লন্ডনে ১৮ মিলিয়ন পাউন্ডের বিশাল এক প্রতারণা চক্রের নেপথ্যে বাংলাদেশি নাগরিকদের হাত রয়েছে, যা আজ মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) আদালতে রায় দিতে যাচ্ছে। এই চক্রটি মূলত বাড়ি ভাড়া দেওয়ার নামে পরিচালিত হতো, যেখানে টার্গেট ছিল সদ্য যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসী এবং শিক্ষার্থীরা।
এ চক্রের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন মোহাম্মদ মইনুল হক, যিনি ‘সিটি সাইড প্রপার্টিজ লিমিটেড’ কোম্পানির মাধ্যমে এই প্রতারণা চালিয়েছিলেন। কোম্পানিটি বন্ধ হওয়ার পর, তিনি আরও দুটি কোম্পানি খুলে প্রতারণা চালিয়ে যান। এই চক্রটি প্রতারণার মাধ্যমে ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ১৮ মিলিয়ন পাউন্ড হাতিয়ে নেয়।
জানা গেছে, প্রতারকরা সাধারণত ভুয়া বাড়ি ভাড়া দেওয়ার বিজ্ঞাপন দিয়ে ভুক্তভোগীদের আকৃষ্ট করতো। এসব বিজ্ঞাপন ‘স্পেয়ার রুম’-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হতো, যেখানে পিডিএফ ফাইলের মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হতো। ভুক্তভোগীদের বাড়ি না দেখিয়েই চুক্তি সই করানো হতো। পরে অযাচিতভাবে তাদের উচ্ছেদের হুমকি দেওয়া হতো।
প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন, এই চক্রের শিকার হয়েছেন শত শত মানুষ, যাদের অনেকেই গৃহহীন হয়ে পড়েছেন বা চাকরি হারিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন, যাদের কেউ কলেজের কোর্স হারিয়েছেন। কেউ আবার আর্থিকভাবে নিঃশেষ হয়ে গেছেন।
এক ভুক্তভোগী, জিব্রিল সাইন জানিয়েছেন, প্রতারণার শিকার হওয়ার পর তাকে তার কলেজের কোর্স ছাড়তে বাধ্য করা হয় এবং তার জীবনে যে ক্ষতি হয়েছে তা ‘অর্থমূল্যের বাইরে’। অন্য একজন ভুক্তভোগী, ক্রিস্টিনা ক্লারিসা অ্যালান জানিয়েছেন, এই প্রতারণা তার জীবনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করেছে।
প্রসিকিউটর রিচার্ড হেলার আদালতে বলেন, ‘প্রতারকরা পরিকল্পিতভাবে দুর্বল ব্যক্তিদের শোষণ করেছে। তারা ঘর ভাড়া দেওয়ার প্রক্রিয়ায় প্রতারণা করে মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে।’
এছাড়া, স্পেয়ার রুমের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ১৮ হাজার বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন ১৮ মিলিয়ন পাউন্ডের আয়ের উৎস ছিল। কোম্পানিটি প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেও, তাদের প্ল্যাটফর্মে এই ধরনের প্রতারণা অব্যাহত ছিল।
আজ আদালত এই চক্রের মূল হোতাদের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করবেন। প্রসিকিউটররা দাবি করেছেন, এই চক্রের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অর্থের পরিমাণ ৭০ হাজার পাউন্ডেরও বেশি হতে পারে। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এর থেকে কম পরিমাণ ক্ষতির পরিমাণ দাবি করেছেন।