গাজায় মানবিক ত্রাণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) শুনানিতে অংশ নেয়নি ইসরায়েল। দেশটির বিরুদ্ধে এই মামলাটিকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে তারা।
সোমবার থেকে শুরু হওয়া শুনানিতে জাতিসংঘের আইন উপদেষ্টা এলিনর হামারশোল্ড বলেছেন, গত ২ মার্চ থেকে গাজায় কোনও মানবিক সহায়তা বা বাণিজ্যিক পণ্য প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এর ফলে গাজায় ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে।
ইসরায়েল গত দেড় মাস ধরে গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য সহায়তা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। তাদের দাবি, হামাসের হাতে থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলের বক্তব্য, তাদের এই অবরোধ আইনসম্মত এবং গাজায় পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।
কিন্তু জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সহায়তা সংস্থা বলছে, ইসরায়েলের এই নিষেধাজ্ঞা গাজাবাসীর দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। গত দেড় বছরের যুদ্ধে গাজায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, ১০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং শহরগুলোর বড় অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
গত জানুয়ারিতে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি চলাকালে গাজায় কিছুটা সহায়তা পৌঁছালেও মার্চে যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর ইসরায়েলের বিমান হামলা ও স্থল অভিযান বাড়ায় আবারও অবরোধ কঠোর করা হয়।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ গত ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে একটি উপদেশমূলক রায় চেয়ে আবেদন করে। পাঁচ দিনের শুনানিতে প্রায় ৪০টি দেশ বক্তব্য রাখবে। আদালতের রায় পেতে বেশ কিছু সময় লাগতে পারে।
আন্তর্জাতিক আইনের সর্বোচ্চ এই আদালতের রায় বাধ্যতামূলক না হলেও এর আইনি গুরুত্ব রয়েছে এবং এটি ইসরায়েলের প্রতি বিভিন্ন দেশের নীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। জাতিসংঘ আশা করছে, আদালত ফিলিস্তিনিদের সহায়তায় নিয়োজিত ইউএনআরডব্লিউএ সংস্থায় ইসরায়েলের নিষেধাজ্ঞাকে সমালোচনা করবে।
ইসরায়েল ও জাতিসংঘের মধ্যকার সম্পর্ক ইতোমধ্যে তিক্ত। জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠান বারবার ইসরায়েলের নীতির সমালোচনা করেছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলের অভিযোগ, জাতিসংঘ পক্ষপাতদুষ্ট এবং ইউএনআরডব্লিউএ হামাস ও তাদের মিত্রদের দ্বারা প্রভাবিত।
গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অভিযানের মধ্যে আন্তর্জাতিক আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের করা হচ্ছে। গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা এক মামলায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছিল। ইসরায়েল ওই অভিযোগও অস্বীকার করে দাবি করেছিল তারা আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে লড়াই করছে।
এদিকে গাজাবাসীরা অবরোধের কারণে বেড়ে যাওয়া দ্রব্যমূল্যের বিরুদ্ধে হতাশা প্রকাশ করেছেন। দির আল-বালাহের বাসিন্দা মাহের ঘানেম বলেন, গাজায় আমরা যে জীবনযাপন করছি, তাকে জীবন বলা যায় না।
সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস