যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে ‘সরাসরি আলোচনা’ করবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (৭ এপ্রিল) সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, শনিবার (১২ এপ্রিল) বৈঠকটি হবে। এই বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচিও। তিনি বলেন, আলোচনা একজন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে পরোক্ষভাবে হবে। তবে এটিকে একইসঙ্গে একটি সুযোগ এবং একটি পরীক্ষা বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছেন।
ট্রাম্প বলেন, ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে আলোচনা হবে 'খুব উচ্চ পর্যায়ে' এবং কোনও চুক্তি না হলে এটি ইরানের জন্য খুব খারাপ হবে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, আলোচনা শনিবার থেকে শুরু হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি চালাতে পারবে না।
গত মাসে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি প্রকাশ্যে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনার কথা তুলেছিলেন।
ওভাল অফিসে বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করছি এবং সম্ভবত একটি চুক্তি হবে। তিনি আরও বলেন, চুক্তি করা অবশ্যই স্পষ্ট বিকল্প গ্রহণের চেয়ে ভালো।
তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, যদি আলোচনায় সমঝোতা না হয় তবে ইরানের বিরুদ্ধে তিনি সামরিক পদক্ষেপ নিবেন কি না? ট্রাম্প জবাব দেন, আলোচনা সফল না হলে ইরান বিপদের মধ্যে পড়বে।
এই আলোচনার অগ্রগতি বা এতে কারা অংশ নিচ্ছেন, সে বিষয়ে ট্রাম্প আর কোনও বিস্তারিত জানাননি।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন যে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে আলোচনাটি ১২ এপ্রিল ওমানে অনুষ্ঠিত হবে। আব্বাস আরাকচি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, এটি যেমন একটি সুযোগ, তেমনি একটি পরীক্ষা। বল এখন আমেরিকার কোর্টে।
মার্চ মাসে ট্রাম্প সংযুক্ত আরব আমিরাতের একজন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে ইরানের নেতার কাছে একটি চিঠি পাঠান, যাতে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করা হয়।
ইরান সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও, তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহের ইঙ্গিত দিয়েছিল।
ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ সক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্র নীতির লক্ষ্য হয়ে রয়েছে।
২০১৫ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিলেন, যার আওতায় ইরান তার পারমাণবিক কার্যক্রম সীমিত করবে এবং আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের অনুমতি দেবে, যাতে নিশ্চিত করা যায় যে এসব সুবিধা কেবল বেসামরিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে, অস্ত্র তৈরিতে নয়।
এর বিনিময়ে ইরানকে নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল, যেগুলো তাদের অর্থনীতিকে ভেঙে দিয়েছে।
এই চুক্তিতে সহ-স্বাক্ষরকারী ছিল চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্য।
তবে ২০১৬ সালে ট্রাম্প একতরফাভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ওই চুক্তি থেকে সরিয়ে নেন। তিনি তার প্রথম নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই এই চুক্তির কঠোর সমালোচক ছিলেন।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্প একাধিকবার ইরানের সঙ্গে নতুন একটি চুক্তির সম্ভাবনা উত্থাপন করেছেন। সেই সঙ্গে চুক্তি না হলে সামরিক পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন।