জার্মানির পরবর্তী নেতা হওয়ার দৌড়ে আছেন চারজন প্রার্থী। এরা হলেন বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, বিরোধী দলের নেতা ফ্রিডরিখ মের্জ, বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর রবার্ট হাবেক এবং প্রথমবারের মতো একজন কট্টর ডানপন্থী দলের নেতা অ্যালিস ওয়েইডেল।আগামী রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) জার্মানিতে ফেডালেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী জার্মানির ইতিহাসে চতুর্থ আগাম নির্বাচন এটি। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর এ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। তবে বর্তমান সরকারের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করা নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে ক্ষমতাসীন জোট ভেঙে পড়ায় নির্বাচন এগিয়ে আনা হয়েছে। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি এ খবর জানিয়েছে।
ওলাফ শলৎস
৬৬ বছর বয়সী ওলাফ শলৎস ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মধ্য-বামপন্থী সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এসপিডি) নেতা। সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তিনি হামবুর্গের মেয়র এবং জার্মানির শ্রম ও অর্থমন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন। চ্যান্সেলর হওয়ার পর থেকেই তাকে বেশ কয়েকটি অপ্রত্যাশিত সংকট মোকাবিলা করতে হয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর তিনি জার্মান সেনাবাহিনী আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেন। ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে পরিচিত তার সরকার। তবে তার সরকার জ্বালানি সংকট প্রতিরোধ করেছে এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলার চেষ্টা করেছে। তবে তার তিন-দলীয় জোট সরকার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে কুখ্যাত হয়ে ওঠে এবং গত নভেম্বর মাসে অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করা নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে ভেঙে পড়ে।
ফ্রিডরিখ মের্জ
৬৯ বছর বয়সী ফ্রিডরিখ মের্জ জার্মানির প্রধান বিরোধী দলের নেতা এবং নির্বাচনী প্রচারে এগিয়ে আছেন। তার মধ্য-ডানপন্থী সিডিইউ-সিএসইউ ইউনিয়ন ব্লক নির্বাচনের জনমত জরিপে এগিয়ে রয়েছে। দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাঙ্গেলা মেরকেল চ্যান্সেলর পদ ছাড়ার পর ২০২১ সালে তিনি ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ)-এর নেতা হন। মের্জ তার দলকে আরও রক্ষণশীল পথে নিয়ে গেছেন। নির্বাচনী প্রচারে তিনি অবৈধ অভিবাসন কমানোকে প্রধান ইস্যু করেছেন। তবে তার সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা নেই। ১৯৮৯ সালে তিনি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য হন এবং পাঁচ বছর পর জার্মানির সংসদ সদস্য হন। ২০০৯ সালে তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে বিরতি নেন এবং আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন এবং ব্ল্যাকরক জার্মান শাখার সুপারভাইজরি বোর্ডের প্রধান ছিলেন তিনি।
রবার্ট হাবেক
৫৫ বছর বয়সী রবার্ট হাবেক পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টির প্রার্থী। তিনি বর্তমানে জার্মানির ভাইস চ্যান্সেলর এবং অর্থনীতি ও জলবায়ুমন্ত্রী, যার অধীনে জ্বালানি বিষয়ক দায়িত্ব রয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনি গ্রিন পার্টির সহ-নেতা ছিলেন এবং এই সময়ে দলের জনপ্রিয়তা বেড়েছিল। ২০২১ সালের নির্বাচনে তিনি নিজে চ্যান্সেলর পদে না দাঁড়িয়ে বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্নালেনা বেয়ারবককে মনোনয়ন দেন। মন্ত্রী হিসেবে তার কাজ মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে, বিশেষ করে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব হিটিং সিস্টেম চালু করার পরিকল্পনা তার দলের মধ্যে বিভেদ তৈরি করেছে।
অ্যালিস ওয়েইডেল
৪৬ বছর বয়সী অ্যালিস ওয়েইডেল কট্টর-ডানপন্থী, অভিবাসনবিরোধী ‘অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি’ (এএফডি) দলের প্রথম চ্যান্সেলর প্রার্থী। অর্থনীতিবিদ হিসেবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ওয়েইডেল ২০১৩ সালে দলে যোগ দেন। ২০১৭ সালে দলটি প্রথমবারের মতো জার্মানির সংসদে আসন জেতে, তখন থেকে তিনি সংসদীয় দলের সহ-নেতা। ২০২২ সালে তিনি টিনো ক্রুপালার সঙ্গে দলের সহ-নেতা নির্বাচিত হন। ডিসেম্বর মাসে তাকে এএফডি’র চ্যান্সেলর প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়। তবে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো এএফডি’র সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, তাই তার চ্যান্সেলর হওয়ার সম্ভাবনা কম।