যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বিরল ব্যবহৃত যুদ্ধকালীন ক্ষমতার আইন ব্যবহার করে অভিযুক্ত অপরাধ চক্রের সদস্যদের দ্রুত নির্বাসন দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। তবে এই অনুমতি এখনকার জন্য বা সাময়িক সময়ের জন্য দেওয়া হয়েছে। সোমবার (৭ এপ্রিল) এই রায় দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
গত ১৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের একটি নিম্ন আদালত অস্থায়ীভাবে ভেনেজুয়েলার অভিযুক্ত গ্যাং সদস্যদের এল সালভাদরে নির্বাসন বন্ধ করেছিল। রায়ে বলা হয়েছিল, স্বল্প ব্যবহৃত ১৭৯৮ সালের বহিঃশত্রু আইন (এলিয়েন এনিমিস অ্যাক্ট) ব্যবহার করে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর আরও তদন্ত প্রয়োজন।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই অভিবাসীরা অপরাধচক্র ত্রেন দে আরাহুয়ার সদস্য। যুক্তরাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশে অনিয়মিত যুদ্ধ ও আগ্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিল অপরাধচক্রটি। ফলে তাদের এই আইনের আওতায় দেশ থেকে বের করে দেওয়া যেতে পারে।
যদিও ট্রাম্প প্রশাসন এই রায়কে জয় হিসেবে দেখছে, বিচারপতিরা আদেশ দিয়েছেন যে নির্বাসিতদের তাদের অপসারণ বা নির্বাসন চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ দিতে হবে।
ট্রাম্প এই রায়কে ‘আমেরিকায় ন্যায়ের একটি মহান দিন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আমাদের জাতির আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রেখেছে’ একজন প্রেসিডেন্টকে, যেই হোক না কেন, আমাদের সীমান্ত রক্ষা এবং আমাদের পরিবার ও দেশের সুরক্ষার ক্ষমতা দিয়েছে।
এই আইনটি সর্বশেষ ব্যবহার করা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে “শত্রু” দেশগুলোর নাগরিকদের আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই আটক বা নির্বাসনের ব্যাপক ক্ষমতা দেয়। আইনটি ১৭৯৮ সালে পাশ হয়, যখন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করছিল তারা ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে।
ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, সমস্ত নির্বাসিতই ত্রেন দে আরাহুয়ার সদস্য। এই শক্তিশালী আন্তর্জাতিক অপরাধী গোষ্ঠীটির অপহরণ, চাঁদাবাজি, সংঘবদ্ধ অপরাধ, মাদক পাচার এবং চুক্তিভিত্তিক হত্যাকাণ্ডে সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। একে ট্রাম্প সম্প্রতি বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করেছেন।
মার্কিন অভিবাসন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আটককৃতদের ‘সতর্কভাবে যাচাই করা’ হয়েছে এবং গ্যাং সদস্য হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পর এল সালভাদরে পাঠানো হয়েছে।
তবে অনেক নির্বাসিতের কোনও মার্কিন অপরাধমূলক রেকর্ড নেই বলে আদালতের নথিতে স্বীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থার এক কর্মকর্তা।
নির্বাসিতদের কয়েকজন আত্মীয় বিবিসিকে জানিয়েছেন, এই মানুষগুলো ভুলভাবে অভিবাসন অভিযানে ধরা পড়েছেন এবং তারা নির্দোষ।
অনেক পরিবার বলেছে, শুধু উল্কির কারণে তাদের প্রিয়জনদের গ্যাং সদস্য হিসেবে ভুলভাবে শনাক্ত করা হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা এবং কিছু আইন বিশেষজ্ঞ এই আইন প্রয়োগকে নজিরবিহীন বলেছে। কারণ এটি আগে কেবল তখনই ব্যবহৃত হয়েছে যখন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল, যা মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী কেবল কংগ্রেসই করতে পারে।