ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পহেলগাম রিসোর্টের কাছে সন্ত্রাসী হামলার এক সপ্তাহ পর ধীরে ধীরে ফিরতে শুরু করেছে পর্যটকরা। তবে শহরজুড়ে এখনও রয়ে গেছে নিস্তব্ধতা আর অনিশ্চয়তার ছাপ।
গত মঙ্গলবার পহেলগাম থেকে তিন মাইল দূরে বাইসারান মেডোতে সন্ত্রাসীরা গুলি চালালে নিহত হন ২৬ জন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক। কাশ্মীরের ‘সুইজারল্যান্ড’ খ্যাত এই এলাকায় এত বড় হামলা গত কয়েক বছরে দেখা যায়নি।
হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয়েছে। উভয় দেশই কাশ্মীরের পুরো দাবিদার, তবে শাসন করে আলাদা অংশে। এখন দিল্লির পক্ষ থেকে সামরিক অভিযান হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
কাশ্মীর সরকার উপত্যকার অর্ধেকের বেশি পর্যটন স্পট বন্ধ রেখেছে। চলছে নিরাপত্তা পর্যালোচনা ও অনুসন্ধান অভিযান। ১৯৮৯ সাল থেকে কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলা চললেও পর্যটকদের এভাবে টার্গেট করা বিরল।
পহেলগামের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি পর্যটন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, এই হামলা দীর্ঘমেয়াদে তাদের জীবিকাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
শহরের বাইরে একটি সেলফি পয়েন্টে দাঁড়িয়ে মুম্বাইয়ের পর্যটক অক্ষয় সোলাঙ্কি বলেন, হামলার দিন আমাদের গ্রুপে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু ফ্লাইটের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা ফেরার সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।
অন্য পর্যটকরা জানান, স্থানীয় বাসিন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনীর আশ্বাসে তারা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। শ্রীনগর থেকে পর্যটকদের নিয়ে আসা এক ড্রাইভার বলেছেন, তিনি তাদের অনুরোধ করছেন যেন তারা কাশ্মীর থেকে দূরে সরে না যান।
তিন দিন দোকান বন্ধ রাখার পর শাল বিক্রেতা রফি আহমেদ মাত্র কয়েকটি শাল বিক্রি করতে পেরেছেন। তিনি ভবিষ্যতের জন্য শঙ্কিত।
হামলার কয়েক দিন পরই পহেলগামে এসেছিলেন বলিউড অভিনেতা অতুল কুলকার্নি। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা যদি বার্তা দিতে চায় ‘এখানে আসো না’, আমাদের উত্তর হওয়া উচিত ‘আরও বেশি সংখ্যায় আসব’।”
তবে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের মতে, পহেলগামে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে কয়েক বছর লাগতে পারে।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ অঞ্চলটিতে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালিয়ে শতাধিক মানুষকে আটক করেছে। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তেও ছোটোখাটো গোলাবিনিময়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে
২০১৯ সালে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করেছিলেন, অঞ্চলটিতে শান্তি ফিরেছে। ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে তিনি কাশ্মীরের ‘উন্নয়নের নতুন উচ্চতা’র কথা বলেছিলেন। কিন্তু গত সপ্তাহের হামলা আবারও প্রমাণ করেছে, অশান্ত এই উপত্যকায় স্থায়ী শান্তি এখনও অধরাই।
পহেলগামের রাজনীতিবিদ রফি আহমেদ মীর বলেছেন, এই হামলা আমাদের জন্য কলঙ্ক। এটি মুছতে দীর্ঘ সময় লাগবে।
মুম্বাইয়ের ট্যুর অপারেটর অভিষেক সানসারে জানান, পুনে, মুম্বাই ও বেঙ্গালুরু থেকে কাশ্মীরে যাওয়ার ৮০-৯০ শতাংশ বুকিং বাতিল করা হয়েছে।
পর্যটকদের ওপর হামলার প্রভাব পড়তে পারে কাশ্মীরের অন্যান্য খাতেও। বিশ্বের সর্বোচ্চ সিঙ্গেল-আর্ক রেল ব্রিজের উদ্বোধন এই মাসে হওয়ার কথা ছিল, যা এখন অনিশ্চিত।
দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ফলের কোল্ড স্টোরেজের মালিক উবাইর শাহ বলেছেন, নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে বিনিয়োগকারীরা এখন দ্বিতীয়বার ভাববেন।
জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ শোকাহত পরিবারদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, আমার আমন্ত্রণে তারা কাশ্মীরে এসেছিলেন, কিন্তু তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে দিতে পারিনি।
তিনি বলেন, যারা প্রথমবারের মতো কাশ্মীরে এসেছিলেন, তাদের বলতে হয়েছে তারা সারাজীবনের জন্য এই ছুটির মূল্য দিচ্ছেন।
এই হামলা কাশ্মীরকে ‘শূন্য করে দিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সূত্র: বিবিসি