নেদারল্যান্ডসের এক দম্পতি জ্যান ও এলস। বিয়ের পর ৫০ বছর সুখে-দুঃখে একসঙ্গে থেকেছেন তারা। তাই পরপারে একসঙ্গেই পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নেন তারা। কারণ ৭০ বছর বয়সী জ্যান ও ৭২ বছর বয়সী এলস-দুজনেই ছিলেন গুরুতর অসুস্থ। জুনের শুরুতে স্বেচ্ছায় একইসঙ্গে মৃত্যুকে বরণ করে নেন তারা। শনিবার (২৯ জুন) এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
নেদারল্যান্ডসে স্বেচ্ছামৃত্যু অবৈধ নয়। একে বলে ডিও-ইথানেশিয়া। অর্থাৎ কষ্ট সীমিত করার জন্য রোগী নিজের জীবন শেষ করে চিকিৎসকের ওষুধের মাধ্যমে। যদিও এটি বিরল। তারপরও নেদারল্যান্ডসের বেশ কিছু দম্পতি প্রতি বছর স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে বেছে নিচ্ছেন।
মৃত্যুর তিনদিন আগে, নেদারল্যান্ডসের উত্তরাঞ্চলীয় ফ্রিজল্যান্ডের মেরিনায় নিজেদের বসবাসের জন্য ব্যবহৃত গাড়িতে বসে বিবিসির লিন্ডা প্রেসলির সঙ্গে কথা বলেন জ্যান ও এলস।
তারা বলেন, পাঁচ দশক ধরে একসঙ্গে ছিলেন তারা। তবে তাদের বেশিরভাগ সময় কেটেছে নৌকায় বা মোটরহোমে। তাদের মতে, ইট-পাথরের বাড়িতে থাকতে তাদের মন সাড়া দিতো না।
যেহেতু নৌকায় থাকতেন তাই নৌকা দিয়ে পরিবহণের ব্যবসায়ও নেমেছিলেন জ্যান। কিন্তু ভারী কাজ করতে করতে জ্যানের একটা সময় পিঠের ব্যথার সৃষ্টি হয়। ২০০৩ সালে এই ব্যথার জন্য একটি অস্ত্রোপচারও করেছিলেন তিনি। কিন্তু এতে কাজ হয়নি। তাকে প্রতিদিনই প্রচুর পরিমাণে ওষুধ খেতে হতো। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন তিনি। তিনি কোনও কাজ করতে পারতেন না। শিক্ষকতার কাজ করতেন এলস। কিন্তু এরমধ্যেই এলসের ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রমের সমস্যা দেখা দেয়।
তারা জানিয়েছেন, তাদের দেখা হয়েছিল কিন্ডারগার্টেনে। তরুণ বয়সে নেদারল্যান্ডসের জাতীয় যুব দলের হয়ে হকি খেলেন জ্যান। কোচও হয়েছিলেন। আর এলস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। কিন্তু পানি ও নৌকার প্রতি ভালোবাসা থেকেই তারা বিয়ের পর থেকে হাউজবোটে বসবাস শুরু করেন।
তাদের একমাত্র ছেলের জন্মের সময় কিছুদিন ছিলেন ইট-পাথরের বাড়িতে। কিন্তু সে জীবন ভালো লাগেনি। ছেলেকে বোডিং স্কুলেও দিয়ে তারা আবারো চলে যান হাউসবোটে। ২০০৩ সালে পণ্য পরিবহণ ব্যবসায় তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে, পরবর্তীতে তারা থাকতে শুরু করেন ক্যারাভ্যান বা গাড়ির বাড়িতে।
২০০৩ সালের পর থেকেই নেদারল্যান্ডসের মৃত্যুর অধিকার সংস্থায় যোগ দিয়েছিলেন তারা। দুজনেই অসুস্থ হওয়ায় বেঁচে থাকার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন জ্যান ও এলস। গত ৩ জুন দুইজন চিকিৎসকের সহায়তা নিয়ে একসঙ্গে মৃত্যুবরণ করেন তারা।