এথেন্সের এক উষ্ণ বসন্ত রাত গভীর হতে চলেছে। একটি গ্রিক জাহাজ কোম্পানির একজন শীর্ষ নির্বাহী নিজের ব্যক্তিগত ইনবক্সে একটি অস্বাভাবিক ইমেইল লক্ষ্য করেন। এই ইমেইলটি তার অফিসিয়াল ইমেইল ঠিকানায়ও পাঠানো হয়েছিল। বার্তাটি ছিল একটি সতর্কবার্তা। এতে বলা হয়েছে, কোম্পানিটির একটি জাহাজ লোহিত সাগরে হুথিদের আক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে।
এই গ্রিক-পরিচালিত জাহাজটি ইসরায়েলের একটি বন্দরে নোঙর করেছিল। যা হুথিদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করেছে। ইমেইলে বলা হয়, ‘ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী যে কোনও অঞ্চলে এই জাহাজটিকে সরাসরি লক্ষ্যবস্তু করতে পারে’। এতে আরও বলা হয়, জাহাজটিকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সব দায় আপনার।
এই ইমেইলটি ইয়েমেনভিত্তিক ‘হিউম্যানিটেরিয়ান অপারেশন কো-অর্ডিনেশন সেন্টার’ (এইচওসিসি) থেকে পাঠানো হয়েছে। এটি হুথি বাহিনী ও বাণিজ্যিক জাহাজ অপারেটরদের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য ফেব্রুয়ারিতে গঠিত হয়।
ইমেইলে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কোম্পানিটির পুরো নৌবহর নিষেধাজ্ঞার শিকার হতে পারে যদি জাহাজটি নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন এবং দখলদার ইসরায়েলি রাষ্ট্রের বন্দরে প্রবেশ করে। ইমেইলটির প্রাপক নির্বাহী কর্মকর্তা এবং কোম্পানিটি নিরাপত্তার কারণে তাদের নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
মে মাসের শেষ দিকে প্রাপ্ত এই সতর্কবার্তাটি ছিল আরও অন্তত ছয়টি গ্রিক শিপিং কোম্পানিকে পাঠানো বার্তাগুলোর মধ্যে একটি। হুথিরা সম্প্রতি বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করেছে। বিশেষ করে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজগুলোতে। এই হুমকিমূলক ইমেইলের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে যে হুথি বিদ্রোহীরা গ্রিক বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে। যদিও সেগুলোর ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই।
হুথিদের আক্রমণে লোহিত সাগর দিয়ে যাতায়াতকারী প্রায় ৩০ শতাংশ গ্রিক মালিকানাধীন জাহাজ আক্রান্ত হয়েছে। আগস্টে হুথিরা সৌনিওন ট্যাংকারে আক্রমণ চালায়। দীর্ঘদিন ধরে জাহাজটি আগুনে পুড়তে থাকে।
হুথিদের আক্রমণ রোধে অনেক জাহাজ মালিকরা এখন আফ্রিকার চারপাশ ঘুরে দীর্ঘতর পথ অনুসরণ করছে। সুয়েজ খাল দিয়ে জাহাজ চলাচল উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী ‘আসপিদেস’ হুথিদের কৌশলগত পরিবর্তনের বিষয়টি সেপ্টেম্বরের শুরুতে এক বৈঠকে নিশ্চিত করেছে। তারা জানায়, হুথিরা পুরো নৌবহরকে লক্ষ্য করছে। যা তাদের সামরিক অভিযানের নতুন চতুর্থ ধাপ।
হুথিদের এই ইমেইল সতর্কবার্তা মূলত ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে ইমেইলগুলোতে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে মে মাসের পর থেকে এগুলো ক্রমশ হুমকিমূলক হয়ে উঠেছে। নিরাপত্তার কারণে বেশ কিছু গ্রিক শিপিং কোম্পানি লোহিত সাগরের রুট ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে।
ইরান সমর্থিত হুথিদের এই আক্রমণ এবং ইমেইল সতর্কবার্তা বাণিজ্যিক জাহাজ খাতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কোম্পানিগুলোকে এখন নতুন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হচ্ছে এবং অনেকেরই বিমার খরচ বেড়ে গেছে।
সূত্র: রয়টার্স