ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদ ও সুরাটের দুইটি প্রধান শহরে অবৈধভাবে বসবাসকারী ১০২৪ বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) ভোর ৩টা থেকে শুরু হওয়া অভিযানে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয় বলে দাবি করেছে গুজরাট পুলিশ। ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এ খবর জানিয়েছে।
পুলিশের মতে, আহমেদাবাদ থেকে ৮৯০ জন এবং সুরাট থেকে ১৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আহমেদাবাদের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, শনিবার ভোর ৩টা থেকে আহমেদাবাদ ক্রাইম ব্রাঞ্চ, এসওজি, ইডব্লিউও, জোন ৬ এবং সদর দপ্তরের দলগুলোর সঙ্গে একযোগে আহমেদাবাদ শহরে অবৈধভাবে বসবাসরত বিদেশি অভিবাসীদের গ্রেফতার করতে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করেছে। এই অভিযানে চারশোর বেশি সন্দেহভাজন অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ তবে দুপুরের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৯০ জনে। অধিকাংশ ব্যক্তিকে আহমেদাবাদ শহরের চান্দোলা লেক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আটকদের প্রথমে কানকারিয়া ফুটবল গ্রাউন্ডে রাখা হয়। পরে শহরের রাস্তা ধরে তাদের সবাইকে একসাথে ক্রাইম ব্রাঞ্চের গাইকোয়াড় হাভেলি সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এর ড্রোন ভিডিও গুজরাট পুলিশ ছড়িয়ে দেয়।
এদিকে সুরাট থেকে কথা বলার সময় গুজরাটের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হর্ষ সংঘভী মধ্যরাতের এই অভিযানকে ‘ঐতিহাসিক বিজয়’ বলে অভিহিত করেন।
উল্লেখ্য কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জন্য ভারত সরকার পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। সেসময় গুজরাটে শনিবার গ্রেফতার করা সকল ব্যক্তিকেই বাংলাদেশি নাগরিক বলে দাবি করা হয়েছে।
এ বিষয় নিয়ে পরে গুজরাট পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হর্ষ সংঘভীর বৈঠক হয়েছে। বৈঠক শেষে সংঘভী বলেন, গ্রেফতারকৃতরা পশ্চিমবঙ্গ হয়ে ভুয়া নথি তৈরি করে অবৈধভাবে গুজরাট ও ভারতের অন্যান্য রাজ্যে প্রবেশ করে। এদের মধ্যে অনেকে মাদক পাচার, মানব পাচারকারীদের সাথে যুক্ত। এর আগেও দুই বাংলাদেশিকে আল-কায়েদার স্লিপার সেলের সদস্য হিসেবে ধরা হয়েছিল।
সংঘভী সমস্ত অবৈধ অভিবাসীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, নিজ ইচ্ছায় স্থানীয় থানায় গিয়ে ২ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করুন, নাহলে গুজরাট পুলিশ আপনাদের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নেবে। এই নির্দেশ ইতোমধ্যেই গুজরাটের সর্বত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
ডিজিপি বিকাশ সাহায় জানান, গ্রেফতার বাংলাদেশি নাগরিকদের আইনি অবস্থান খতিয়ে দেখার জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, গুজরাট রাজ্যজুড়ে বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসীদের আটকের অভিযান চলবে। সমস্ত জেলার পুলিশ প্রধানদের এই সংক্রান্ত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংঘভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা নিরাপত্তা কমিটির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঠিক একইভাবে কোনও দেশের অবৈধ অভিবাসী যেন গুজরাটে না থাকে সেটি নিশ্চিত করা রাজ্য সরকারের দায়িত্ব। মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেলের নির্দেশে গুজরাট পুলিশ এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
অবৈধ বাংলাদেশিদের অবৈধভাবে থাকার জন্য যারা সাহায্য করছে তাদের উদ্দেশ্যে হুমকি দিয়ে সংঘভী বলেন, যদি কারও আশ্রয়ে একজনও অনুপ্রবেশকারী থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধেও সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভুয়া নথি তৈরি করে বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসীদের সাহায্য করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও তদন্ত হবে।