কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে বিনীত গোয়েলকে সরিয়ে দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা কর্মকর্তাকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে আবারও জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকের পর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আর জি করে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্নায় বসেছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সোমবার ছিল ধর্নার সপ্তমতম দিন। এই কয়েক দিনের মধ্যে রাজ্যের তরফে জট কাটানোর চেষ্টা হয়। কিন্তু দুই পক্ষই নিজেদের কিছু অবস্থানে অনড় থাকায় বৈঠক হয়নি। প্রথম থেকেই ডাক্তারেরা চেয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার।
আন্দোলনকারী ডাক্তারদের প্রতিনিধি দলকে প্রথমে নবান্নে ডাকা হয়েছিল। একটি প্রতিনিধি দল নবান্নের সামনে পৌঁছেও গিয়েছিল। কিন্তু সরাসরি সম্প্রচারের দাবিতে তাঁরা অনড় থাকায় বৈঠক হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট তিনি বসেছিলেন। চেয়েছিলেন সুষ্ঠু আলোচনার। কিন্তু তা হল না।
অন্যদিকে জুনিয়র চিকিৎসকেরা জানান, তাঁরাও চান কাজে ফিরতে। কিন্তু দাবি মেনে সরকার পক্ষ বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার করলে তবেই বৈঠক হবে।
নবান্নে বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর গত শনিবার আচমকাই সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্নামঞ্চে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেখান থেকে ডাক্তারদের কাজে ফেরার অনুরোধ করেন। সে দিনই বিকালে আন্দোলনকারীদের তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে আলোচনার জন্য ডাকা হয়। আলোচনা শেষে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে যান চিকিৎসকেরা। বৃষ্টির মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে পৌঁছে গিয়েছিল চিকিৎসকদের প্রতিনিধি দল। কিন্তু সে দিনও সরাসরি সম্প্রচার এবং বৈঠকের ভিডিয়োগ্রাফির দাবি নিয়ে শুরু হয় সরকার ও ডাক্তারদের মতানৈক্য। আবার ভেস্তে যায় বৈঠক।
আবার বৈঠকের জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকে রাজ্য। সোমবার রাজ্যের পাঠানো ই-মেইলে জানানো হয় গত শনিবার ডাক্তারদের যে প্রতিনিধিরা বৈঠকের জন্য কালীঘাটে এসেছিলেন, সোমবারও তাঁদের যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে। সোমবারও চিকিৎসকদের ৩০ জন প্রতিনিধিকেই ঢুকতে দেওয়া হতে পারে। ই-মেইলে বৈঠকের সময় দেওয়া হয় বিকেল ৫টা। বৈঠকস্থল মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি। মুখ্যসচিবের তরফে সকাল ১১টা ৪৮ মিনিটে ওই ই-মেইল পান জুনিয়র ডাক্তারেরা। ই-মেইলে জানানো হয়, সরকারের তরফ থেকে এটাই ‘পঞ্চম এবং শেষ চেষ্টা’।
সরকারের তরফে বৈঠকের আমন্ত্রণ পাওয়ার পর সোমবার দুপুর পর্যন্ত বৈঠক করেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা। শেষ পর্যন্ত তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, আলোচনায় যোগ দেবেন। বৈঠকে যেতে রাজি হলেও সরকারকে তিনটি শর্ত দেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতেশুরু হয় বৈঠক। অনিকেত মাহাতো, কিঞ্জল নন্দ, অনিকেত কর, লহরী সরকার, রক্তিম মজুমদার, পরিচয় পাণ্ডা, অমৃতা ভট্টাচার্য, রুমেলিকা কুমার-সহ ৩০-৩৫ জন জুনিয়র ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে বের হন জুনিয়র চিকিৎসকরা। জুনিয়র চিকিৎসক দেবাশিস হালদার বলেন,আমাদের পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে সদার্থক আলোচনা হয়েছে। বাকি ডিটেল ধরনা মঞ্চে বলব।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দুই পক্ষই এই বৈঠকের মিনিটস সই করেছেন। রাজ্যের তরফে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ও ৪২ জন জুনিয়র ডাক্তার এই মিনিটসে স্বাক্ষর করেন।
জুনিয়ার ডাক্তারদের প্রতি মমতার বার্তা, ‘আপনারা হাসপাতালে ফিরে যান, কারোর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না’ একই সঙ্গে তাঁদের কাজে যোগ দিতে অনুরোধ করেন তিনি। প্রসঙ্গত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘এই বৈঠক ইতিবাচক হয়েছে।’ উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বেলায় রয়েছে আর জি কর মামলার সুপ্রিম শুনানি। তার আগে এই বৈঠক নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।
মমতা বলেন, আমরা উভয়পক্ষই খুশি যে আমরা এতক্ষণ ধরে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করতে বলেছি। ওঁরা অনেক কিছু বিষয় উত্থাপন করেছে। ওঁদের পাঁচটি দাবি ছিল। তাঁদের সেই দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেল চারটে পর্যন্ত কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদে থাকবেন বিনীত। তারপর নয়া পুলিশ কমিশনার পাবে কলকাতা। তবে শুধু বিনীত নন,জুনিয়র ডাক্তাররা যাদের সরানোর দাবি তুলেছিলেন,তাদের প্রায় সকলকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তুভ নায়েককেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরানো হয়েছে কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (নর্থ) অভিষেক গুপ্তাকেও।
ডাক্তারদের এক প্রতিনিধি বলেন,যেটুকু দাবি আমরা পূরণ করিয়ে আনতে পেরেছি সেটাও আমাদের আন্দোলনের জয়। এটুকু পেতে আমাদের ৩৮ দিন সময় লেগে গেল। আমরা বিক্ষোভ মঞ্চে ফিরে যাচ্ছি। সেখানে আন্দোলনকারী ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনা করে তার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানি রয়েছে সে দিকে নজর থাকবে আমাদের। এ ছাড়াও কত দিনে আমাদের দাবিগুলি বাস্তবায়িত হয় সে দিকেও নজর থাকবে আমাদের।