মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধে দ্রুত যুদ্ধবিরতির জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এই আহ্বান এমন সময় জানান যেদিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। ক্রেমলিন সূত্রে জানা গেছে, চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এ বৈঠকে ইউক্রেন সংকট সমাধানের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, রাশিয়াকে এগিয়ে আসতে হবে। খুব বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে, প্রতি সপ্তাহে হাজার হাজার মানুষ এই ভয়াবহ ও অর্থহীন যুদ্ধে প্রাণ হারাচ্ছে।
ট্রাম্পের ইউক্রেন বিষয়ক দূত কেইথ কেলগ ইউক্রেনকে ভাগ করার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ব্রিটিশ ও ফরাসি সেনারা ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলে একটি ‘নিরাপত্তা বলয়’ গঠন করতে পারে, যেখানে রাশিয়ার সেনারা পূর্বাঞ্চলে অবস্থান করবে। এ প্রস্তাবকে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বার্লিনের সঙ্গে তুলনা করেন। তবে পরে এক্স (টুইটার)-এ কেলগ লিখেছেন, আমি ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুদ্ধবিরতি-পরবর্তী সহায়ক বাহিনীর কথা বলেছি, দেশটিকে ভাগ করার কথা বলিনি।
শুক্রবারই ইউক্রেনকে ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলো। তবে ইউরোপের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা বলেছেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
পুতিন-উইটকফ বৈঠকের আগে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছিলেন, এ বৈঠক থেকে কোনও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত আশা করা যাবে না। সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া চলমান।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার অভিযোগ তুলেছেন। শুক্রবার নিজ শহর ক্রিভি রিহে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন। ওই হামলায় ১৯ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৯ জন শিশু। জেলেনস্কি আরও দাবি করেছেন, কয়েক শত চীনা নাগরিক রাশিয়ার সেনাবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করছে।
জেলেনস্কি সামরিক সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমরা ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করেছি— ইউক্রেন শুধু সাহায্য চাইছে না, আমরা বাড়তি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনতেও প্রস্তুত।
গত ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরবে রাশিয়া ও মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক হয়। সম্প্রতি উভয় পক্ষ কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বহালের কথাও আলোচনা করেছে। তবে রাশিয়ার লন্ডনস্থ দূত আন্দ্রেই কেলিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের মিত্র নয়। আমাদের মধ্যে অনেক মতপার্থক্য আছে।
এদিকে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি বন্দি বিনিময় সম্পন্ন হয়েছে। রাশিয়ায় ইউক্রেনের একটি দাতব্য সংস্থায় ৫১ ডলার দানের অভিযোগে ১২ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত রুশ-মার্কিন নাগরিক জেনিয়া কারেলিনাকে মুক্তি দিয়ে জার্মান-রুশ নাগরিক আর্থার পেট্রভের বিনিময় করা হয়েছে।