X
সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫
২৪ চৈত্র ১৪৩১

হুমকির মুখে ভারতের নদীতে বসবাসকারী ৬ হাজার ডলফিন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:৪০আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:৪০

ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘ এবং পবিত্র নদী গঙ্গায় হাজার হাজার ডলফিনের বাস। কিন্তু এখন তাদের বেঁচে থাকাটাই হুমকির মুখে পড়েছে।

তবে এরা সেই সমুদ্রের ডলফিনদের মতো নয়। এরা পানির ওপরে ঝাঁপিয়ে ওঠে না, দীর্ঘ সময় পানির ওপরে থাকে না, কিংবা সোজা হয়ে সাঁতার কাটে না। বরং তারা পাশ ফিরে সাঁতার কাটে, বেশিরভাগ সময় পানির নিচে থাকে, লম্বা ঠোঁট থাকে এবং প্রায় সম্পূর্ণ অন্ধ।

এরা হলো গাঙ্গেয় ডলফিন, এক ধরনের নদীর ডলফিন প্রজাতি এবং ভারতের জাতীয় জলজ প্রাণী, যা মূলত দেশের উত্তরাংশের গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র নদীতে দেখা যায়।

একটি নতুন জরিপ অনুযায়ী, ভারতের নদীগুলোতে প্রায় ৬ হাজার ৩২৭টি নদীর ডলফিন রয়েছে। এর মধ্যে ৬ হাজার ৩২৪টি গাঙ্গেয় ডলফিন এবং মাত্র তিনটি সিন্ধু ডলফিন। সিন্ধু ডলফিনদের বেশিরভাগই পাকিস্তানে দেখা যায়। কারণ নদীটি উভয় দেশ দিয়েই প্রবাহিত হয়।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা (আইইউসিএন) উভয় প্রজাতিকে ‘বিপন্ন’ তালিকাভুক্ত করেছে।

ভারতের বন্যপ্রাণী ইনস্টিটিউটের গবেষকরা ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ১০টি রাজ্যের ৫৮টি নদীজুড়ে এই প্রথমবারের মতো একটি পূর্ণাঙ্গ ডলফিন জরিপ করেছেন।

হুমকির মুখে নদীর ডলফিন। ছবি: ওয়েবসাইট।

নদীর ডলফিনের উৎপত্তিও তাদের মতোই আকর্ষণীয়। বিজ্ঞানীরা বলেন, এদের ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’ বলা হয়। কারণ তারা কোটি বছর আগে সমুদ্রীয় পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়েছে।

একসময় যখন দক্ষিণ এশিয়ার নিচু অঞ্চলগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে চলে গিয়েছিল, তখন এই ডলফিনগুলো ভেতরের দিকে সরে আসে এবং পানি সরে যাওয়ার পরও তারা থেকে যায়। সময়ের সাথে সাথে তারা অগভীর, ঘোলা পানির নদীগুলোর সাথে খাপ খাইয়ে নেয় এবং এমন বৈশিষ্ট্য গড়ে তোলে যা তাদের সমুদ্রের ডলফিনদের থেকে আলাদা করে তোলে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, নতুন এই জরিপ ডলফিনদের সংখ্যা পর্যবেক্ষণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৮০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০০টি ডলফিন মারা গেছে। অনেকেই জেলেদের জালে ধরা পড়েছে বা ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যার শিকার হয়েছে, যা এই প্রজাতির ওপর চলমান হুমকিকে নির্দেশ করে।

সংরক্ষণবাদী রবিশ্রী কুমার সিনহা বলেন, ২০০০ এর দশকের শুরুর দিক পর্যন্ত নদীর ডলফিন সম্পর্কে সচেতনতা ছিল খুবই কম।

সংরক্ষণের উৎসাহ দিতে ২০০৯ সালে গাঙ্গেয় ডলফিনকে ভারতের জাতীয় জলজ প্রাণী ঘোষণা করা হয়। ২০২০ সালের একটি অ্যাকশন প্ল্যান ও ২০২৪ সালের একটি নিবেদিত গবেষণা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ ডলফিনের সংখ্যা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করেছে।

তবে ডলফিন এখনও শিকার হচ্ছে মাংস ও চর্বির জন্য।  অনেক সময় নৌকার সাথে সংঘর্ষে বা জালে আটকে গিয়েও ডলফিন মারা যায়। অনেক জেলেই আইনি ঝামেলার ভয়ে ডলফিন মারা যাওয়ার ঘটনা জানায় না।

ভারতের বন্যপ্রাণী আইনে, ইচ্ছাকৃত বা দুর্ঘটনাজনিত ডলফিন হত্যা শিকার হিসেবে গণ্য হয় এবং এর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।

গত এক দশকে ভারতের নদীগুলোর ওপর রিভার ক্রুজ ট্যুরিজম বা নৌভ্রমণ অনেক বেড়েছে যা ডলফিনদের আবাসস্থলকে আরও হুমকির মুখে ফেলেছে। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র উভয় নদীতেই এখন ডজন ডজন ক্রুজ ট্রিপ চলছে।

রবিশ্রী কুমার সিনহা ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকাকে বলেন, কোনও সন্দেহ নেই যে, ক্রুজ থেকে সৃষ্ট বিরক্তি ডলফিনদের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে। কারণ তারা শব্দের প্রতি সংবেদনশীল।

সিনহা মনে করেন, বাড়তি জাহাজ চলাচল গাঙ্গেয় ডলফিনকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিতে পারে। যেভাবে চীনের ইয়াংসি নদীতে বাইজি ডলফিন বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।

এছাড়া নদীর ডলফিনরা কিছুটা নিজের বিবর্তনের কারণেই আজ হুমকিতে পড়েছে। প্রায় অন্ধ এই প্রাণীগুলো প্রতিধ্বনি নির্ভর শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে দিক নির্ধারণ করে। এটি তাদের ঘোলা পানির নদীতে সাহায্য করলেও আধুনিক হুমকির সামনে তাদের দুর্বল করে তোলে।

তাদের দুর্বল দৃষ্টিশক্তি এবং ধীর গতি তাদের নৌকা বা অন্যান্য বাধার সঙ্গে সংঘর্ষের ঝুঁকিতে ফেলে। তার ওপর, তাদের পুনরুৎপাদন ক্ষমতাও খুব ধীর। এরা সাধারণত ৬ থেকে ১০ বছর বয়সে প্রজনন সক্ষম হয় এবং একটি স্ত্রী ডলফিন প্রতি ২ থেকে ৩ বছরে মাত্র একটি করে বাচ্চার জন্ম দেয়।

সূত্র: বিবিসি

/এস/
সম্পর্কিত
বিশ্বে তেলের দাম চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
গাজার ৫০ শতাংশ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে, সংকুচিত হয়ে পড়ছেন ফিলিস্তিনিরা
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩২, বেশিরভাগই নারী ও শিশু
সর্বশেষ খবর
যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় ২ নেত্রী রিমান্ডে
যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় ২ নেত্রী রিমান্ডে
মার্চে রফতানি আয়ে উল্লম্ফন, গার্মেন্ট খাতের হাত ধরে ১১.৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
মার্চে রফতানি আয়ে উল্লম্ফন, গার্মেন্ট খাতের হাত ধরে ১১.৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
বিশ্বে তেলের দাম চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
বিশ্বে তেলের দাম চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
জাকারিয়া হোসেন চলতি দায়িত্বে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী
জাকারিয়া হোসেন চলতি দায়িত্বে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী
সর্বাধিক পঠিত
রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল
রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল
‘এবার বাঁচার আশা নেই’: শেষ বার্তা লিখছেন গাজাবাসী 
‘এবার বাঁচার আশা নেই’: শেষ বার্তা লিখছেন গাজাবাসী 
গাজাকে বিভক্ত করতে ইসরায়েলের নতুন পরিকল্পনা ‘মোরাগ অ্যাক্সিস’
গাজাকে বিভক্ত করতে ইসরায়েলের নতুন পরিকল্পনা ‘মোরাগ অ্যাক্সিস’
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কালবৈশাখী ঝড়
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কালবৈশাখী ঝড়
অবশেষে অবসান...
অবশেষে অবসান...