যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সপ্তাহে ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর, রবিবার (৬ এপ্রিল) পাল্টা ব্যবস্থা নেয় বেইজিং। মার্কিন পণ্যে ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। চীন এই শুল্ক প্রত্যাহার না করলে দেশটির ওপর আরও শুল্ক আরোপের হুমকি দেন ট্রাম্প। সোমবার (৭ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প চীনকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দিয়েছেন তিনি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
চীনের এই পদক্ষেপ ছিল তার ‘লিবারেশন ডে’ নীতির অংশ, যেখানে প্রায় সব বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়।
এরপর বিশ্ববাজার ধসে পড়া অব্যাহত থাকায়, ট্রাম্প চীনকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দেন ওই পাল্টা ব্যবস্থা প্রত্যাহার না করলে ৫০ শতাংশ ট্যারিফ কার্যকর করা হবে বলে জানান।
এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা দূতাবাস ওয়াশিংটনকে ‘অর্থনৈতিক দাদাগিরি’ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে বলেছে, বেইজিং তার বৈধ অধিকার ও স্বার্থ দৃঢ়ভাবে রক্ষা করবে।
ট্রাম্প যদি এই হুমকি কার্যকর করেন, তাহলে চীনা পণ্য আমদানির ওপর মোট শুল্কহার দাঁড়াবে ১০৪ শতাংশ । মার্চে আরোপিত ২০ শতাংশ এবং গত সপ্তাহের ৩৪ শতাংশ শুল্কের ওপর এটি বাড়তি চাপ হবে।
বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে এ পদক্ষেপ বাণিজ্যযুদ্ধ আরও তীব্র করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প আরও বলেন, চীনের অনুরোধে চলমান যেকোনও বৈঠক অবিলম্বে বাতিল করা হবে!
এছাড়া সোমবার হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প বলেন, বিশ্বব্যাপী ট্যারিফের ক্ষেত্রে কোনও বিরতির কথা তিনি ভাবছেন না।
তিনি বলেন, অনেক দেশ এখন আমাদের সঙ্গে চুক্তি করতে আসছে এবং সেই চুক্তিগুলো হবে ন্যায্য।
ট্রাম্প বলেন, চীন পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। আমার পূর্ববর্তী সতর্কতার পরেও যে কোনও দেশ যদি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ট্যারিফ আরোপ করে, তাহলে তার জবাবে আরও বেশি এবং উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হবে।
জবাবে চীন বলেছে, চীনের ওপর চাপ প্রয়োগ বা হুমকি দেওয়া সঠিক উপায় নয়।
যুক্তরাষ্ট্রে চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেংইউ বলেন, ‘পাল্টা নীতির’ নামে যুক্তরাষ্ট্রের এই আধিপত্যবাদী পদক্ষেপ নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয় এবং আন্তর্জাতিক নিয়মকে উপেক্ষা করে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির চর্চা করে। এটি একতরফা, প্রতিরক্ষা বাদী এবং অর্থনৈতিক দাদাগিরির একটি উদাহরণ।
তবে ট্রাম্প বলেছেন, এই ট্যারিফগুলো স্থায়ীও হতে পারে আবার আলোচনা চলতেও পারে।
এই ট্যারিফ চীনা নির্মাতাদের জন্য একটি বড় আঘাত হতে পারে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রধান রপ্তানি বাজার।
চীনের প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক পণ্য ও যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, আসবাব, খেলনা, যানবাহন ও যন্ত্রাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের চীনে রপ্তানি করা প্রধান পণ্য হচ্ছে তৈলবীজ ও শস্য, বিমান, যন্ত্রপাতি ও ওষুধ।
ট্যারিফ ঘিরে অনিশ্চয়তায় বৈশ্বিক শেয়ার বাজারে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ট্রাম্পের ঘোষণার পর থেকেই বৈশ্বিক বাজারে দরপতন দেখা যাচ্ছে।