মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেছেন, ওমানের আলোচনা ব্যর্থ হলে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক হামলায় নেতৃত্ব দেবে ইসরায়েল। বুধবার হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল এ খবর জানিয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, সামরিক হামলা প্রয়োজন হলে আমরা তা করব। ইসরায়েল এতে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকবে—তারা নেতৃত্ব দেবে।
তবে পরক্ষণেই তিনি যোগ করেন, কিন্তু কেউ আমাদের নেতৃত্ব দেবে না। আমরা যা করতে চাইব, তা-ই করব।
এই প্রথম ট্রাম্প স্পষ্টভাবে ইরানে ইসরায়েলি নেতৃত্বাধীন হামলার ইঙ্গিত দিলেন। গত সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠককালে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, শনিবার ওমানে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সরাসরি আলোচনা হবে। কিন্তু নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার সচিব ইয়োসি ফুকস বুধবার বলেছেন, আলোচনার সময়সূচি জানা ছিল না ইসরায়েলের।
ট্রাম্প বলেছেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, আমরা তাদের উন্নতি চাই। ইরানকে মহান দেখতে চাই। কিন্তু পারমাণবিক অস্ত্র পাবে না। তারা এটা বোঝে। ইরানের জনগণ অসাধারণ। তারা খুব বুদ্ধিমান... কিন্তু নেতৃত্ব কঠোর অবস্থানে আছে।
ওমানের আলোচনাকে তিনি ‘প্রক্রিয়ার সূচনা’ বলে উল্লেখ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে স্টিভ উইটকফ ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি আলোচনায় বসবেন বলে জানা গেছে। তবে ইরান সরাসরি আলোচনার পরিবর্তে মধ্যস্থতাকারী চাইছে।
ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার সচিব ফুকস স্বীকার করেছেন, শনিবারের আলোচনার ঘোষণায় নেতানিয়াহু অপ্রস্তুত ছিলেন। তবে তিনি দাবি করেন, ইরানের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে নেতানিয়াহু আগে থেকেই জানতেন, শুধু সময়সূচি জানা ছিল না।
বুধবার রাতে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন নেতানিয়াহু। সেখানে তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে আলোচনার আগে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের মতামত জানতে চেয়েছিল। নেতানিয়াহুর পরামর্শ ছিল, লিবিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধের মতো শর্তারোপ করতে হবে।
ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা মনে করেন, ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সমাধানই তার পছন্দ। সরাসরি আলোচনা ছাড়া উইটকফ ওমানে যাবেন না বলেও জানানো হয়েছে। তাকে তেহরানেও যেতে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনা দুই দশকের বেশি সময় ধরে চলছে। ২০১৫ সালের চুক্তি থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ায় পুনরায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করেছে ইরান। বর্তমানে তারা ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধতা অর্জন করেছে, যা পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য যথেষ্ট।
এদিকে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগে পাঁচ প্রতিষ্ঠান ও এক ব্যক্তির ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্য ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। অন্যদিকে, আলোচনা সফল না হলে পুরো অঞ্চলেই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।