রাশিয়ার টেলিভিশন উপস্থাপক ও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র ভ্লাদিমির সলোভিয়ভ সম্প্রতি একটি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে দাবি করেছেন, রাশিয়ার বর্তমান পারমাণবিক নীতি অনুযায়ী পারমাণবিক যুদ্ধ শুরুর ভিত্তি ইতোমধ্যেই তৈরি হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চলমান পরিস্থিতিতে এই বক্তব্যটি নতুন করে পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা উসকে দিয়েছে। মার্কিন সাময়িকী নিউজউইক এ খবর জানিয়েছে।
আগস্ট মাসে ইউক্রেন রুশ ভূখণ্ডের কুরস্কে অঞ্চলে আক্রমণ চালায়, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ভূমি দখল বলে চিহ্নিত হয়। এই আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় মস্কো ইউক্রেনকে দায়ী করে এবং অভিযোগ তোলে যে ইউক্রেন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ড্রোন হামলার চেষ্টা করেছিল। এ ঘটনার পর মস্কো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দেয়, যা আরও উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়।
রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক বলে জানা গেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিএএনডব্লিউ (ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবোলিশ নিউক্লিয়ার ওয়েপন্স)-এর তথ্য অনুযায়ী, মস্কো বারবার পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কেড়েছে।
সলোভিয়ভ তার টেলিভিশন অনুষ্ঠানে বলেন, রাশিয়ার পারমাণবিক নীতি অনুযায়ী, পারমাণবিক হামলা প্রতিহত করতে বা দেশের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের নীতিতে স্পষ্ট বলা আছে, রাশিয়ার ওপর পারমাণবিক হামলা হলে বা অস্তিত্বের হুমকি তৈরি হলে আমরা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারি। ইউক্রেনের আক্রমণ ও আমাদের নজরদারি স্থাপনা ধ্বংস করার প্রচেষ্টা সেই ভিত্তি দিয়েছে।
তিনি আরও যোগ করেন, আপনারা বলছেন সব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে, কিন্তু নাৎসি সেনাবাহিনী কুরস্ক অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। এটি আমাদের পরিকল্পনার অংশ নয়। আমাদের নীতি স্পষ্ট এবং আমরা এর ভিত্তিতে কাজ করব, যার মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত।
রাশিয়ার দাবি অনুযায়ী, কিয়েভে ‘নব্য নাৎসি শাসন’ রয়েছে, যা ইউক্রেন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে এই অভিযোগের ভিত্তিতেই রাশিয়া তাদের আগ্রাসনকে ন্যায্যতা দিতে চেয়েছে।
রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ সম্প্রতি জানিয়েছেন, পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া নিজের পারমাণবিক নীতি পরিবর্তন করতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের নীতি পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে এবং এটি পশ্চিমা প্রতিপক্ষদের আচরণের সঙ্গে সম্পর্কিত।’ তবে কবে এই পরিবর্তন কার্যকর হবে, সে বিষয়ে তিনি কোনও সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দেননি।
এদিকে, রাশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী দিমিত্রি মেদভেদেভ শনিবার একটি টেলিগ্রাম পোস্টে পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ার হুমকি দেন। তিনি বলেন, পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া একটি জটিল সিদ্ধান্ত, যার প্রভাব অপরিবর্তনীয় হতে পারে।
মেদভেদেভ আরও বলেন, রাশিয়া ধৈর্য ধরে এসেছে, কিন্তু এটি দীর্ঘদিন ধরে চলতে পারে না। এক পর্যায়ে পশ্চিমা বিশ্লেষকদের আশঙ্কা সঠিক প্রমাণিত হতে পারে—রাশিয়া হয়তো পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া না দিলেও নতুন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
মেদভেদেভের এই বক্তব্যের পর মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর তাকে গুরুত্বহীন বলে অভিহিত করেছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা মেদভেদেভের বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নেই না। এটি কেবল ক্রেমলিনের প্রচলিত ধোঁকাবাজি।
এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ ও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।