X
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
১৬ বৈশাখ ১৪৩২

ট্রাম্পের গাজা দখল পরিকল্পনায় নতুন সংকটে মিসর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:০৯আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:০৯

জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক মঙ্গলবার শেষ হয়েছে উত্তেজনাপূর্ণ এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে। গাজা উপত্যকা নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে এখন সবাই উদ্বিগ্ন। তিনি গাজা উপত্যকা যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের মিসর ও জর্ডানে স্থানান্তরের পরিকল্পনার কথা বলেছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহ একটি অনানুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, গাজা পুনর্গঠনের জন্য একটি বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি করা হবে। যেখানে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করা হবে না। এই পরিকল্পনায় মিসরসহ আরব দেশগুলো জড়িত থাকবে। ইতোমধ্যে মিসর ২৭ ফেব্রুয়ারি গাজা নিয়ে একটি জরুরি আরব শীর্ষ সম্মেলনের পরিকল্পনা করছে। কয়েক ঘণ্টা পর মিসর একটি বিবৃতি জারি করে জানায়, তারা গাজা পুনর্গঠনের জন্য একটি ব্যাপক পরিকল্পনা উপস্থাপন করবে, যেখানে ফিলিস্তিনিরা তাদের ভূমিতে থাকবে। এছাড়া ফিলিস্তিন ইস্যুতে একটি ন্যায্য সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করে মিসর।

মিসরের জন্য ঝুঁকি কোথায়?
ইউনিভার্সিটি অব ইয়র্কের পোস্ট-ওয়ার রিকভারি স্টাডিজের লেকচারার জ্যাকব এরিকসন আল জাজিরাকে বলেছেন, ট্রাম্পের গাজা দখলের প্রস্তাব কতটা গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত, তা বলা কঠিন। তবে যদি ট্রাম্প জেদ ধরে থাকেন, তাহলে মিসর কঠিন অবস্থানে পড়তে পারে।

তিনি ট্রাম্পের হুমকির কথা উল্লেখ করেছেন। ওই হুমকিতে মিসর সহযোগিতা না করলে মার্কিন সাহায্য বন্ধের কথা বলা হয়েছে। এরিকসন বলেন, যখন মিসর ঋণ ও মুদ্রাস্ফীতির কারণে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, তখন এটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।

মিসরে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৬ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র মিসরকে ৮৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি দ্বিপক্ষীয় বৈদেশিক সাহায্য দিয়েছে। যার মধ্যে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা অন্তর্ভুক্ত। ২০২৩ সালে মিসর ছিল মার্কিন বৈদেশিক সাহায্যের পঞ্চম বৃহত্তম প্রাপক, যারা ১.৪৫ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। এর ৮৫ শতাংশই সামরিক খাতের জন্য।

মিসরীয় সাংবাদিক হোসাম এল-হামালাউই বলেন, কায়রো যে সাহায্য পায়, তা মিসরকে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং ওয়াশিংটনের শক্তিশালী রাজনৈতিক সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়। তবে অর্থই সব নয়। বিদেশি সহায়তা বর্তমান মিসরীয় প্রশাসনের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য হলেও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক শান্তিও সমান গুরুত্বপূর্ণ, যা ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করা হলে বিঘ্নিত হতে পারে।

এল-হামালাউই বলেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মিসরীয় যুবকদের জন্য ফিলিস্তিন রাজনীতিতে প্রবেশের দরজা হয়ে এসেছে। মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি বৈরুতের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি নিয়ে খুব চিন্তিত, যেখানে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ অপারেশন কোনও না কোনোভাবে ইসরায়েলকে লেবাননে প্রবেশের এবং দীর্ঘ সময় ধরে এর অংশ দখলের অজুহাত দিয়েছে।

প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্প ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার কথা বলা বন্ধ না করা পর্যন্ত আল-সিসি হোয়াইট হাউজে কোনও আলোচনায় অংশ নেবেন না বলে জানা গেছে। মিসরের কাছে এখন অন্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে একটি বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে কাজ করার বিকল্প খুব কম। রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবদুল্লাহ নাসেফ আল জাজিরাকে বলেন, যেকোনও চরম পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিগুলোকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

তিনি মনে করেন, মিসরকে প্রস্তাবে কিছুটা আপস করতে হতে পারে।

নাসেফের পরামর্শ অনুযায়ী, মিসর জর্ডানের মতো আহত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারকে গ্রহণ করতে পারে। রাজা আবদুল্লাহ মঙ্গলবার বলেছেন, জর্ডান অবিলম্বে ২ হাজার অসুস্থ শিশুকে গ্রহণ করতে পারে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মিসর আহত ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসা দিয়ে আসছে এবং ক্রসিং খোলা হলে আরও বেশি সংখ্যায় তা চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গবেষক জ্যাকব এরিকসন বলেন, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে গাজার পুনর্গঠনে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অবদান রাখা মিসরের পক্ষে কঠিন হবে। তবে মিসরীয় কর্মকর্তারা নিঃসন্দেহে মধ্যস্থতাকারী ও রাজনৈতিক অংশীদার হিসেবে তাদের ভূমিকা চালিয়ে যাবে।

পুনর্গঠন প্রচেষ্টা
ইসরায়েল বলেছে যে, তারা ফিলিস্তিনিদের ক্ষতিপূরণ দেবে না বা গাজায় তাদের সৃষ্ট ক্ষতি মেরামত করতে সাহায্য করবে না। এর পরিবর্তে, মিসর ও জর্ডানের প্রস্তাবিত কোনও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পড়বে আঞ্চলিক দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর।

এল-হামালাউই বলেন, এটা অনুমান করা যায় যে, এই পরিকল্পনায় উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করা হবে, যাতে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত না করেই দ্রুত পুনর্গঠন করা যায়।

মিসরের নির্মাণ কোম্পানিগুলো গাজা পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, রিয়েল এস্টেট ও নির্মাণ মোগল হিশাম তালাত মোস্তাফা ৯ ফেব্রুয়ারি একটি টিভি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি একটি পুনর্গঠন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন, যেখানে মিসর ও অন্যান্য দেশের ৪০ থেকে ৫০টি নির্মাণ কোম্পানির অংশগ্রহণ প্রয়োজন হবে।

নাসেফ বলেন, মিসর পুনর্গঠন প্রচেষ্টায় অবদান রাখতে পারে। একই সঙ্গে গাজাবাসীদের বাধ্যতামূলক বাস্তুচ্যুত করা এড়ানো যায়। তিনি এল-হামালাউইর সঙ্গে একমত হয়ে বলেছেন, মিসরের অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে উপসাগরীয় দেশগুলোর আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন হবে।

গত কয়েক মাসে গাজা উপত্যকায় পৌঁছানো ত্রাণের অর্থায়নে উপসাগরীয় দেশগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) ডিসেম্বরে ঘোষণা করেছে যে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো—বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত—গাজা ও পশ্চিম তীরে ৬৫০ মিলিয়ন ডলার মানবিক সাহায্য দিয়েছে।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় বেশিরভাগ ভবন ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। উপত্যকা পুনর্গঠনে আরও অনেক বেশি অর্থের প্রয়োজন হবে। তবে ট্রাম্পের গাজা বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনা বিষয়টিকে জটিল করে তুলেছে এবং গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে পড়ার হুমকিতে থাকায় আরব দেশগুলো এখন চাপের মুখে রয়েছে।

 

/এএ/
সম্পর্কিত
ভারতের সামরিক অভিযান ‘আসন্ন’, বললেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
স্পেন-পর্তুগালে বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিপর্যয়, অচল জনজীবন
ক্ষুধার্ত গাজাবাসীদের ভিড় কমিউনিটি কিচেনে, খাবারের জন্য লড়াই
সর্বশেষ খবর
৪ হাজার ২৬১ কোটি টাকার লাইনে চলে একটি ট্রেন
৪ হাজার ২৬১ কোটি টাকার লাইনে চলে একটি ট্রেন
টিভিতে আজকের খেলা (২৯ এপ্রিল, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (২৯ এপ্রিল, ২০২৫)
রাজস্ব নীতিতে অভিজ্ঞতার অবমূল্যায়নের অভিযোগ কাস্টমস ও ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের
রাজস্ব নীতিতে অভিজ্ঞতার অবমূল্যায়নের অভিযোগ কাস্টমস ও ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের
পুলিশ সপ্তাহ শুরু আজ
পুলিশ সপ্তাহ শুরু আজ
সর্বাধিক পঠিত
‘আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই, শুধু আ.লীগ করে বলে মাইরা ফেলাইছে’
‘আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই, শুধু আ.লীগ করে বলে মাইরা ফেলাইছে’
ইউআইইউ বন্ধ ঘোষণা
ইউআইইউ বন্ধ ঘোষণা
প্রশাসনে অস্থিরতা কাটছেই না, বাড়ছে ক্ষোভ-অসন্তোষ
প্রশাসনে অস্থিরতা কাটছেই না, বাড়ছে ক্ষোভ-অসন্তোষ
মানবিক করিডোরের জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে সরকার
মানবিক করিডোরের জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে সরকার
ধর্ষণের অভিযোগে ইমামকে গণপিটুনি, কারাগারে মৃত্যু
ধর্ষণের অভিযোগে ইমামকে গণপিটুনি, কারাগারে মৃত্যু