ইসরায়েলি বাহিনী মঙ্গলবার গাজায় গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের বিমান হামলা চালিয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। একই সময়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধসের মুখে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাতিসংঘের পোলিও টিকাদান কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। ৬ লাখের বেশি শিশুর জন্য এই কর্মসূচি ছিল। এতে করে একসময় প্রায় নির্মূল হওয়া এই রোগটি আবারও ফিরে আসার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
সংঘাত সমাধানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় হামাসের একটি প্রতিনিধিদল কায়রোতে আলোচনার জন্য যাওয়ার কথা রয়েছে। দুই সূত্রে জানা গেছে, এই প্রতিনিধিদল একটি নতুন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবে, যাতে সব জিম্মি মুক্তির পর ৫-৭ বছরের যুদ্ধবিরতি ও সংঘাত বন্ধের বিষয় রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইসরায়েলি বাহিনী ট্যাংক, বিমান ও নৌযান থেকে গাজার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক গোলাবর্ষণ করেছে। এতে ঘরবাড়ি, তাঁবু ও রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাজার কর্মকর্তা ও বাসিন্দারা বলছেন, বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ উদ্ধারে ব্যবহৃত বুলডোজার ও যানবাহন ধ্বংস হয়েছে।
গত মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রেখেছে এবং ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে পুনরায় সামরিক অভিযান শুরু করেছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এরপর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ১ হাজার ৬০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলের ১৮ মাসের বিমান হামলায় গাজা ভূখণ্ডের প্রায় সব বাসযোগ্য ভবন ধ্বংস হয়েছে। গাজায় ২৩ লাখ মানুষ এখন মূলত অস্থায়ী তাঁবুতে বসবাস করছে। গত মাসে পুরোপুরি অবরোধ জারির পর জাতিসংঘের পরিচালিত ২৫টি রুটি তৈরির বেকারি বন্ধ হয়ে গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খলিল দাকরান বলেছেন, সরবরাহ বন্ধের কারণে গাজার হাসপাতালে শতাধিক রোগীর জীবন ঝুঁকিতে পড়েছে। তিনি বলেন, আমরা একটি বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছি। শিশু ও রোগীদের রাজনৈতিক চাপের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।
ইসরায়েল অবরোধকে আন্তর্জাতিক আইনসম্মত বলে দাবি করে জানিয়েছে, এটি হামাসকে চাপে রাখার জন্য করা হয়েছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন পুরোপুরি মেনে চলছে। মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা হবে, কিন্তু তা যেন হামাসের হাতে না যায়।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি অবরোধকে গাজার মানুষের সমষ্টিগত শাস্তি বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, মানবিক সহায়তাকে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অবরোধ তুলে নিতে হবে, জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে এবং যুদ্ধবিরতি ফিরিয়ে আনতে হবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে এই সংঘাত শুরু হয়। ইসরায়েলি হিসাবে সে সময় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত ও ২৫১ জনকে গাজায় জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এরপর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৫১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।