে যেতে চায় উল্লেখ করে অন্যান্য দাতা ও অংশীদারের প্রতিও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। আর্থিক অবস্থা মূল্যায়ন করে ভর্তুকির মাধ্যমে সিআরপি থেকে সেবা নিতে পারবে আন্দোলনে আহত সাধারণ মানুষও।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে সারা দেশে আহত ব্যক্তিদের সেবাদানের ক্ষেত্রে সিআরপিকে এরই মধ্যে আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট। সভায় উপস্থিত হয়ে এই সেবাদান প্রক্রিয়াকে সহজ ও স্বচ্ছ করতে শিক্ষার্থীদের কাছে সহযোগিতা চান সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্টের হেড অব অপারেশনস কাজী আহমদ ফারুক।
শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে সেবা প্রদানের আশ্বাস দেওয়ায় সিআরপিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল টিমের সদস্য মাহমুদুল হাসান মিলহান বলেন, আন্দোলনে আহত, নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং 'রেড জুলাই' নামে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এটি ডেটাবেইজ হিসেবে সংরক্ষণ করছেন তারা।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম 'বাংলাএইড'-এর অন্যতম উদ্যোক্তা মো. আনিসুল হক জানান, এরই মধ্যে 'বাংলাএইড' অ্যাপের মাধ্যমে আহত ব্যক্তিদের রেজিস্ট্রেশন চালু হয়েছে। গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানের মাধ্যমে নিকটস্থ সিআরপির কেন্দ্রে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারবেন আহত ব্যক্তিরা।
সিআরপির এই কার্যক্রমের বিষয়ে তৃণমূল পর্যায়ে সবাইকে অবগত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, বিভাগীয় পর্যায়ে মেডিক্যাল কলেজ, জেলা সিভিল সার্জনসহ যেখানে যেখানে প্রয়োজন যোগাযোগ করা হবে বলে জানান সিআরপির একাডেমিক প্রধান ও বিএইচপিআই প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. ওমর আলী সরকার।
১৯৭৯ সালে ব্রিটিশ ফিজিওথেরাপিস্ট ভ্যালেরি অ্যান টেইলর সিআরপি প্রতিষ্ঠা করেন; যা বর্তমানে ট্রাস্ট ফর দ্য রিহ্যাবিলিটশন অব দি প্যারালাইজডের (টিআরপি) মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। এটি অলাভজনক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ধনী-গরিব নির্বিশেষে মেরুরজ্জুতে আঘাত, স্নায়বিক ও অস্থিহাড়-সংক্রান্ত সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সেবা দিয়ে থাকে।
ঢাকার মিরপুর, সাভার ও মানিকগঞ্জ; সিলেট ও মৌলভীবাজার এবং চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল ও ময়মনসিংহে অবস্থিত ৯টি কেন্দ্রে স্বাস্থ্যসেবাসহ মেডিক্যাল কেয়ার, নার্সিং, ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপির পাশাপাশি প্রস্থেটিকস ও অর্থোটিকস বিভাগের মাধ্যমে কৃত্রিম হাত-পা তৈরি ও সংযোজনসেবা দেওয়া হয়।