X
সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪
১৭ আষাঢ় ১৪৩১

দুর্বল সংগঠনই কি কাল হলো পশ্চিমবঙ্গে, প্রশ্ন উঠছে বিজেপির অন্দরে

রক্তিম দাশ, কলকাতা
০৫ জুন ২০২৪, ২৩:৫৮আপডেট : ০৫ জুন ২০২৪, ২৩:৫৮

এত সম্ভাবনা দেখিয়ে, বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলকে উড়িয়ে দিয়ে শেষ পর্যন্ত একুশের বিধানসভা ভোটের ফলাফলকেই লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গে পুনরাবৃত্তি করলো বিজেপি। কেন এমন হলো? এ প্রশ্নের উত্তর আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও মুরলীধর সেন লেনের কর্তারা না দিলেও, দলের অভ্যন্তরে দুর্বল সংগঠন আর ‘সেটিং তত্ত্ব’ বারবার সামনে আসছে। ইতোমধ্যে এ নিয়ে প্রকাশ্যেই মুখ খুলেছেন দিলীপ ঘোষ ও বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খান। আর যা নিয়ে বুধবার দিনভর বিতর্ক চরমে উঠছে।

বারবার আশা জাগিয়েও কেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির এই হাল তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘বুথ পর্যন্ত শক্তিশালী সংগঠন না থাকার জন্য যে লড়াইটা দেওয়ার কথা ছিল তা দিতে পারেনি বিজেপি। সভা, সমাবেশে ভিড় যতই হোক না কেন, ভোটের দিন বুথে আর গণনার দিন সঠিক এজেন্ট না থাকার কারণে শেষ লড়াইটা লড়তে পারেনি বিজেপি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির দক্ষিণ ২৪ পরগণার একটি বিধানসভার দায়িত্বে থাকা এক অভিজ্ঞ নেতা বলেন, ‘দেশের অন্য রাজ্যের মতো এখানে ভোট হয় না। বাম আমল থেকেই এখানে ভোট করাতে হয়। সেই মেসিনারি আমরা আজও গড়ে তুলতে পারিনি। যার একটা বুথ জেতানোর ক্ষমতা নেই সে দিচ্ছে লোকসভা ম্যানেজমেন্ট কমিটির নেতৃত্ব। আমরা জানতেই পারলাম না কারা কাউন্টিং এজেন্ট হলেন তারা কী সেটিং করে নিলেন। না, এই ফল হওয়ার কথা নয়। মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছে। আমরাই আমাদের হারিয়েছি সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে।’

দলের কারোর নাম না করে মুখ না আনলেও একইভাবে এদিন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষও বলেন, ‘ব্যক্তিগত রেষারেষি ও ভুল নীতির কারণে এভাবে হাজার হাজার কর্মীর আত্মত্যাগ বিফলে গেলে পরবর্তীতে তাদের দলের কাজে লাগানো মুশকিল হয়ে যাবে। দলের ওপর থেকে মানুষের আস্থা চলে যাবে।’

কেন্দ্রীয় নেতারাও বারবার একযোগে লড়াই করার কথা বলেছেন। কিন্তু প্রকাশ্যে না আসলেও গেরুয়া শিবিরের অন্দরে ছিল অন্তর্দ্বন্দ্ব। যা নিয়ে প্রকাশ্যেই মুখ খুলেছেন সৌমিত্র খানও। তিনি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তৃণমূলের সেটিংয়ের অভিযোগও আনলেন। তার সাফ কথা, ‘দলের মাথায় অনভিজ্ঞ লোককে বসিয়ে, অভিজ্ঞ লোকেদের নিচে নামিয়ে রাখা হয়েছিল। যতটুকু জয় পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি পেয়েছে তা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের জন্য। আরএসএস কর্মীদের কারণেই এই জয় এসেছে।’

সৌমিত্রের দাবি, ‘বুধবার অহেতুক গন্ডগোল পাকিয়ে দেরি করিয়ে প্রার্থী ও কর্মীদের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছিল তৃণমূল। সেটাই ওদের স্ট্র্যাটেজি ছিল। তাতে ওরা সফল। ২০১৯ সাল অবধি দলকে স্থানীয় স্তরে রাজ্য বিজেপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায় যেভাবে স্থানীয় স্তরে জনসংযোগ তৈরি করতে পেরেছিলেন, তারপর আর হয়নি।

সৌমিত্রের কথা, শুভেন্দু অধিকারী চেষ্টা করলেও পারেননি। রাজ্যের বিজেপির ওপরতলার নেতাদের সঙ্গে তৃণমূলের একটা বোঝাপড়া হয়ে গিয়েছিল। না হলে আরও কয়েকটি আসন জিততে পারত বিজেপি।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শুধু সাংগঠনিক দুর্বলতা নয়, আরও বেশ কিছু ফ্যাক্টরও কাজ করেছে এই ফলাফলের নেপথ্যে। কয়েকটি আসনে সাংসদদের এবার ফের টিকিট দিয়েছে বিজেপি। তবে কয়েকটি আসনে আনা হয়েছে নতুন প্রার্থী। পুরনো সাংসদের কেন্দ্র বদল করার ঘটনাও ঘটেছে। মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে দিলীপ ঘোষকে টিকিট দেওয়া হয়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুরে। ফলাফলে দেখা গেলো, মেদিনীপুর আর বর্ধমান-দুর্গাপুর দুটি কেন্দ্রই হাতছাড়া হলো বিজেপির। এস এস আলুওয়ালিয়াকে বর্ধমান-দুর্গাপুর থেকে আসানসোলে নিয়ে গিয়ে কোনও লাভ হলো না। আবার দেবশ্রী চৌধুরীকে রায়গঞ্জ থেকে সরিয়ে দক্ষিণ কলকাতায় আনায় রায়গঞ্জের জমি রক্ষা হলো ঠিকই, কিন্তু দেবশ্রী আর জিতলেন না।

এ নিয়ে সৌমিত্র খানের সাফ কথা, দিলীপ ঘোষের মতো নেতাদের আগেরবার জয়ী হওয়া আসন থেকে সরানো উচিত হয়নি। এবার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প একটা আলাদা গুরুত্ব পেয়েছে। বিজেপির নেতারা এই প্রকল্পের ৫০০ কিংবা হাজার রুপিকে ভিক্ষাবৃত্তির সমান মনে করলেও, রাজ্যের অনেক নারী কাছে ওই অর্থই জীবনের ‘প্রথম রোজগার’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ভোটের মুখে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা দ্বিগুণ করে দেওয়ার ‘ডিভিডেন্ড’ ঘরে তুলছে তৃণমূল।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মতে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়েই অনেকে ভোট দিয়েছে তৃণমূলকে। বিষ্ণপুরের সাংসদেরও দাবি, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ও সংখ্যালঘু ফ্যাক্টর তৃণমূলের জন্য কাজ করেছে। বিজেপি নারী মুখ তৈরি করতে পারেনি।

শিক্ষা থেকে পৌর নিয়োগ–একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে বর্তমান শাসক দলকে বিদ্ধ করে বিজেপি। কিন্তু তা নিয়ে জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি গেরুয়া শিবির। যার ফলে ভোটারদের মনে তার খুব একটা যে ছাপ পড়েনি তা ভোটের ফলাফলেই স্পষ্ট।

ভোটের ঠিক আগেই সন্দেশখালির ঘটনা সামনে আসে, ভোট যত এগিয়েছে বিজেপি সন্দেশখালিকে কার্যত ইস্যুতে রূপান্তরিত করেছে। তবে যে লোকসভার আসনের মধ্যে এই সন্দেশখালি অবস্থিত, সেই বসিরহাটেই প্রভাব ফেলতে পারেনি ইস্যুটি।

বিজেপির নীতি নির্ধারকরা মনে করেছিলেন, বাম-কংগ্রেস একজোট হয়ে ভোটে ভাগ বসানোর খেলা খেলবে। বিশেষ করে তৃণমূলের সংখ্যালঘু মুসলিম ভোটব্যাংকে থাবা বসাবে। কিন্তু সংখ্যালঘু ভোটে তারা থাবা বসাতে পারেনি। আইএসএফও সংখ্যালঘু ভোটে তেমন প্রভাব ফেলেনি। ফলে সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকের সিংহভাগটাই তৃণমূলের সঙ্গে থেকে গেছে। উল্টো সিপিএম যাদবপুর, দমদমের মতো বেশ কয়েকটি আসনে বিরোধী ভোট, অর্থাৎ বিজেপির ভোটে ভাগ বসিয়ে তৃণমূলের ফায়দা করে দিয়েছে।

/এএ/
সম্পর্কিত
ফ্রান্সে প্রথম ধাপের নির্বাচনে ডানপন্থিদের জয়
ভারতে নতুন ফৌজদারি আইন কার্যকর
ফ্রান্সের নির্বাচন: ৪ দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি
সর্বশেষ খবর
জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ রোল মডেল: ডিএমপি কমিশনার
জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ রোল মডেল: ডিএমপি কমিশনার
বগুড়ায় ট্রাকের পেছনে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কা, শিশুসহ দুজন নিহত
বগুড়ায় ট্রাকের পেছনে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কা, শিশুসহ দুজন নিহত
সামনে বেলজিয়াম, এমবাপ্পের ভাঙা নাকও এখন টার্গেট! 
সামনে বেলজিয়াম, এমবাপ্পের ভাঙা নাকও এখন টার্গেট! 
ফ্রান্সে প্রথম ধাপের নির্বাচনে ডানপন্থিদের জয়
ফ্রান্সে প্রথম ধাপের নির্বাচনে ডানপন্থিদের জয়
সর্বাধিক পঠিত
রাষ্ট্র আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় কি না, প্রশ্ন ব্যারিস্টার সুমনের
রাষ্ট্র আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় কি না, প্রশ্ন ব্যারিস্টার সুমনের
নরসিংদীতে সাপের কামড়ে ১৪ জন হাসপাতালে
নরসিংদীতে সাপের কামড়ে ১৪ জন হাসপাতালে
এই বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি খেতে কোথায় যাবেন?
এই বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি খেতে কোথায় যাবেন?
নতুন অর্থবছরের বাজেট পাস
নতুন অর্থবছরের বাজেট পাস
৪ ফ্ল্যাটের চাবি বেনজীরের কাছে, প্রবেশ করতে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ
৪ ফ্ল্যাটের চাবি বেনজীরের কাছে, প্রবেশ করতে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ