X
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
১৬ বৈশাখ ১৪৩২

ফিলিস্তিনকে ইউরোপীয় সমর্থন: প্রতীকী না গেম চেঞ্জার?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৩ মে ২০২৪, ২১:৩৮আপডেট : ২৩ মে ২০২৪, ২১:৩৮

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অধীনে ইসরায়েলের নীতি নিয়ে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক ক্ষোভের মুখে যুগান্তকারী একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্পেন, নরওয়ে এবং আয়ারল্যান্ড। তারা ঘোষণা দিয়েছে, আগামী ২৮ মে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে তাদের দেশ স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। এই পদক্ষেপটি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে ইউরোপীয় মনোভাবের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে খুব বড় ভূমিকা রাখবে না। সিদ্ধান্তটি গাজায় যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলের ওপর ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চাপকে তুলে ধরছে। যা শেষ পর্যন্ত দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের নীতি বাস্তবায়নের উদ্যোগে গতি আনতে পারে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক বিশ্লেষণে এসব কথা উঠে এসেছে।

তিন দেশের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা মোটাদাগে প্রতীকী। তবে ঐতিহাসিকভাবে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন থেকে ইউরোপীয়দের পিছু হটে আসার ইঙ্গিত। এই পরিবর্তন ইঙ্গিত দিচ্ছে নেতানিয়াহুর সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত থাকবে। এর ফলে কূটনৈতিক সম্পর্কে উত্থান-পতন হতে পারে।

ইউরোপীয় ঐক্য: দূরবর্তী সম্ভাবনা

সাম্প্রতিক স্বীকৃতির ঘোষণার পরও ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ এমন পদক্ষেপ নেবে কি-না তা অস্পষ্ট। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইঙ্গিত দিয়েছেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া তাদের জন্য ‘নিষিদ্ধ নয়’। বুধবার ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন উল্লেখ করেছেন, শান্তি প্রক্রিয়ার শুরুতেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত না, আলোচনা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত। 

এ বক্তব্যগুলো আগের অবস্থান থেকে কিছুটা ভিন্ন। কিন্তু তা প্রকৃত স্বীকৃতির ধারে কাছেও নাই। সম্মিলিত ইউরোপীয় পদক্ষেপ ছাড়া এমন স্বীকৃতির প্রভাব হবে খুব সীমিত। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টেফান সেজার্নে জোর দিয়ে বলেছেন, এমন সিদ্ধান্তটি অবশ্যই কার্যকর হতে হবে। যা রাজনৈতিক পর্যায়ে একটি সমাধানমূলক পদক্ষেপকে এগিয়ে নেবে। ফ্রান্স মনে করে, এমন সিদ্ধান্তের ফলে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সত্যিকার প্রভাব ফেলার মতো পরিস্থিতি এখনও আসেনি।

ইসরায়েলের প্রতি জার্মানির সমর্থন গভীরভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হলোকাস্টের প্রায়শ্চিত্তে নিহিত। দেশটিও ফ্রান্সের মতো সতর্কতামূলক অবস্থান নিয়েছে।

স্পেন, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ডের সিদ্ধান্ত স্পষ্ট করেছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বাস্তব অস্তিত্ব গড়ে ওঠার আগ পর্যন্ত এই ইস্যুতে ইউরোপীয় ঐক্য প্রায় অসম্ভব। 

ট্রান্সআটলান্টিক বিভক্তি ও ইউরোপীয় প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল বলে আসছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে হতে হবে। এই অবস্থানটি একটি বৃহত্তর ট্রান্সআটলান্টিক বিভক্তিকে তুলে ধরছে। যে বিভক্তিতে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনে অনড় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের ক্রমবর্ধমান সমালোচনা করছে ইউরোপীয় দেশগুলো।

যুক্তরাষ্ট্রে দায়িত্ব পালন করা সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ইতামার রাবিনোভিচ বলেছেন, নেতানিয়াহু নিজের ব্যক্তিগত কারণে যুদ্ধের পর গাজা শাসনের ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে অস্বীকার করছেন।

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া ইউরোপীয় নেতারা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান নীতিকে জিইয়ে রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা তুলে ধরেছেন। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজ বলেছেন, জোরপূর্বক দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান নীতিকে ধ্বংস করা আমরা মেনে নেব না। ফিলিস্তিনিদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রতি নৈতিক সমর্থনের উদ্দেশ্য থেকে এমন মন্তব্য করা হচ্ছে।

ক্ষয়িষ্ণু প্রভাব ও ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নতা

অবশ্য ১৯৯০-এর দশকের প্রথম দিকে অসলো চুক্তির পর থেকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাতের ওপর ইউরোপের প্রভাব প্রান্তিক হয়ে পড়ে। ইসরায়েলকে প্রকৃত অর্থে চাপ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। কিন্তু সম্প্রতি মার্কিন চাপও অগ্রাহ্য করেছেন নেতানিয়াহু। 

রাবিনোভিচ জোর দিয়ে বলছেন, ইউরোপীয়দের বাস্তবে কোনও প্রভাব নেই। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি সম্পূর্ণরূপে প্রতীকী এবং এতে কিছুর পরিবর্তন হয় না। তারা যদি যুদ্ধ শেষ করার জন্য গাজায় ৩০ হাজার ইউরোপীয় সেনা পাঠায়, তাহলে ভিন্ন কথা। তখন পরিস্থিতি ভিন্ন হবে। কিন্তু আমরা এটাও জানি যে, তাদের পাঠানো সেনাদের মধ্যে মাত্র ১০ জন নিহত হলেও বাহিনীকে অবিলম্বে ফেরত নিয়ে যাবে তারা।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটর করিম খানের নেতানিয়াহু ও ইসরায়েলি ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার অনুরোধের পরপরই তিন ইউরোপীয় দেশের স্বীকৃতির ঘোষণা আসলো। এই পদক্ষেপটি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিভক্তিকে আরও সামনে এনেছে। ওয়াশিংটন আইসিসির পদক্ষেপকে ‘লজ্জাজনক’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। আর ফ্রান্স আইসিসির স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

এগুনোর পথ

নেতানিয়াহু ক্রমশ আন্তর্জাতিক নিন্দা ও বিচ্ছিন্নতার মুখে পড়ছেন। এই চাপের ফলে ইসরায়েলের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনবে কি-না, তা নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়েছে। গাজায় যুদ্ধ ও সংঘাতের জটিল চরিত্র ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলোকে সামনে নিয়ে আসছে। 

সাবেক ইসরায়েলি কূটনীতিক বলেছেন, ৭ অক্টোবরের হামলার পূর্বে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের বিষয়টি সুপ্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এখন তা পশ্চিমা রাজধানীগুলো ছাড়িয়ে বিভিন্ন স্থানে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে।

স্পেন, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ডের স্বীকৃতি একটি বৈশ্বিক অনুভূতিকে প্রকাশ করছে, যাতে বলা হচ্ছে, ‘যথেষ্ট হয়েছে, আর না’। এছাড়া দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে পুনরুজ্জীবিত করতে এটি ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এই লক্ষ্য অর্জন করতে নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন, যুদ্ধের অবসান ও হামাসের প্রভাবমুক্ত গাজার শাসক গোষ্ঠী গড়ে তুলতে হবে। 

শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনকে ইউরোপীয় স্বীকৃতি প্রতীকী পরিবর্তনকে তুলে ধরলেও বাস্তবে এর প্রভাব সীমিত। প্রকৃত পরিবর্তনের জন্য একটি সমন্বিত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা এবং বর্তমান রাজনৈতিক দৃশ্যপটে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন প্রয়োজন।

 

/এএ/
সম্পর্কিত
‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটকদের অধিকাংশই ভারতীয় বাংলাভাষী মুসলিম: বিবিসি বাংলা
ইউরোপ থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ইস্যুতে যা বললেন এস্তোনিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী
কাশ্মীরে হামলার জবাব দিতে সেনাবাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন মোদি: এনডিটিভি
সর্বশেষ খবর
পরিবেশ দূষণের দায়ে জরিমানা, পলিথিন জব্দ
পরিবেশ দূষণের দায়ে জরিমানা, পলিথিন জব্দ
নোয়াখালীতে লক্ষ্মীপুরের যুবলীগ নেতাকে পুলিশে দিলো ছাত্র-জনতা
নোয়াখালীতে লক্ষ্মীপুরের যুবলীগ নেতাকে পুলিশে দিলো ছাত্র-জনতা
বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তার হবু স্ত্রীকে ধর্ষণ ছাত্রদল নেতার
বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তার হবু স্ত্রীকে ধর্ষণ ছাত্রদল নেতার
শ্যালক খুনের মামলায় দুলাভাইয়ের যাবজ্জীবন
শ্যালক খুনের মামলায় দুলাভাইয়ের যাবজ্জীবন
সর্বাধিক পঠিত
দ্বিতীয় বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি: প্রধান উপদেষ্টা
দ্বিতীয় বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি: প্রধান উপদেষ্টা
৪ হাজার ২৬১ কোটি টাকার লাইনে চলে একটি ট্রেন
৪ হাজার ২৬১ কোটি টাকার লাইনে চলে একটি ট্রেন
চাচাতো বোন আলিয়ার সঙ্গে অভিনয় করতে প্রস্তুত ইমরান!  
চাচাতো বোন আলিয়ার সঙ্গে অভিনয় করতে প্রস্তুত ইমরান!  
শিক্ষার্থীদের সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ বন্ধের নির্দেশ
শিক্ষার্থীদের সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ বন্ধের নির্দেশ
রুদ্ধদ্বার শুনানিতে জামিন পাননি খালেদা জিয়ার ভাগনে সাবেক এমপি তুহিন 
রুদ্ধদ্বার শুনানিতে জামিন পাননি খালেদা জিয়ার ভাগনে সাবেক এমপি তুহিন