রাজধানীর গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ নবজাতকের মৃত্যুর পর প্রসূতি মাহবুবা রহমান আঁখিও মারা গেছেন। রবিবার (১৮ জুন) দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছেন স্বজনরা। কেউ করছেন আহাজারি, কেউবা বাকরুদ্ধ। শোকে পাথর হয়ে গেছেন সহপাঠী ও বন্ধুরাও।
মাহবুবা রহমান আঁখির মৃত্যুর খবরে হাসপাতালজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। অন্য রোগীর দর্শনার্থীদেরও তা দেখে চোখ ছল ছল করছে। আঁখির মৃত্যুর খবর শুনে শোকে আহাজারি করছেন তার চাচা। তিনি হাসপাতালের মেঝেতে বসেই বলছেন, ‘আমার সব শেষ, আমার সব চলে গেলো।’ কিছুক্ষণ বিলাপের পর আবার তিনি সান্ত্বনা দিতে আসেন আঁখির স্বামী ইয়াকুবকে। বাকরুদ্ধ হয়ে থাকা ইয়াকুব এ সময় ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকেন।
মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে আসেন আঁখির বোন খালেদা আকতার জুঁই। হাসপাতালের মেঝেতে বসেই করছেন আহাজারি। তিনি বলছেন, ‘মেরে ফেলছে, আমার বোনকে মেরে ফেলছে।’
জুঁই আরও বলেন, ‘আর কিছু বলবো না, মেরে ফেলছে।’
মেঝেতে বসে আঁখির ভাই শামীম বলছিলেন, ‘বাবাও লাশ হয়ে ঢাকা থেকে ফিরছিলেন। আঁখিও তাই।’
গত ৯ জুন দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে প্রসব ব্যথা ওঠায় মাহবুবা রহমান আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি করানো হয়। পরে গত ১৪ জুন (বুধবার) সেন্ট্রাল হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসা’ ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ‘প্রতারণা’র অভিযোগ তোলেন আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী। তিনি দাবি করেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মারা গেছে তাদের নবজাতক সন্তানও।
ওই ঘটনায় গত বুধবার (১৪ জুন) ধানমন্ডি থানায় মোট ৬ জনের নাম উল্লেখসহ আরও পাঁচ থেকে ছয় জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগ এনে একটি মামলা করা হয়। মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা হলেন ডা. মিলি, ডা. এহসান, অধ্যাপক সংযুক্তা সাহার সহকারী জমির এবং হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মো. পারভেজ।
এ মামলায় গ্রেফতার দুই চিকিৎসক ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহা এরইমধ্যে দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। তারা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারহা দিবা ছন্দা আসামি মুনা ও ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আফনান সুমি আসামি শাহজাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
এদিকে চিকিৎসাজনিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি পরিদর্শক দল ওই হাসপাতাল পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শনে আইসিইউতে রোগীর রাখার উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়া যায়নি। এজন্য পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই হাসপাতালে অস্ত্রোপচার কক্ষ বন্ধ করে দেওয়াসহ কয়েক দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
সেন্ট্রাল হাসপাতালের সেই প্রসূতির মৃত্যু