X
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫
৫ বৈশাখ ১৪৩২

করোনা পরীক্ষা: সরকারি-বেসরকারি দুদিকেই সংকট

সাদ্দিফ অভি
১৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৮:০০আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৮:০০

গত রবিবার (১৬ জানুয়ারি) করোনা পরীক্ষার জন্য মোহাম্মদপুরের জহুরি মহল্লায় অবস্থিত ব্র্যাকের বুথে নমুনা দিয়ে আসেন আনিক আহমেদ। অন্য সময় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল এলেও মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্তও ফল পাননি তিনি। এর একদিন আগে আজিমপুর মাতৃসদনে ব্র্যাকের বুথে নমুনা দিয়েছিলেন অরণ্য। তার ফলাফলও পাননি এখনও।

দেশে করোনা পরিস্থিতির চিত্র পাল্টে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নমুনা পরীক্ষার ফল আসতেও দেরি হচ্ছে। কারণ নতুন ঢেউ হানা দেওয়ার সঙ্গে বেড়েছে নমুনা পরীক্ষার হিড়িক। সঙ্গে যোগ হয়েছে লোকবল সংকট।

দেশের করোনা পরীক্ষার জন্য সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে আরটি পিসিআর ল্যাব আছে ১৫৩টি, জিন এক্সপার্ট টেস্ট ল্যাব আছে ৫৭টি। এসব ল্যাবে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের সুবিধাও আছে। পাশাপাশি আরও ১০০টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ টেস্ট করতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ২৫ মিনিট। আর বর্তমানে পিসিআর টেস্টের ফলাফল পেতে লেগে যাচ্ছে ৩-৪ দিন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহায়তায় রাজধানীর অনেক জায়গায় করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের বুথ বসিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। তবে পরীক্ষার কাজটি তারা করে না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী এক এক বুথের নমুনা এক এক ল্যাবে যায়। কোন বুথের নমুনা কোন ল্যাবে যাবে সেটি নির্ধারণ করে অধিদফতর।

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির ব্যবস্থাপক ও কোভিড-১৯ স্যাম্পল কালেকশন বুথ কোর্ডিনেটর ডা. মিরানা জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহযোগী হিসেবে করোনার শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছে ব্র্যাক। আমরা সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে বিভিন্ন জায়গায় বুথ স্থাপন করে নমুনা সংগ্রহের কাজ করছি। সেই নমুনা বিভিন্ন ল্যাবে পৌঁছে দিচ্ছি। ব্র্যাক কোনও টেস্ট করে না। রিপোর্ট প্রদান করে নির্ধারিত ল্যাব। শুধু অ্যান্টিজেন টেস্টে পজেটিভ আসলে আমরা রিপোর্ট দেওয়ার কাজ করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন ল্যাবের সক্ষমতা অনুযায়ী কোন ল্যাবে কতগুলো নমুনা যাবে সেটি নির্ধারণ করে জানিয়ে দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। এখন দিনে তিন হাজার নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে। কয়েকদিন আগেও সংখ্যাটা ছিল ৩০০। যখন সংক্রমণ কম ছিল তখন লোকবল কমিয়ে ফেলা হয়েছিল। হঠাৎ সংক্রমণ বাড়ায় আমরা হিমশিম খাচ্ছি। এদিকে প্রোফাইল এন্ট্রি দেওয়ার কাজটিও করছি আমরা। আমরা এন্ট্রি দিলে ল্যাব রিপোর্ট দেয়। লোকবলের বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানিয়েছি। তারা হয়তো একটা ব্যবস্থা নেবে।’

সরকারি পরীক্ষার ফলাফল দেরিতে আসে—একথা জানার পর সায়হাম তার পরিবারের করোনা পরীক্ষা করতে যান বেসরকারি একটি ল্যাবে। সেখানেও বিধি বাম। চার জনের করোনা পরীক্ষার খরচ আসে ১২ হাজার টাকা। বাসায় এসে নমুনা নিলে এর সঙ্গে যুক্ত হবে আরও দুই হাজার। এত খরচ হবে জেনে তিনি আগ্রহ হারান পরীক্ষা করাতে।

একই কারণে পরীক্ষা করাচ্ছেন না আকবর হোসেনও। পেশায় বেসরকারি চাকরিজীবী তিনি। করোনা পরীক্ষায় এত টাকা খরচ করলে মাস চালাতে পারবেন না বলে জানান তিনি। আবার সরকারি পরীক্ষায় দেরিতে ফল পাওয়ার কারণে দ্বিধায়ও আছেন। কারণ তার পরিবারের এক সদস্য এখন আইসলেশনে আছেন। আরও দুজনের উপসর্গ আছে। পরিবারের সদস্য মোট সাত জন।

পরীক্ষার ফল পেতে দেরি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ফি নিয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা আহমেদুল কবীর বলেন, ‘বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নমুনা পরীক্ষার ফি কমাতে বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে প্রতিষ্ঠান মালিকদের সঙ্গে। কিন্তু আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। আমরা তাদের আবার ডাকবো। একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে বলে আশা করছি।’

তিনি বলেন, ‘ফলাফল পেতে দেরি হচ্ছে এমন তথ্য আমার কাছে নেই। ব্র্যাকের সংগ্রহ করা নমুনার ফল যদি দেরিতে আসে আমি কথা বলে দেখবো।’

অন্যদিকে আসলাম আহমেদ করোনা আক্রান্ত হওয়ায় তার পরিবারের সদস্যদের বাসায় এসে নমুনা পরীক্ষা করার জন্য ফোন দেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর'র হটলাইনে। সেখান থেকে সব শুনে বলা হলো অন্য সদস্যদের উপসর্গ না থাকলে টেস্ট করার প্রয়োজন নেই।

গত বছর করোনা শনাক্তের হার বেড়ে যাওয়ায় পরীক্ষার চাপ কমাতে সন্দেহভাজন রোগীর জ্বর, কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট এই চার উপসর্গ না থাকলে অনেক ক্ষেত্রে নমুনা নেওয়া হচ্ছিল না। এ বিষয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়ের মাধ্যমে সিভিল সার্জনদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

এখন এমন নির্দেশনা নেই বলে জানিয়েছে ঢাকা জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়।

প্রসঙ্গত, করোনা আক্রান্তের হার দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে শনাক্তের হার ২৪ শতাংশ। সাড়ে আট হাজারের মতো শনাক্ত হয়েছে একদিনে। অধিদফতরের দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে এক সপ্তাহের ব্যবধানে শনাক্তের হার ২০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা এ বি এম খুরশীদ আলম বলেছেন, ‘আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়া আমাদের জন্য অশুভ ইঙ্গিত। আমরা যদি নিজেদেরকে সংবরণ না করি, প্রতিহত করার চেষ্টা শক্তিশালী না করি তবে বড় বিপদের আশঙ্কা আছে।’

 

 

/এফএ/
সম্পর্কিত
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জারদারি
বাদুড়ের দেহে নতুন ধরনের করোনা
কোভিড আক্রান্ত হয়ে প্রচারণায় বিরতি, নতুন চাপে বাইডেন
সর্বশেষ খবর
‘জংলি’র হল বেড়ে তিনগুণ!
‘জংলি’র হল বেড়ে তিনগুণ!
ফিলিপসের ইনজুরিতে গুজরাটে শানাকা
ফিলিপসের ইনজুরিতে গুজরাটে শানাকা
মাগুরার আছিয়াকে নিয়ে বাপ্পার গান
মাগুরার আছিয়াকে নিয়ে বাপ্পার গান
খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা: সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘ক্যাশিয়ার’ গ্রেফতার
খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা: সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘ক্যাশিয়ার’ গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
ঋণের কিস্তি ছাড় স্থগিত রাখলো আইএমএফ
ঋণের কিস্তি ছাড় স্থগিত রাখলো আইএমএফ
২৯ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে খিলক্ষেত-কুড়িল-বসুন্ধরা সড়ক
২৯ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে খিলক্ষেত-কুড়িল-বসুন্ধরা সড়ক
টিপকাণ্ডে ১৮ জনের বিরুদ্ধে সেই কনস্টেবলের মামলা
টিপকাণ্ডে ১৮ জনের বিরুদ্ধে সেই কনস্টেবলের মামলা
গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের মালিকানা কমলো
গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের মালিকানা কমলো
আসন্ন বাজেটে বৈষম্য কমবে, অগ্রাধিকার পাবে যেসব খাত
আসন্ন বাজেটে বৈষম্য কমবে, অগ্রাধিকার পাবে যেসব খাত